খেলোয়াড়ের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর ম্যাচ খেলে সমালোচিত চীনের ক্লাব
চীনে ভবনের ১১ তলা থেকে নিচে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন গ্যাবানিজ ফুটবলার অ্যারন বুপেন্দজা। বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরে বুপেন্দজার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরই ম্যাচ খেলেছে তাঁর দল জেনজিয়াং এফসি। একজন খেলোয়াড়ের মুত্যুর কিছুক্ষণের মধ্যে ম্যাচ খেলতে নামায় জেনজিয়াংয়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা।
এদিকে ২৮ বছর বয়সী এই ফুটবলারের মৃত্যুর পেছনে কোনো অপরাধমূলক তৎপরতার প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। বুপেন্দজা তাঁর ভাড়া বাসার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তারা।
গ্যাবনের হয়ে ৩৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা বুপেন্দজা এ বছরের শুরুতে চায়নিজ ফুটবল লিগে যোগ দেন। এর আগে তিনি ফ্রান্স, তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও রোমানিয়ার লিগে খেলেছিলেন। ২৮ বছর বয়সী বুপেন্দজা ১১ তলা থেকে পড়ে যান দুপুরের দিকে। এরপর বিকেল পাঁচটায় মেইজু হাক্কার বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে নামে জেনজিয়াং এফসি।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বুপেন্দজার মৃত্যুর পর ম্যাচ স্থগিত না করায় জেনজিয়াং এফসির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘এই ম্যাচটা কি স্থগিত করা উচিত ছিল না?’ আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাটে একজন লেখেন, ‘স্থগিত না করার কারণ কী? চায়নিজ সুপার লিগ সত্যিই অপেশাদার।’
২-২ সমতায় শেষ হওয়া ম্যাচটিতে জেনজিয়াং বা মেইজু হাক্কার কোনো বিদেশি খেলোয়াড় মাঠে নামেননি। খেলার সময় গ্যালারিতে দর্শক বুপেন্দজার নাম ধরে স্লোগান দেন। তাঁর ৯ নম্বর জার্সিও নিয়ে আসেন কেউ কেউ, তাঁর স্মরণে ফোনের আলোও জ্বালেন। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার পর জেনজিয়াংয়ের খেলোয়াড় ও স্টাফরা সমন্বিতভাবে বুপেন্দজার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।
খেলা শেষে টিভি ক্যামেরার সামনে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জেনজিয়াং এফসি অধিনায়ক চেং জিন। তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। আমার আসলে কিছুই বলার নেই।’ ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জেনজিয়াংয়ের স্প্যানিশ কোচ রাউল কানেদা পেরেজও ম্যাচ নিয়ে কিছু বলেননি, ‘খেলা নিয়ে কিছুই বলার নেই। আজ ফুটবল নিয়ে কথা বলার দিন নয়। এ সময়ে ফুটবলের আলোচনা মানায় না।’
বুপেন্দজার স্মরণে হাংজুতে জেনজিয়াং এফসির প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে সেখানে ফুল দিয়েছেন সমর্থকেরা।
এদিকে হাংজুর ইউহাং জেলার পুলিশ দপ্তর থেকে বুপেন্দজার মৃত্যু নিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘আমাদের দপ্তর বুধবার আনুমানিক বেলা ১টা ১৪ মিনিটে একটি খবর পায়, যেখানে বলা হয় যে আমাদের আওতাধীন একটি আবাসিক এলাকায় একজন ভবন থেকে পড়ে গেছে। আমাদের কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এবং আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসার চেষ্টার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’
বুপেন্দজার ভবন থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার পেছনে অন্য কারও সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলে বলা হয়, ‘তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মৃত ব্যক্তি ছিলেন বুপেন্দজা। ঘটনাস্থলের পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার এবং ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত করে যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ভাড়া বাড়ির বারান্দা থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে। এতে কোনো ষড়যন্ত্র বা অপরাধমূলক তৎপরতার প্রমাণ মেলেনি।’