জামালের সম্মানে লাল–সবুজ জার্সি পরেছিল আর্জেন্টাইন ক্লাব

সোল দে মায়োর জার্সিতে জামাল ভুঁইয়াছবি: সোল দে মায়ো

তাঁর কাছে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল, কেমন কাটল আর্জেন্টিনায়?

‘ভালো কাটল। খুব উপভোগ করেছি। নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি। তাই আমার খুব ভালো লেগেছে।’

এটুকু বলে জামাল ভূঁইয়া পরবর্তী প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করলেন। স্থান ঢাকার খিলক্ষেতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের টিম হোটেলের লবি। স্বদেশি সাংবাদিকের দুই ঘণ্টার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক আজ সন্ধ্যা সাতটার দিকে টিম হোটেলে পৌঁছান। রুমের চাবি নিতে নিতে পরিচিত সাংবাদিককে শুরুতে ‘আমি খুব ক্লান্ত’ বললেও জামালকে বেশ ফুরফুরেই লাগল।

সুদুর আর্জেন্টিনা থেকে ভ্রমণ করে এসেছেন। সেখানকার তৃতীয় বিভাগের দল সোল দে মায়োর হয়ে গত ২৭ আগস্ট প্রথম ম্যাচে খেলেন। সেটিতে দলের জয়ে পেনাল্টিতে গোলও করেছেন। সেই তৃপ্তি নিয়ে আজ সকালে ঢাকায় এসেছেন। উত্তরায় নিজের বাসায় কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় আসেন টিম হোটেলে। উদ্দেশ্য ৪ ও ৭ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের সঙ্গে ঢাকায় ফিফা প্রীতির দুটি ম্যাচ খেলা।

আর্জেন্টাইন ক্লাব সোল দে মায়োতে জামালের অভিষেক হয় ২৭ আগস্ট।
ছবি: টুইটার থেকে

ঢাকায় ফেরা জামালকে অনিবার্য প্রশ্নটি করতেই হলো, আর্জেন্টিনার মতো দেশে এতটা আতিথ্য পাবেন আশা করেছিলেন? ‘না এতটা আশা করিনি।’ সঙ্গে কিছুটা বিস্ময়ও, ‘আমি তো জানতাম না এত বাংলাদেশি থাকে ওখানে। আমি ঢাকায় আসার সময় আর্জেন্টিনার বিমানবন্দরে ১০ জন বাংলাদেশি এসেছেন আমাকে বিদায় দিতে। ওঁরা সেখানে আমার বাসায়ও এসেছেন। আমি তাঁদের বলেছি, আপনারা আসছেন, আমি খুব খুশি হয়েছি।’

আর্জেন্টিনায় জামালের অভিষেক ম্যাচে অনেক বাংলাদেশি মাঠে গেছেন। সেই তৃপ্তির ছোঁয়াও তাঁর মুখে ‘শুধু মাঠেই নয়, আমি আর্জেন্টিনা গেলে ভীষণ বড় একটা পার্টি করেছে আমার জন্য। সেই পার্টিতে ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতেরও আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসতে পারেননি।’

আর্জেন্টিনায় ব্যাপক মনোযোগ পাওয়াও বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা, ‘আমি চমকেই গেছি বলতে পারেন ব্যাপারটা দেখে। বাংলাদেশকে ওরা আসলে খুব ভালোবাসে। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিস্টার তাপিয়ে পর্যন্ত আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁর অফিসে। আর্জেন্টিনা দলের বাংলাদেশে আসা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। বেশ ভালো লেগেছে।’

আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের দলটি জামালকে প্রথম ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্বও দিয়েছিল। জামালের কাছে এটাও ভালো লাগার একটা কারণ, ‘খেলার দিন ক্লাব সভাপতি আমাকে ডেকে বলেন, “ভালোভাবে প্র্যাকটিস করেছ?” আমি বললাম, টিমের সঙ্গে সেভাবে করা হয়নি। উনি বললেন, তুমি আজকে দলের ক্যাপ্টেন। শুনে আমি চমকে যাই।’

কিন্তু সোল দে মায়োর অধিনায়কত্ব শুধু এক ম্যাচ নাকি পুরো মৌসুম? ‘জানি না ভাই। ওরা আমাকে প্রথম ম্যাচে ক্যাপ্টেনসি দিয়েছে। পরের ম্যাচে দেবে কি না, বলতে পারব না।’ জামাল ভূঁইয়া এ নিয়ে কিছুটা ধাঁধায়।

জামাল ভূঁইয়ার সম্মানে তাঁর অভিষেক ম্যাচে সোল দে মায়ো লাল মোজা, সবুজ প্যান্ট–জার্সি নিয়ে খেলতে নামে
ছবি: সোল দে মায়ো

ক্লাব থেকে জামালকে থাকার জন্য বাড়ি দেওয়া হয়েছে। সেটা নাকি বেশ বড়। তাই অ্যাপার্টমেন্ট চেয়েছেন জামাল। তাঁর ক্লাবে ব্রাজিল ও কলম্বিয়ার খেলোয়াড় আছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ হলেন জামাল। প্রথম দিন জামালের জন্য সোল দে মায়ো তাদের জার্সির রংই বদলে ফেলেছিল বলে জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘এমনিতে ক্লাবের জার্সির রং নীল-সাদা। কিন্তু আমার সম্মানে প্রথম ম্যাচে ক্লাবের জার্সির রং করা হয় লাল–সবুজ। লাল মোজা, সবুজ প্যান্ট, সবুজ জার্সি। এটা পরেও থাকবে কি না, জানি না। তবে যেটুকু সম্মান ওরা দিয়েছে, সেটা ভোলার নয়।’

আর্জেন্টিনা মানেই ফুটবল। জামাল তা দেখে এসেছেন কাছ থেকে। টের পেয়েছেন ম্যারাডোনা-মেসির দেশে ফুটবল নিয়ে পাগলামিও। বললেন সেটাও, ‘ওখানে ম্যাচের দিন সকাল থেকে ভক্তদের কার্যক্রম শুরু হয়। যা কিনা অবিশ্বাস্য।’

আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন জামাল ভূঁইয়া
ছবি: জামাল ভুঁইয়ার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে

কিন্তু একটা দেশের জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে অন্য দেশের তৃতীয় বিভাগে খেলাটাকে কীভাবে দেখেন? ‘তৃতীয় বিভাগ লিগের অনেক ক্লাবের র‍্যাঙ্কিং বেশ ওপরে। আপনি সেখানে গেলে বুঝতে পারতেন ওরা কতটা এগিয়ে’— প্রশ্নকর্তাকে পাল্টা উত্তর জামালের।

লিগে তাঁর দলের আরও দশটা ম্যাচ বাকি। ১০ সেপ্টেম্বর পরের ম্যাচ। এখন লিগের দ্বিতীয় পর্ব চলছে। লিগে তাঁর দলের অবস্থান সেরা ৫-এর মধ্যে। ক্লাবটির সঙ্গে তাঁর চুক্তি ১৫ মাসের। তাহলে বাংলাদেশে ক্লাব অধ্যায় কী শেষ? ‘না শেষ নয়। আগামী দিনে সুযোগ থাকবেই। তবে এ বছর আর নেই।’ জামালের ছোট্ট উত্তর।

আরও পড়ুন

আগামী মৌসুমে প্রথম বিভাগের দলে খেলার সুযোগ

সোল দে মায়োয় ভালো খেললে আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগে সুযোগ পাওয়ার ইঙ্গিত জামালের মুখে, ‘আমার ক্লাব সভাপতির দুটি ক্লাব আছে। একটি তৃতীয় বিভাগে আরেকটি প্রথম বিভাগে। সভাপতি আমাকে বলেছেন, “আমরা দেখি তুমি কেমন মানিয়ে নিতে পারো। তুমি এ বছর ভালো খেললে আগামী দিনে প্রথম বিভাগের দলে তোমাকে নেব।’’’

কিন্তু সেখানকার আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে একটু নাকি সমস্যা হচ্ছে জামালের।  নিজেই বলেন, ‘ম্যাচের দিন সকাল ৭টায় উঠে বাইরে দেখলাম বাড়ির সামনে শুধু বরফ। আমি ভাবলাম, আমি শেষ, এত ঠান্ডা (হাসি)। ম্যাচের সময় রোদ থাকলেও তাপমাত্রা ছিল মাত্র ৩-৪ ডিগ্রি। গত দশ বছর আমি বাংলাদেশে ছিলাম ভিন্ন আবহাওয়ায়। আমার জন্মস্থান ডেনমার্কে এখন গ্রীস্ম, আর্জেন্টিনায় শীতকাল। সেখানে এখন এত ঠান্ডা যে ভড়কে গিয়েছিলাম।’  

বলতে বলতে তৃপ্ত জামাল উঠে দাঁড়ান। বিশ্রাম নিতে দ্রুতই চলে যান রুমে।

আরও পড়ুন