আর্জেন্টিনা দলের সবার শরীরে ট্যাটু, আলভারেজের নেই কেন

আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হুলিয়ান আলভারেজএএফপি

আতলেতিকো মাদ্রিদের এই দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় কে?

বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমী সম্ভবত একটাই নাম বলবেন—হুলিয়ান আলভারেজ। গত বছরের আগস্টে ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে আতলেতিকোতে যোগ দেওয়ার পর এই বছরখানেকের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেছেন কোচ দিয়েগো সিমিওনের বড় আস্থা। এই মৌসুমে লা লিগা আর চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে করেছেন ৯ গোল। এর মধ্যে ৭টি লা লিগায়। লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পিচিচি ট্রফির দৌড়ে তিনি আপাতত দ্বিতীয় স্থানে।

ফরাসি দৈনিক লে’কিপকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে নিজের ফুটবলযাত্রার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পথচলার গল্প বলেছেন আলভারেজ। ২০২২ সালের জুলাইয়ে এই আর্জেন্টাইন পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ম্যান সিটিতে, সেখান থেকে স্পেনের আতলেতিকো—ইউরোপে মাত্র তিন বছরের এই পথচলায় তিনি আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার।

শৈশবে রিয়াল মাদ্রিদে ট্রায়াল দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনই ইউরোপে পাড়ি জমানোটা তাঁর কাছে সঠিক সময় মনে হয়নি। সাক্ষাৎকারে আলভারেজ বলেছেন, ‘১১ বছর বয়সে আমি বাবার সঙ্গে স্পেনে গিয়েছিলাম। প্রায় ২০ দিন ছিলাম সেখানে। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে অনুশীলন করেছি, পেরালাদায় একটা টুর্নামেন্টও খেলেছি, জিতেছিও। কিন্তু থাকতে হলে পুরো পরিবারকে স্পেনে চলে আসতে হতো। অভিজ্ঞতাটা দারুণ ছিল, তবে তখন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার জন্য খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যেত।’

আরও পড়ুন

আধুনিক ফুটবলে শারীরিক শক্তি এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর মূল স্ট্রাইকারদের মধ্যে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার কাউকে পাওয়া বিরল। ছোটবেলা থেকেই আলভারেজকে তাঁর এই উচ্চতা নিয়ে লড়াই করতে হয়েছে।

আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে ট্যাটু যেন সমার্থক
আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন

স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বললেন, ‘রিভার প্লেটে প্রথম ট্রায়ালের কথা মনে আছে। তারা আমার জন্মসাল আর পজিশন জানতে চাইল। আমি বললাম, ২০০০, নাম্বার ৯। তারা হেসে বলল, নাম্বার ৯? ওই যে দেখো, আমাদের দলের নাম্বার ৯! দেখি, বিশাল এক লোক। কিন্তু আমি মোটেও চিন্তিত ছিলাম না। জানতাম আমার শক্তি কোথায়। আমি নাম্বার ৯ খেলতে পারি, একটু পেছনে, ডানদিকে, বাঁদিকে—যেখানেই হোক মানিয়ে নিতে পারি। আমার জন্য উচ্চতা কোনো সমস্যা ছিল না।’

আরও পড়ুন

আরেকটা জায়গায় আলভারেজ অন্যদের চেয়ে আলাদা। এখনকার ফুটবলার মানেই যেন হাত–পা ট্যাটুতে ভরা, পিঠে রঙিন নকশা। কিন্তু আলভারেজের শরীরে এসবের কিছুই নেই। হাসতে হাসতে বললেন, ‘আর্জেন্টিনা দলের ক্যাম্পে কেউ একজন বলছিল, আমিই নাকি একমাত্র খেলোয়াড় যার শরীরে কোনো ট্যাটু নেই। তবে আমি অন্যদের চেয়ে আলাদা হওয়ার জন্য এটা করেছি, এমন নয়। ছোটবেলায় বাবা বলতেন, ট্যাটু নয়, সিগারেট নয়, মদ নয়। বড় হয়ে সবাই নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমার ট্যাটুর প্রয়োজন মনে হয়নি।’

গারনাচো ও এনজো ফার্নান্দেজের শরীরেও আছে অনেক ট্যাটু
আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন

ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে দুই মৌসুমে ৩৬ গোল করেছিলেন। তবে হলান্ডের ছায়ায় থেকে নিজের আলোটা পুরোটা ছড়াতে পারেননি। নিজেই বললেন, ‘খেলার সময় পেয়েছি যথেষ্ট, তবে সব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নয়। অনেক সময় বদলি হিসেবে নামতে হয়েছে।’

ট্যাটু নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছেন মেসি
এক্স

এই উপলব্ধিই আলভারেজকে স্পেনে নিয়ে এসেছে, ‘কয়েকটা ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু আতলেতিকোকে বেছে নিয়েছি কারণ এখানে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ ছিল, নিজের সেরাটা দেওয়ার সুযোগ ছিল।’

দলবদলের বাজারে আলভারেজের নাম বারবার ঘুরেফিরে আসে। কখনো বার্সেলোনায় লেভানডফস্কির বিকল্প হিসেবে, কখনো পিএসজির সম্ভাব্য স্ট্রাইকার হিসেবে। কিন্তু তাঁর সব মনোযোগ আপাতত আতলেতিকোতেই, ‘সত্যি বলতে, আমি জানি না, কে কী বলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি অনেক কিছু লেখা হয়। বার্সেলোনা নিয়ে অনেক কথা হয়। আতলেতিকোতে সই করার সময়ও পিএসজি নিয়ে গুঞ্জন ছিল। পিএসজি বোর্ড আমার এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেছিল, আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। আপাতত আমি আতলেতিকোতেই মনোযোগী। মৌসুম শেষে দেখা যাবে।’

আরও পড়ুন

সাম্প্রতিক মৌসুমগুলোতে নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি ব্যালন ডি’অরের তালিকায়ও এসেছেন। ২০২৩ সালে তিনি সপ্তম হয়েছিলেন। তবে টানা দুই মৌসুমে ৩০ জনের তালিকায়ও নেই। আলভারেজ এতে বিচলিত নন, ‘বিশ্বের সেরা ৩০ জনের মধ্যে থাকা, এমন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া—এটা অবশ্যই সম্মানের। মানে আপনি সঠিক কাজ করছেন। আমি গর্বিত। তবে দুই বছর তালিকায় না থাকায় চিন্তিত নই। আমি যা ভালোবাসি, তাই করছি। সুখী হতে প্রশংসার দরকার নেই। ফুটবল খেলাই আমার জন্য যথেষ্ট।’