গোল করতে ভুলে গেছেন ভিনিসিয়ুস, কী হয়েছে তাঁর
গোল করে একসময় তিনি নাচতেন দর্শকের সামনে। এখন গোল নেই, তাই নাচও নেই। আছে শুধু দর্শকদের দুয়ো!
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গত শনিবার রাত। ম্যাচের তখন ৮৩ মিনিট। ভিনিসিয়ুসকে তুলে গঞ্জালো গার্সিয়াকে নামান রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জাবি আলোনসো। ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার মাঠ ছেড়ে বেঞ্চে এসে বসার সময় তাঁকে দুয়োধ্বনিতে ভাসিয়ে দেন বার্নাব্যুর রিয়াল সমর্থকেরা। সেভিয়ার বিপক্ষে রিয়াল ২-০ গোলে জিতলেও ম্যাচের ওই মুহূর্ত নিয়ে আলোচনা চলছে এখনো। যে ভিনিসিয়ুসের সামান্য ড্রিবলিংয়েও মোহগ্রস্ত হয়ে যেতেন রিয়ালের সমর্থকেরা, সেই তাঁরাই এখন তাঁকে সহ্য করতে পারছেন না! কারণ, ভিনিসিয়ুস গোল করতে ভুলে যাচ্ছেন।
সমর্থকদের দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। ভিনির প্রতি দুয়ো নিয়ে জাবি নিজেই বলেন, ‘সমর্থকেরা স্বাধীন ও তাঁরা নিজেদের মতামত দিতে পারেন।’ ভিনির পায়ে গোলখরা দেখা দেওয়ায় এখন হয়তো সময়টা খারাপ যাচ্ছে। বড়দিনের ছুটি শেষে আবারও মাঠে ফিরে গোল করার অভ্যাসটা তিনি ফিরিয়ে আনতে পারেন কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। আপাতত জেনে নেওয়া যাক, গোল করায় ভিনির ফর্ম আসলে কতটা খারাপ।
বছরের হিসাব করলে ভিনি এ বছর রিয়ালের হয়ে ১৩ গোল করেছেন। এর মধ্যে ৫ গোল করেছেন জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে। তাঁর এই গোলসংখ্যার ৩৮ শতাংশ এসেছে বছরের প্রথম ২৫ শতাংশ সময়ে। হ্যাটট্রিক নেই। জোড়া গোল আছে দুটি ম্যাচে। এ মৌসুমে রিয়ালের ৫২ গোলে তাঁর অবদান মাত্র ৯ শতাংশ (৫)।
রিয়াল ও ব্রাজিল জাতীয় দল মিলিয়ে (১৪ ম্যাচ রিয়াল, ৩ ম্যাচ ব্রাজিল) সর্বশেষ ১৭ ম্যাচেই গোল পাননি ভিনি। সর্বশেষ গোল করেছিলেন, সেটাও দুই মাসের বেশি সময় আগে। গত ১০ অক্টোবরের প্রীতি ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। রিয়ালের হয়ে তাঁর সর্বশেষ গোল ৪ অক্টোবর ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে। আজ ৮১তম দিন হতে চলল রিয়ালের জার্সিতে গোল নেই ভিনির পায়ে-এর মধ্যে ১১১৬ মিনিট ছিলেন মাঠে। রিয়াল ও ব্রাজিলের জার্সি মিলিয়ে এ সময়ে ১৩৩৪ মিনিট গোলহীন ভিনি।
ভিনিসিয়ুস এ মৌসুমে ২৪ ম্যাচে করেছেন ৫ গোল। এর মধ্যে ৪ গোল ‘ওপেন প্লে’ থেকে এবং অন্যটি পেনাল্টিতে। এ মৌসুমে ভিনির গোল গড় দেখলে তাই চমকে যেতে হয়। প্রতি ৩৫৬ মিনিটে একটি করে গোল করেছেন! এই খরা কতটা প্রকট, সেটা বুঝিয়ে দেয় আগের দুই মৌসুমের পরিসংখ্যান। গত মৌসুমে প্রতি ২১০ মিনিটে একটি করে গোল করেন (২২ গোল), তার আগের মৌসুমে প্রতি ১২৮ মিনিটে একটি করে গোল করেন (২৪ গোল)।
মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ১২৮ মিনিট থেকে ৩৫৬ মিনিট! এতটা পরিণত হওয়ার পর এই ভিনি রিয়ালের ভিনি কি না, সেই প্রশ্নও তুলতে পারেন কেউ কেউ। কারণ, একটি পরিসংখ্যান। রিয়ালের মূল দলে যোগ দেওয়ার পর চলতি মৌসুমে ভিনির মিনিটের হিসাবে তাঁর গোলের হার তৃতীয় সর্বোচ্চ বাজে।
২০১৮-১৯ মৌসুমে রিয়ালের মূল দলে সুযোগ পান ভিনি। সে মৌসুমে তিনি রিয়ালের ‘বি’ দলেও খেলেন। তাই ওই মৌসুমে তাঁর ৩১ ম্যাচে ৪ গোল (প্রতি ৪৩৫ মিনিট পরপর) এই হিসাবে ধরা হয়নি। ২০১৯-২০ মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে করেন ৩৮ ম্যাচে ৫ গোল—যেটা প্রতি ৩৬৩ মিনিট পরপর। তবে রিয়ালের মূল দলে ভিনির সবচেয়ে বাজে গোলের হার ছিল পরের মৌসুমে (২০২০-২১)। সেবার ৪৯ ম্যাচে ৬ গোল করেন—প্রতি ৪৫৩ মিনিট পরপর একটি করে গোল।
বছরের হিসাব করলে ভিনি এ বছর রিয়ালের হয়ে ১৩ গোল করেছেন। এর মধ্যে ৫ গোল করেছেন জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে। তাঁর এই গোলসংখ্যার ৩৮ শতাংশ এসেছে বছরের প্রথম ২৫ শতাংশ সময়ে। হ্যাটট্রিক নেই। জোড়া গোল আছে দুটি ম্যাচে। এ মৌসুমে রিয়ালের ৫২ গোলে তাঁর অবদান মাত্র ৯ শতাংশ (৫)।
ভিনির এই গোল–খরায় আরেকটি বিষয়কে প্রভাবক হিসেবে দেখা যায়। গত বছর ২৮ অক্টোবর প্যারিসে ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান। সেবার রদ্রির এই ট্রফি জেতেন এবং দ্বিতীয় হন ভিনি। ম্যানচেস্টার সিটি তারকার কাছে হারের পর জেদের বশে ভিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ১০ গুণ শক্তিশালী হয়ে ফিরবেন। কিন্তু পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, গত বছরের ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানের পর এ পর্যন্ত ৬৭ ম্যাচে মাত্র ১৯ গোল করেছেন ব্রাজিল তারকা।
ভিনিসিয়ুস এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। কিছুদিন আগে কোচ জাবি আলোনসোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার একটা গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। যদিও স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম পরে জানিয়েছে, দুজনের সম্পর্কে উন্নতিও হয়েছে। কিন্তু রিয়াল সমর্থকদের দুয়ো এবং ভিনির বাজে ফর্মের কারণে ইউরোপের কিছু ক্লাব নাকি সুযোগটা নেওয়ার অপেক্ষায়ও আছে। অর্থাৎ ভিনিকে কিনতে চায় কোনো কোনো ক্লাব—এই খবর জানিয়েছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা। রিয়ালে ভিনির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে ২০২৭ সালে।