আবারও সেই গোলের ‘গাড়ি’ নিয়ে প্রস্তুত বার্সেলোনা

হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে বদলে যাওয়া বার্সেলোনা গোল করাকে এখন ছেলের হাতে হাতের মোয়া বানিয়ে ছেড়েছে। ব্যাপারটা এখন যেন, এলাম দেখলাম আর গোল করলাম।

বার্সার আক্রমণভাগের তিন নায়ক ইয়ামাল, লেভানডফস্কি ও রাফিনিয়াএক্স

গোল ফুটবলে চরম আনন্দের এক মুহূর্ত। দুই দলের ২২ ফুটবলারের লক্ষ্য থাকে এটাই—প্রতিপক্ষের জালে কোনোভাবে বলটা জড়ানো। সেই গোল ঠেকাতে কৌশলেরও কমতি নেই। ডিফেন্ডাররা এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা করেন না, যেন গোল দিতে না পারলে ক্ষতি নেই কিন্তু গোল হজম করা যাবে না!

তবে গোল ঠেকানোর এই চেষ্টা সব সময় সফল হয় না। শেষ পর্যন্ত ফুটবল মানেই যে গোল। হোক তা কম বা বেশি, কিন্তু গোল করেই তো জিততে হয়। আর গোলের খেলায় সাম্প্রতিক কালে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকারী দল বার্সেলোনা।

হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে বদলে যাওয়া বার্সেলোনা গোল করাকে এখন ছেলের হাতে হাতের মোয়া বানিয়ে ছেড়েছে। ব্যাপারটা এমন যে এলাম দেখলাম আর গোল করলাম! সর্বশেষ মৌসুমে তো বটেই সাম্প্রতিক প্রাক্‌–মৌসুমেও গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছে কাতালুনিয়ার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

গত মৌসুম দিয়েই শুরু করা যাক। ২০২৪–২৫ মৌসুমে ফ্লিক যখন বার্সার দায়িত্ব নেন, তখন অনেকেরই সন্দেহ ছিল, জার্মান কোচের অধীনে বার্সেলোনা কতটা সফল হবে। কেউ কেউ আগেভাগেই ফ্লিকের বিদায়ী এপিটাফও লিখে রেখেছিলেন। কিন্তু জার্মান এই কোচ ডাগআউটে এসেই আমূল বদলে দেন বার্সাকে। পুরো দলটিকেই তিনি পরিণত করেন আশ্চর্য এক গোল মেশিনে।

আরও পড়ুন

দলের ফরোয়ার্ড লাইনের প্রত্যেক ফুটবলার ফ্লিক হাতে ধরে কার্যকর স্কোরারে পরিণত করেন। এই চিত্র যে শুধু লা লিগাতে দেখা গেছে তা নয়, বরং প্রতিটি প্রতিযোগিতায় গোল করায় এককভাবে নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে বার্সা। গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬০ ম্যাচ খেলে বার্সা গোল করেছে ১৭৪টি। ম্যাচ প্রতি গোল প্রায় তিনটি (২.৯) করে। গত মৌসুমে ৩৮ ম্যাচের লা লিগায় বার্সেলোনা গোল করেছে ১০২টি, ম্যাচে বার্সার গোলগড় ২.৬৮ করে। যা ইউরোপিয়ান শীর্ষ ৫ লিগে সর্বোচ্চ। পাশাপাশি লিগে গত আট মৌসুমের মধ্যে কোনো দলের সর্বোচ্চ গোলের পরিসংখ্যানও এটি।

লিগে বার্সেলোনা সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় পেয়েছে গত বছরের ৩১ আগস্ট রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে। ৭–০ গোলে জেতে বার্সা। এরপর ৭ জানুয়ারি ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বার্সা জিতেছিল ৭–১ গোলে। আর সব মিলিয়ে ৪ বা তার বেশি গোল করে বার্সা জিতেছে ১৩ ম্যাচ। মৌসুমজুড়ে বার্সার গোলের উৎসব কেমন ছিল, সেটা বোঝা যাবে আরেকটি পরিসংখ্যানে। লিগে দ্বিতীয় রিয়াল মাদ্রিদের গোল সংখ্যা ৭৮। অর্থাৎ বার্সার সমান ম্যাচ খেলে তাদের চেয়ে ২৪ গোল কম করেছে রিয়াল।

চ্যাম্পিয়নস লিগেও দেখা গেছে একই দৃশ্যপট। এই প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের কাছে হেরে বিদায় নিলেও গোল করায় বার্সার ধারেকাছেও ছিল না অন্যরা। প্রতিযোগিতায় ১৪ ম্যাচ খেলে বার্সা গোল করে ৪৩টি, ম্যাচপ্রতি গোল তিনটির বেশি। ৩৮ গোল করে এ তালিকার দুই নম্বরে চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। বার্সার চেয়ে ৫ গোল কম করা পিএসজি ৩ ম্যাচ বেশি খেলেছে।

বার্সার গোল করার এই ধারা দেখা গেছে কোপা দেল রে এবং সুপার কোপাতেও। কোপা দেল রেতে ৬ ম্যাচ খেলে বার্সার গোল ২২টি। ম্যাচপ্রতি গোল ৩.৬৬। আর স্প্যানিশ সুপার কাপে দুই ম্যাচে বার্সার গোল ৭টি, এখানেও ম্যাচ প্রতি গোল সাড়ে তিনটি করে। গোলের অবিশ্বাস্য এক পরিসংখ্যানই বটে।

আরও পড়ুন

গত মৌসুমে অ্যাটাকিং থার্ডে বার্সা ছিল অনেকটা শিকারি নেকড়ের মতো। এমনকি তাদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদও। ২০২৪–২৫ মৌসুমে এল ক্লাসিকোয় রিয়াল–বার্সা মুখোমুখি হয়েছিল চার ম্যাচে। এই চার ম্যাচে রিয়ালের জালে বার্সা বল জড়িয়েছে ১৬ বার। ম্যাচপ্রতি গোল সংখ্যা ৪টি! খেলাধুলার তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ‘অপ্টা’ জানিয়েছে, এক মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়ালের জালে কোনো দলের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এটাই। বলা বাহুল্য, এই চার ম্যাচের প্রতিটিতে জিতেছে বার্সাই।

বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক
এএফপি

বার্সার এই গোলবন্যা স্বাভাবিকভাবেই কোনো একক খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করেনি। বার্সার ফরোয়ার্ড লাইনের তিন খেলোয়াড়ই গোল করায় অবদান রেখেছেন। যেখানে সবার ওপরে আছেন স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি। যিনি ৫২ ম্যাচে করেছেন ৪২ গোল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাফিনিয়া করেছেন ৫৭ ম্যাচে ৩৪ গোল। আর ইয়ামালের গোল সংখ্যা ৫৫ ম্যাচে ১৮টি। অর্থাৎ বার্সার ১৭৪ গোলের ৯৪টিই এসেছে এই তিনজনের কাছ থেকে।

আরও পড়ুন

এ তো গেল গত মৌসুমে বার্সার গোল নিয়ে গালগল্প। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে বার্সা আবারও সেই একই গোলের গাড়ি নিয়ে হাজির হতে চলেছে। প্রাক্–মৌসুম প্রস্তুতি ম্যাচগুলো কিন্তু তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। প্রাক্–মৌসুমে বার্সা ম্যাচ খেলেছে চারটি। প্রতিপক্ষ তেমন শক্তিশালী না হলেও বেশি বেশি গোলের এই ধারা বার্সার গত মৌসুমকেই মনে করিয়ে দেয়।

প্রাক্–মৌসুমে এই চার ম্যাচে বার্সা গোল করেছে ২০টি। অর্থাৎ ম্যাচপ্রতি পাঁচটি করে গোল। ভিসেল কোবের বিপক্ষে ৪–১ গোলে জিতে প্রাক্–মৌসুম শুরু করে বার্সা। এফসি সিউলকে ৭–৩ গোলে, দায়েগুকে ৫–০ গোল এবং কোমোকে ৫–০ গোলে হারায় তারা। ফ্লিকের দল এই ধারাবাহিকতা নতুন মৌসুমেও ধরে রাখলে কপাল পুড়তে পারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের।