আলোনসো যেভাবে রিয়ালকে ভয়ংকর এক দল বানালেন
সব ম্যাচ এক রকম হয় না। কিছু ম্যাচ শুধু জয়-পরাজয়ের হিসাব দেয় না, একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। সেই ম্যাচের পর মনে হয়, দলের ভেতরে কিছু একটা বদলে গেছে। লা লিগায় এই মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো ছিল তেমনই এক ম্যাচ। রিয়াল মাদ্রিদ সে জয়টা উদ্যাপন করেছিল দারুণভাবে। যদিও সেটা কোনো শিরোপা জেতার ম্যাচ ছিল না। বড় ব্যাপার হলো, এমন জয়েও রিয়ালের মধ্যে আত্মতুষ্টি চলে আসেনি। বরং আরও লড়াই চালিয়ে যেতে উজ্জীবিত করেছে।
এল ক্লাসিকোর পর রিয়াল গতকাল রাতে মাঠে নেমেছিল ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে। এই ম্যাচেও জাবি আলোনসোর দল দেখিয়েছে একই তীব্রতা, শৃঙ্খলা আর জয়ের ক্ষুধা। সব মিলিয়ে এটা সম্ভবত আলোনসোর অধীনে রিয়ালের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। কারণ, এই জয় শুধু ভালো খেলার নয়, দলের মানসিকতা ও কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রতীকও।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচের ১৩টিতে জিতেছে রিয়াল। লিগে ১১ ম্যাচের মধ্যে জয় ১০টিতে, চ্যাম্পিয়নস লিগে তিনের তিনটিতেই। এর মধ্যেই নিজেদের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করে ফেলেছে আলোনসোর রিয়াল।
শুধু কৌশলগত দিক থেকেই নয়, দার্শনিক ও মানসিক দিক থেকেও দলে পরিবর্তন আনতে পেরেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। খেলোয়াড়রা এখন মাঠে আরও স্বতঃস্ফূর্ত, গতিময় এবং আত্মবিশ্বাসী। খেলোয়াড়েরা পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়ায়ও যেন আগের চেয়ে আরও পরিণত। ফলাফল, রিয়াল এখন এমন এক দল, যারা প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখার পাশাপাশি নিজেদের পরিকল্পনাও নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে।
ট্যাকটিক্যালি রিয়াল মাদ্রিদের হাই প্রেসিং কৌশলেও এসেছে উন্নতি। এখন এটা শুধু বেশি দৌড়ানোর ব্যাপার নয়, বরং বুদ্ধি আর পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে দৌড়ানোর বিষয়ও বটে। প্রতিটি পদক্ষেপ অর্থবহ, প্রতিপক্ষ যেন শ্বাস নেওয়ার সুযোগই না পায়।
এই দল এখন বসে থেকে সুযোগের অপেক্ষা করে না। আবার অকারণে ছুটে শক্তি নষ্টও করে না। তারা জানে, কীভাবে কোনো ছাড় না দিয়েই ম্যাচ নিজেদের দিকে টেনে আনা যায়। আলোনসোও বলেছেন, ‘আমরা অনেক গতিময় ফুটবল খেলেছি, বল হারালে সঙ্গে সঙ্গে প্রেস করেছি। দলের জন্য সবার এই ত্যাগ আর ইতিবাচক মানসিকতাই আমাদের শক্তি।’
আলোনসোর অধীনে রিয়াল মাদ্রিদ এখন এত আক্রমণাত্মক খেলে যে প্রতিপক্ষ দল গড়ে মাত্র ১১.৮টি পাস দিতে পারে—এরপরই তারা বলের দখল হারায়। অর্থাৎ মাদ্রিদের প্রেসিং খুব সংগঠিত ও তীব্র। আর যখনই তারা বল কেড়ে নেয়, সঙ্গে সঙ্গেই সেটিকে আক্রমণে পরিণত করে। প্রতিবার বলের দখল নেওয়া মানেই একটি গোলের সম্ভাবনা তৈরি হওয়া।
তবে ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে এই তালিকার এক নম্বরে সেস্ক ফ্যাব্রেগাসের ইতালিয়ান ক্লাব কোমো। তারা মাত্র ৬.৭৬ পাসের মধ্যেই প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল ছিনিয়ে নেয়, অর্থাৎ আরও দ্রুত প্রেস করে। তবু একটা জায়গায় রিয়াল সবার ওপরে—এই মৌসুমে প্রতিপক্ষের ফাইনাল থার্ডে সবচেয়ে বেশি বল ছিনিয়ে নেওয়া দল তারা (৩৭ বার)।
রিয়ালের পর তালিকায় আছে স্ত্রাসবুর্গ (৩৪), ব্রেস্ত (৩৩), ব্রাইটন (৩২) ও বার্সেলোনা (৩১)।