‘ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত’
ক্লাব বিশ্বকাপ চলছে, স্পনসর থেকে প্রচুর অর্থের সমাগম হচ্ছে ফিফার ভান্ডারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গরমের মৌসুম আর বৈরী আবহাওয়ায় ৩২ দলের লম্বা এ টুর্নামেন্ট খেলোয়াড়দের দম যেন কেড়ে নিচ্ছে। এ ছাড়া ফিফা যতটা আশা করেছিল আর স্বপ্ন দেখিয়েছিল, এ টুর্নামেন্ট ঘিরে ততটা দর্শক–সাড়া নেই। গ্রুপ পর্বের বেশির ভাগ ম্যাচেই গ্যালারি ছিল ফাঁকা। সব মিলিয়ে বড় পরিসরে আয়োজন করা ‘নতুন’ ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে ফুটবল–সংশ্লিষ্ট অনেকেই হতাশ।
সর্বশেষ এই টুর্নামেন্টটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন লিভারপুলের সাবেক কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। জার্মান এই কোচের মতে, ৩২ দল নিয়ে বড় পরিসরের ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজনের এই পরিকল্পনা ফুটবলের ইতিগহাসের ‘সবচেয়ে বাজে’। আর এই পরিকল্পনা যাঁরা করেছেন, তাঁরা ক্লাব ফুটবলের ‘নিত্যদিনের অভিজ্ঞতার’ সঙ্গে পরিচিত নন বলেও সমালোচনা করেছেন ক্লপ।
ক্লপ ক্লাব বিশ্বকাপের সমালোচনা করেছেন মূলত জার্মানির কোচ ইউলিয়ান নাগলসমানের কিছু কথার সূত্র ধরে। এক আলোচনায় তিনি নাগলসমানের প্রশংসা করার একপর্যায়ে ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়েও কথা বলেছেন। ক্লপের কথাগুলো ছিল এ রকম, ‘ইউলিয়ান তার সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনগুলোয় কিছু বিষয় তুলে ধরেছে। সে বলেছে যে আমাদের বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করতে হবে। সে ফুলব্যাক আর উইঙ্গার নিয়ে কথা বলছিল।’
ম্যানচেস্টার সিটি বা চেলসি যদি ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে, তাহলে আগামী মৌসুমের প্রথম ম্যাচ এবং এই ফাইনালের আগে খেলোয়াড়েরা সময় পাবে শুধু এক মাস। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে এক মৌসুমের ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য এটা মোটেই যথেষ্ট নয়।
ক্লপ এরপর যোগ করেন, ‘সত্যিকার অর্থে দিন শেষে খেলাই আসল, এর চারদিকের বিষয়গুলো নয় এবং এ জন্যই ক্লাব বিশ্বকাপ ফুটবলে চালু করা সবচেয়ে বাজে পরিকল্পনা। যেসব মানুষের ক্লাব ফুটবলের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই অথবা যাদের আসলে কিছু করার নেই; তারাই কিছু করে দেখানোর জন্য এমন একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে।’
বিরতিহীন ফুটবল সূচি খেলোয়াড়দের কেমন ক্ষতি করছে, সেটাও তুলে ধরেছেন ক্লপ, ‘গত বছর কোপা আর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে, এ বছর ক্লাব বিশ্বকাপ এবং আগামী বছর বিশ্বকাপ। এর মানে খেলোয়াড়দের জন্য শারিরীক বা মানসিক দিক থেকে কোনো বিশ্রাম নেই।’ ক্লপ এখানেই থামেনি। তিনি বলে চলেন, ‘তারা অনেক টাকা আয় করবে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু এই আয়ের বিষয়টি কিছু সময়ের জন্য এক পাশে রেখে ভাবুন। একজন এনবিএ খেলোয়াড়ও ভালো অর্থ আয় করে, তারা বছরে চার মাস ছুটি পায়। ভার্জিল ফন ডাইক যা পুরো ক্যারিয়ারেও পায় না।’
ম্যানচেস্টার সিটি বা চেলসি যদি ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে, তাহলে আগামী মৌসুমের প্রথম ম্যাচ এবং এই ফাইনালের আগে খেলোয়াড়েরা সময় পাবে শুধু এক মাস। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে এক মৌসুমের ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য এটা মোটেই যথেষ্ট নয়।
এত বেশি ম্যাচ খেললে খেলোয়াড়েরা একসময় না একসময় চোটে পড়বেন বলেই মনে করেন ক্লপ, ‘এ মৌসুমে চোটে না পড়লে আগামী মৌসুমে পড়বে। আগামী মৌসুমে না হলে বিশ্বকাপ বা তারপর চোটে পড়বে...এভাবে চলতে পারে না। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, তারা যেন বিরতি পায়। যদি তারা সেটা না পায়, তাহলে লম্বা সময় ধরে শীর্ষ মানের খেলা উপহার দিতে পারবে না। আর সেটা যদি তারা না পারে, তাহলে ক্রেতাদের কাছে পুরো প্যাকেজটিই (ফুটবল) মূল্য হারাবে।’