রোনালদো কেন পায়ে কালো নেইলপলিশ লাগান

ছেলের সঙ্গে রোনালদো। তাঁর পায়ে কালো রংয়ের নেইলপলিশছবি: ইনস্টাগ্রাম

বহুবার এমন ছবি পোস্ট করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তাঁকে দেখাদেখি তাঁর সমর্থকেরাও এমন ছবি পোস্ট করা শুরু করেছেন। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে খালি গায়ের অমন ছবি দেখলেই মনে পড়তে পারে, আরে ছবিটি তো রোনালদোর মতো!

পর্তুগিজ কিংবদন্তি আসলে এমন ছবিকে নিজের ব্র্যান্ড বানিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কথায় কথায় আসল কথাটাই এখনো বলা হয়নি। যে ছবির কথা বলা হচ্ছে, সে কেমন ছবি?

ছবিটি এতক্ষণে দেখে ফেলেছেন। এ লেখার ওপরেই আছে সেই ছবি। খালি গায়ে নিজের জিমে দাঁড়িয়ে রোনালদো। দুই হাত শক্ত করে একটু সামনে এনে শরীরের পেশির ভাঁজগুলো দেখাচ্ছেন। পেটের পেশির ভাঁজগুলোও স্পষ্ট। চল্লিশ বছর বয়সেও নিজের অবিশ্বাস্য ফিটনেস বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেওয়ার ‘ট্রেডমার্ক’ ছবি এটি।

কয়েক বছর হলো রোনালদোর এমন ‘ট্রেডমার্ক’ ছবিতে যোগ দিয়েছে তাঁর বড় ছেলে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র। বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সে–ও একইভাবে বাবাকে অনুকরণ করে। ভাবছেন, একটি ছবি কীভাবে গোটা বিশ্ব দেখবে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোনালদোর অনুসারীর সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি।

বাবার সঙ্গে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রকে প্রায়ই এভাবে দেখা যায়
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আল নাসর তারকা ছবিটি গত রোববার ফেসবুক, এক্স ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন। ছবির ক্যাপশনে পর্তুগিজ ভাষায় লেখা, ‘তাল পাই তাল ফিলিও’—যার বাংলা অর্থ, ‘যেমন বাবা তেমন ছেলে’ কিংবা ‘বাপকা বেটা।’

ক্যাপশনটি কিন্তু শুধু কথার কথা নয়। ট্রান্সফার মার্কেটের জন্মতারিখ অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার ১৫ বছর পূর্ণ করা ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র এরই মধ্যে পর্তুগাল অনূর্ধ্ব–১৫ দলে অভিষেক রাঙিয়েছেন গোল করে।

আরও পড়ুন

বাবার মতোই গোল করার ক্ষুধা ও দক্ষতা নিয়ে এসেছে জুনিয়র। শরীর গঠনে ও শরীরের যত্ন নেওয়ায়ও বাবার মতোই পরিশ্রমী। এটুকু পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন, এ আর নতুন কী!

পিতা–পুত্রের এমন ছবি তো হরহামেশাই দেখছে বিশ্ব। যুক্তি সঠিক হলেও নতুন একটি বিষয় আছে। কিংবা এভাবেও বলা যায়, হয়তো আগে থেকেই ছিল, সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে এখন ব্যাপারটা কারও কারও কাছে নতুন লাগতে পারে।

সম্প্রতি পর্তুগাল অনূর্ধ্ব–১৫ দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রের
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

যা–ই হোক, এ লেখা পড়া থামিয়ে ছবিটি আবারও ভালো করে দেখুন। নতুন কিছু কি চোখে পড়ল? রোনালদোর পায়ের নখের ওপর ছোপ ছোপ কালো ওগুলো কী?

নেইলপলিশ!

হ্যাঁ, রোনালদোর দুই পায়ের নখই কালো নেইলপলিশে রাঙানো। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? পায়ে নেইলপলিশ মাখার পেছনেও কি পারফরম্যান্স–সম্পর্কিত কোনো কারণ আছে?

উত্তর হলো, আছে। না থেকে পারেই না। কারণ, লোকটির নাম রোনালদো। শরীর–সম্পর্কিত তাঁর সবকিছুই ফুটবলে আরও ভালো খেলার জন্য—রোনালদোকে বছরের পর বছর দেখতে দেখতে এখন এই বিশ্বাসটুকু পোষণ করা এতটুকু দোষের নয়!

দ্য অ্যাথলেটিক জানিয়েছে, পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ফুটবলার আগেও পায়ে নেইলপলিশ ব্যবহার করেছেন।

পায়ে বুট কিংবা জুতা ছাড়া রোনালদোকে আগেও দেখা গেছে। সওনা (বাষ্পীয় গোসল) নিতে গিয়ে কিংবা কোথাও ছুটি কাটাতে গিয়ে রোনালদোর রং মাখানো পায়ের নখের ছবি আগেও দেখা গেছে। ভীষণ ফ্যাশন সচেতন হলেও পায়ের নখে তাঁর নেইলপলিশ মাখার কারণ একদমই পারফরম্যান্সকেন্দ্রিক। শুনুন তাহলে—

পায়ের নখে অ্যাথলেটদের কালো নেইলপলিশ মাখাটা এখন ট্রেন্ড, যা জনপ্রিয় করেছেন মিক্সড মার্শাল আর্টসের (এমএমএ) লড়াকুরা। এতে পায়ের নখ শক্ত হয়।

আরও পড়ুন

খেলার সময় বিভিন্নভাবে শারীরিক সংর্ঘষের ক্ষেত্রে নখ ভেঙে যাওয়া, ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করে এই নেইলপলিশ। রোনালদো যেহেতু ফুটবলার, পায়ে বুট পরে মাঠে নামেন, দৌড়ানোর সময় প্রতিপক্ষের কড়া ট্যাকলে নখের ক্ষয়ক্ষতি হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু পর্তুগিজ কিংবদন্তি এতটাই সচেতন যে এই ছোট্ট ব্যাপারটুকুও তাঁর চোখ এড়ায়নি।

রোনালদো নিয়মিত পায়ে নেইলপলিশ লাগান
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কারণ আছে আরও। এই নেইলপলিশ ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া থেকেও পায়ের নখকে রক্ষা করে। অ্যাথলেট বিশেষ করে পায়ে বুট বা জুতা পরে নামেন, এমন সব ক্রীড়াবিদদের জন্য ব্যাকটেরিয়া একটা সমস্যার নাম। কারণ, অনুশীলন কিংবা খেলায় সব সময় জুতা কিংবা বুট পরেই থাকতে হয়। তাতে পায়ের ভেতরে ঘেমে আর্দ্রতা তৈরি হয়, যেটা ব্যাকটেরিয়া জাতীয় অণুজীব জন্মানোর জন্য আদর্শ।

ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অব পোডিয়াট্রি (আরসিপিওডি) সংক্ষিপ্ত পরিসরে জরিপ চালিয়ে জানিয়েছে, নেইলপলিশ স্বাস্থ্যবান নখকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যদিও এ বিষয়ে পেশাদাররা সর্বসম্মতিক্রমে একমত হতে পারেননি। তবে এটাও সত্য, হাত–পায়ের নখের যত্ন নেওয়ায় অবহেলা করলে অস্বস্তিকর পরিবেশের জন্ম হতে পারে এবং ক্ষতি হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়।

ড. হেলেন ব্রান্থওয়েট
ছবি: রয়্যাল কলেজ অব পোডিয়াট্রি

রয়্যাল কলেজ অব পোডিয়াট্রির মুখপাত্র ড. হেলেন ব্রান্থওয়েট ব্যাপারটি একটু বুঝিয়ে বলেছেন, ‘পায়ে আড়াই লাখের বেশি ঘামের গ্রন্থি আছে। একজন মানুষের পায়ে গড়পড়তায় (হাফ পাঁইট/ এক পাঁইটে আধা লিটার) প্রতিদিন এক পোয়া ঘাম তৈরি হয়। এমনিতে পায়ের নখে ফাঙ্গাল সংক্রমণগুলো চামড়া থেকে হয়, যেটা আসলে অ্যাথলেটদের পা এবং পরে তা নখেও ছড়িয়ে পড়ে। চামড়ার এই সংক্রমণের চিকিৎসা না করার অর্থ হলো নখে ছত্রাক জন্মানোর ঝুঁকি তৈরি করা।’

আরও পড়ুন

ড. ব্রান্থওয়েট মনে করেন, অনেক নামী ক্রীড়াবিদ স্টেটমেন্ট নেল ভার্নিশ ব্যবহার করছেন এবং কিছু বিশেষ ভার্নিশ ও চিকিৎসা রয়েছে, যা ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধকারী, তবু সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধব্যবস্থা হলো সহজভাবে ‘পায়ের ভালো স্বাস্থ্যবিধি’ বজায় রাখা।