ভিনিসিয়ুসের ঘটনা ফুটবলের নয়, সামাজিক সমস্যা

ভিনিসিয়ুসের ঘটনাকে ‘সামাজিক সমস্যা’ মনে করেন ডিয়েগো সিমিওনেছবি: এএফপি

স্পেনকে বর্ণবাদীদের দেশ বলেছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। এ নিয়ে দ্বিমত আছে স্প্যানিশ ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদের কোচ ডিয়েগো সিমিওনের।

আর্জেন্টাইন কোচ ডিয়েগো সিমিওনে স্পেনকে মোটেও বর্ণবাদী দেশ মনে করেন না। লা লিগায় ব্রাজিলিয়ান তারকার বারবার বর্ণবাদী আচরণের শিকার হওয়াকে তিনি ফুটবল–সংক্রান্ত কোনো সমস্যাও মনে করেন না। তাঁর কাছে এটা পুরোপুরিই সামাজিক সমস্যা। তবে সিমিওনে মনে করেন, যে সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, সেটা একটা সুযোগ। বর্ণবাদকে চিরতরে বিদায় করার সুযোগ এটাই।

স্পেনের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিমিওনে বলেছেন, ‘আমি স্পেনকে কোনো বর্ণবাদী দেশ মনে করি না। এটা ঠিক যে যখন কোনো বিষয় ঘটে, তখন বিষয়টি অনেক বেশি সামনে চলে আসে। তখন সে বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই সবার মনোযোগে থাকেন। কিন্তু এসব (বর্ণবাদ) তো রাস্তাঘাটে ঘটতে দেখা যায়। আমি বিষয়টিকে এভাবেই দেখি। এটা স্টেডিয়ামে বা ফুটবল মাঠেই যে শুধু ঘটছে, বিষয়টা এমন নয়। এসব রাস্তাঘাটেও ঘটছে এবং সে কারণেই তরুণদের দেখভালটা আমাদের বেশি করে করতে হবে।’

ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে আবারও বর্ণবাদের শিকার রিয়াল তারকা ভিনিসিয়ুস
ছবি: রয়টার্স

সিমিওনে বর্ণবাদ সমস্যাকে তরুণদের মনোজাগতিক কিংবা তাঁদের পর্যাপ্ত নৈতিকতা শিক্ষার অভাব হিসেবেই দেখেন, ‘আমি ব্যাপারটাকে একটু গভীরে গিয়ে দেখতে চাই। আমরা এখানে ১৯, ২০, ২৩ বছর বয়সী তরুণদের আচরণ নিয়ে বলছি। তাঁরা তরুণ, তাঁরা ঠিক বুঝতে পারছেন না, তাঁরা কী করছেন।’ সিমিওনে বর্ণবাদকে সামাজিক সমস্যা বলেই মনে করেন, ‘আমি আমার অবস্থান থেকে সরছি না। আমাদের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে, সেটি যেকোনো বিষয়ে, যেকোনো পরিস্থিতিতে। আমাদের কোনো ভুল করা যাবে না। এটা (ভিনিসিয়ুসের ঘটনা) ফুটবলের কোনো সমস্যা নয়, এটা সামাজিক সমস্যা। এই জায়গায় আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।’

মেস্তায়ায় ভ্যালেন্সিয়ার খেলোয়াড়দের মাঝ থেকে গ্যালারির দিকে আঙুল তুলে ভিনিসিয়ুস দেখাচ্ছেন, বর্ণবাদী কটুক্তিটা কোত্থেকে করা হয়েছে
ছবি: রয়টার্স

তবে আতলেতিকো কোচ ভিনিসিয়ুসের ঘটনাটিকে একটা বড় সুযোগ হিসেবেই দেখছেন, ‘এই ঘটনা আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নয়ন করার। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ কী করে। কী পদক্ষেপ নেয়। আমি এই ঘটনা থেকে সুবিধা নিতে চাই। এটা দারুণ একটা সুযোগ কথাটা বলার—দেখো ভাই যথেষ্ট হয়েছে। স্পেনে আমরা সবাই ভালোভাবে বসবাস করতে অভ্যস্ত। কিন্তু ভালোভাবে থাকতে যাঁরা চান না, তাঁদের ফুটবলটা অবশ্যই ভিন্নভাবে উপভোগ করতে হবে।’

লা লিগায় ২০২১ সাল থেকে মোট ১০ বার বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন ভিনিসিয়ুস। প্রতিবারই তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে সর্বশেষ ঘটনায়। গত রোববার ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচে দর্শকেরা ভিনিসিয়ুসকে ‘বানর’ বলায় ব্রাজিলিয়ান তারকা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি মাঠেই গ্যালারির দিকে ছুটে গিয়ে সেই দর্শককে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেন। ভিনি নিজেও মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন লা লিগা কর্তৃপক্ষের। তাঁর অভিযোগ, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লা লিগার ভূমিকা যেন ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’। তারা দেখেও না দেখার ভান করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভিনিসিয়ুস এ ক্ষেত্রে গোটা ফুটবল দুনিয়ারই সমর্থন পাচ্ছেন। ফিফা সভাপতি তাঁর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন। ভিনি পাশে পাচ্ছেন তাঁর দল রিয়াল মাদ্রিদকেও। রিয়ালের সতীর্থ, কোচ ও সভাপতি সবাই প্রতিবাদ করেছেন। সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ গতকাল এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এখন থেকে কোনো রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলারের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী কোনো আচরণ সহ্য করবেন না তাঁরা।

আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গত জানুয়ারি মাসে রিয়াল মাদ্রিদের একটি ম্যাচেও ভিনিসিয়ুস বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছিলেন। মাদ্রিদ শহরের একটি সেতুতে আতলেতিকো সমর্থকেরা ভিনিসিয়ুসের কুশপুত্তলিকায় ফাঁসির দড়ি পরিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে সর্বশেষ বর্ণবাদী ঘটনার পর আতলেতিকোর চার সমর্থককে গতকাল মাদ্রিদ পুলিশ আটক করেছে ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধে বিদ্বেষজনিত অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে।