ফিফার বর্ণবাদবিরোধী কমিটির প্রধান ভিনিসিয়ুস

ভিনিসিয়ুস জুনিয়রছবি: রয়টার্স

ফুটবল তথা ক্রীড়াঙ্গনে বর্ণবাদের থাবা অনেক পুরোনো। নানা চেষ্টা ও উদ্যোগের পরও ফুটবলকে বর্ণবাদমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় এই আক্রমণ সব সীমা ছাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমেও ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে কেন্দ্র করে ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বর্ণবাদ। মৌসুমের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষ সমর্থকদের কাছ থেকে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হতে হয় ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গারকে।

তবে বিষয়টি আরও তীব্র হয় মৌসুমের শেষ দিকে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ভ্যালেন্সিয়া ম্যাচে। সেদিন ভিনির বিরুদ্ধে হওয়া বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে ফুটবল–বিশ্বফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সানজিদা খাতুন পর্যন্ত সবাই ভিনিকে সমর্থন করে নিজেদের অবস্থান জানান।

আরও পড়ুন

সে ধারাবাহিকতায় এবার ফিফার বর্ণবাদবিরোধী কমিটির প্রধান বানানো হয়েছে ভিনিকে। খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত বিশেষ এই কমিটি ফুটবলে বৈষম্যমূলক আচরণের ঘটনায় কঠোর শাস্তির পরামর্শ দেবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিশেষ এই কমিটির কথা নিশ্চিত করেছেন ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো। ব্রাজিল জাতীয় দল ও ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে বৈঠকের পর ফিফা সভাপতি বলেছেন, ‘ফুটবলে আর কোনো বর্ণবাদ থাকবে না। এটা হলেই ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হবে। অনেক হয়েছে।’

ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে আলাপ করেছেন জানিয়ে ইনফান্তিনো বলেছেন, ‘আমি ভিনিসিয়ুসকে বলেছি খেলোয়াড়দের দলটির নেতৃত্ব দিতে, যারা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করবে। যা পরে বিশ্বব্যাপী ফুটবল কর্তৃপক্ষগুলো বাস্তবায়ন করবে। আমাদের খেলোয়াড়দের কথা শুনতে হবে। নিরাপদ পরিবেশের জন্য আমাদের কী দরকার, তা জানতে হবে। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে খুবই মনোযোগী।’

ইনফান্তিনোর সঙ্গে বৈঠকে ভিনিসিয়ুস
ছবি: টুইটার

লম্বা সময় ধরে বর্ণবাদ ফুটবল অঙ্গনে মাথাব্যথার কারণ হলেও সেটি দূরীকরণে কোনো উদ্যোগই খুব একটা ফল বয়ে আনেনি। ফিফা অবশ্য এবার কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বলছে। ইনফান্তিনো বলেছেন, ‘আমাদের আরও কঠোর শাস্তির প্রয়োজন। ফুটবলে বর্ণবাদ আমরা আর সহ্য করব না। ফিফা সভাপতি হিসেবে আমি ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।’

এর আগে ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে ভিনির বিরুদ্ধে হওয়া বর্ণবাদী আচরণের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান ইনফান্তিনো। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি। ফুটবল বা সমাজে বর্ণবাদের স্থান নেই। যেসব খেলোয়াড় এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বে, ফিফা তাদের পাশে থাকবে। ভ্যালেন্সিয়া–রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের ঘটনাগুলো দেখাচ্ছে যে বিষয়টি এভাবেই হওয়া দরকার। যে কারণে ফিফা প্রতিযোগিতায় তিন–ধাপ প্রক্রিয়া চালু আছে, যা সব ধরনের ফুটবলে প্রচলনের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন

ভিনিসিয়ুসের ঘটনার পর ব্রাজিলও বর্ণবাদ সোচ্চার হয়েছে। এরই মধ্যে ভিনিসিয়ুসের নামে আইনও অনুমোদন পেয়েছে ব্রাজিলে। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর আইনপ্রণেতারা ফুটবল ম্যাচে হওয়া বর্ণবাদী আচরণ কমানোর লক্ষ্যে আইনটি অনুমোদন করেছেন। যে আইনটি এখন ‘ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ল (আইন)’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে।

নতুন এই আইনের অনুমোদন দেওয়া নিয়ে আইনের খসড়া লেখক রাজ্যের ডেপুটি প্রফেসর জোসেমার বলেছিলেন, ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্মান নিশ্চিত করার জন্য এ ধরনের আইনের প্রয়োজন ছিল। তা ছাড়া স্টেডিয়ামে বর্ণবাদ দূর করার জন্যও এমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল।

আরও পড়ুন

শুধু এটুকুই নয়, ভিনির সঙ্গে হওয়া বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবাদে প্রীতি ম্যাচও খেলতে যাচ্ছে ব্রাজিল। ১৭ জুন বার্সেলোনায় প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ গিনি এবং ৩ দিন পর ২০ জুন লিসবনে দ্বিতীয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ সেনেগাল।