জন্মসনদে ৪০, বিজ্ঞান বলছে রোনালদোর বয়স মাত্র ২৯
পর্তুগালের মাদেইরার ফুনচালে ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। উইকিপিডিয়া থেকে খেলাধুলাকেন্দ্রিক সব ওয়েবসাইটেই রোনালদোর জন্মসাল এটাই। এই হিসাবে কিংবদন্তির বয়স আজ দাঁড়ায় ৪০ বছর ৩ মাস ১৬ দিনে। এই তথ্যে যেমন ভুল নেই, তেমনি ভুল আছেও!
গাণিতিকভাবে তথ্যটি ভুল নয়। তবে শারীরবৃত্তীয় হিসাবে এ তথ্য ভুল। গোটা পৃথিবী রোনালদোর বয়স ৪০ বছর বলে জানলেও বিজ্ঞান জানিয়েছে পর্তুগিজ কিংবদন্তির শারীরিক বয়স (বায়োলজিক্যাল এজ) তাঁর জন্মসনদের বয়সের চেয়ে ১১ বছর কম!
পর্তুগালের সংবাদমাধ্যম রেকর্ড জানিয়েছে, শরীরে পরার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘হুপ’–এর একটি পডকাস্টে বসেছিলেন রোনালদো। এই প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফিটনেস ট্র্যাকার পণ্য তৈরিতে বিশেষায়িত এবং স্বাস্থ্যগত খুঁটিনাটি সব তথ্য বিশ্লেষণ করে থাকে বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে। আল নাসর তারকা রোনালদো এই প্রতিষ্ঠানের দূতও।
এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য রোনালদোর শারীরবৃত্তীয় তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। যেমন তাঁর হৃৎস্পন্দন এবং স্পন্দনের গতির ওঠানামা। এখান থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর পরিশ্রম, বিশ্রাম ও ঘুমের বিভিন্ন তথ্য নির্ণয়ে।
হুপ পডকাস্টে রোনালদো নিজের আসল বয়সের তুলনায় শারীরিক বয়স (বায়োলজিক্যাল এজ) নির্ণয়ে এসব পরীক্ষার ফলটা জানিয়েছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক বয়স ২৮.৯ বছর, যা আসল বয়সের চেয়ে ১১ বছর কম। রোনালদোর ভাষায়, ‘বিশ্বাস হচ্ছে না এটা এত ভালো, ২৮.৯!’ এরপর রোনালদো যে কথাটি বলেছেন সেটা তাঁর ভক্তরা শুনলে নিশ্চয়ই খুশি হবেন, ‘এর অর্থ হলো আমি আরও ১০ বছর ফুটবল খেলব।’
অর্থাৎ ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলার কথা ভাবছেন রোনালদো। সে ক্ষেত্রে এই কিংবদন্তি যে রেকর্ডের পেছনে ছুটছেন, তা অনায়াসেই হয়ে যাওয়ার কথা। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে এক হাজার গোলের মাইলফলক ছুঁতে রোনালদোর চাই আর ৬৬ গোল। আপাতত তাঁর গোলসংখ্যা ৯৩৪।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা জানিয়েছে, রোনালদোর শারীরিক বয়স তাঁর আসল বয়সের চেয়ে ১১ বছর কম—এ তথ্য জানিয়েছে হুপের তৈরি করা ব্রেসলেট। মানুষের ক্ষমতা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা হুপের ডিজাইন করেছেন, যা দীর্ঘদিন সেরাদের কাতারে থাকতে রোনালদোর মতো অভিজাত অ্যাথলেটরা ব্যবহার করেন। এই ‘প্রো–গ্রেড’ প্রযুক্তি প্রতিদিনই ব্যবহার করা যায় এবং যে কেউ এটা ব্যবহার করতে পারেন। মার্কা আরও জানিয়েছে, হুপের পণ্য দিয়ে রোনালদো নিজের ঘুম, পরিশ্রম, চাপ, বিশ্রাম এসব বিশ্লেষণ করতে পারেন। এমন ১৪০টির বেশি শারীবৃত্তীয় আচরণ দেখে রোনালদো নিশ্চিত হতে পারেন কোন বিষয়টি তাঁর পারফরম্যান্সে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখছে।
রোনালদো যে ‘ফিটনেস–ফ্রিক’ তা গোটা বিশ্বেরই জানা। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফিট থাকতে পর্তুগিজ কিংবদন্তির চেষ্টার অন্ত নেই। গত মার্চে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ফিট থাকতে বিশেষ খাবার খাচ্ছেন রোনালদো। পর্তুগিজ সেই খাবারের নাম বাকালহাউ আ ব্রাস। লবণাক্ত কড মাছ, পেঁয়াজ, আলু ও ডিম দিয়ে তৈরি করা এ রেসিপি রোনালদোর মায়ের। চিনি ও মদ তিনি এড়িয়ে চলেন এবং পানীয় হিসেবে তাঁর আস্থা বিশুদ্ধ পানিতেই।
শুধু তা–ই নয়, ভীষণ স্বাস্থ্যসচেতন রোনালদো ফিট থাকতে প্রযুক্তিও ব্যবহার করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে চার হাজার পাউন্ড দামের ক্রায়ো কমপ্রেশন বুট পরে শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেছিলেন। এটি মাসল রিকভারি করার প্রযুক্তি।
পাশাপাশি মৌসুম চলুক বা না চলুক, রোনালদোর শরীরচর্চায় সাপ্তাহিক ছুটি বলে কিছু নেই। সপ্তাহে পাঁচ দিন জিমে চার ঘণ্টা করে সময় কাটান। ফিটনেস–চর্চায় ‘হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং’ (এইচআইআইটি) বলে একটা কথা আছে। মানে একটু বিরতি দিয়ে তীব্রভাবে অনুশীলন—রোনালদো ঠিক এ কাজটাই করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। স্প্রিন্টিং ও সাইক্লিং করেন প্রতিদিনই। স্প্রিন্টিং ও জগিংয়ে তাঁর সঙ্গী প্রেমিকা জর্জিনা রদ্রিগেজ। কখনো কখনো বড় ছেলেকেও পান পাশে।
চিনিযুক্ত খাবার, কার্বোনেট পানীয় ও অ্যালকোহল ছুঁয়েও দেখেন না রোনালদো। মাছ, মুরগি ও তাজা শাকসবজি তাঁর খাবার। পছন্দের পানীয়র মধ্যে ব্ল্যাক কফি ও ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস। আর ঘুম? এমনিতে একটি সাধারণ ধারণা হলো, সুস্থ শরীরের জন্য আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। রোনালদো এ কাজটাই করেন একটু অন্যভাবে।
শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ ঠিক রাখতে ৯০ মিনিট করে ঘুমান পাঁচবার। তবু রোনালদো ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারেন না। কেন? তাঁর সাবেক এজেন্ট হোর্হে মেন্দেজ একবার বলেছিলেন, নিজেকে নিয়ে সব সময় অতৃপ্তিতে ভোগাটা রোনালদোর স্বভাব, ‘...এমন কোনো সীমানা নেই, যেখানে সে পৌঁছাতে পারে না। দুই যুগের বেশি সময় ধরে এমন হয়েছে এবং সেটা এখনো চলমান। সে কখনো সন্তুষ্ট হয় না। বিশেও ছিল না, ত্রিশেও না এবং এখন চল্লিশেও না।’