উৎসবের নাম ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল
উপমহাদেশে ফুটবল চর্চার একটি রোমাঞ্চকর ও সুবর্ণময় অতীত আছে। ইতিহাস বলছে, ১৮৫৪ সালে কলকাতার গড়ের মাঠে ক্যালকাটা ক্লাব সিভিলিয়ান ও জেন্টেলম্যান অব ব্যারাকপুরের ম্যাচটি হলো প্রথম ম্যাচ। এতে বোঝা যায়, এখন থেকে ১৭০ বছরেরও আগে বাঙালি সমাজের একটি অংশের সঙ্গে দূর থেকে ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল।
স্থানীয়দের মধ্যে ফুটবল খেলার প্রচলন, খেলাটির প্রসার এবং জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে প্রথম থেকেই অবদান রেখেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র এবং শিক্ষাবিদেরা। স্কুলছাত্র নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী মায়ের সঙ্গে গিয়ে দেখেছেন বাতাসভর্তি গোলকপিণ্ডের পেছনে সাহেবদের হইচই করে ছোটাছুটি। নগেন্দ্রপ্রসাদের কাছে পুরো বিষয়টিকে উত্তেজক এবং আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। আর সেই থেকেই বাঙালির মগজে ফুটবল ঢুকে গেছে। কলকাতার হেয়ার স্কুলের ছাত্র নগেন্দ্রপ্রসাদ প্রথম ভারতীয়, যিনি বন্ধুদের নিয়ে গড়ের মাঠে ওয়েলিংটন ক্লাব গঠন করেন ১৮৭৮ সালে। হেয়ার স্কুলের পড়শি প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক জি এ স্ট্যাক নগেন্দ্র এবং তাঁর সহপাঠীদের উৎসাহ দেখে তাঁদের শুধু ফুটবল কিনে উপহারই দেননি, খেলার আইনকানুন সম্পর্কে অবগত করেন। এটাই ইতিহাসের পাতায় বাঙালির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফুটবল খেলার সূত্রপাত।
প্রথম থেকেই শিক্ষাবিদেরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফুটবলের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। দ্রুত বেড়েছে ছাত্রদের মধ্যে ফুটবলকে ঘিরে উৎসাহ এবং খেলা। কলকাতার নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন—হেয়ার স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজ, রিপন কলেজ, বিশপ কলেজ, শিবপুর, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কলকাতা মেডিকেল কলেজ, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের নিয়ে ফুটবল দল গঠিত হয়েছে।
আমাদের পূর্ব বাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমবেশি এই হাওয়া লেগেছে। ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তা স্থানীয় এবং বিদেশি শিক্ষাবিদেরা ফুটবল প্রচলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
১৯১১ সালের ২৯ জুলাই মোহনবাগান প্রথম স্থানীয় দল, যারা আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ফৈজাবাদের ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে পরাজিত করে নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। ভারতীয় জাতীয়তাবোধকে উদ্বুদ্ধ করেছে। দলের এগারোজন খেলোয়াড়ের মধ্যে দশজন ছিলেন আমাদের পূর্ব বাংলার সন্তান। এই দলে সুধীর চ্যাটার্জি ছাড়াও আরও ছাত্র ফুটবলার ছিলেন।
ব্রিটিশ অপেশাদার ফুটবল ক্লাব ইস্লিংটন কোরিয়ান্থনস এফসি ১৯৩৭-৩৮ ফুটবল মৌসুমে ভারতবর্ষে এসেছিল। একপর্যায়ে ঢাকায় খেলতে এসে ১৯৩৭ সালে ২১ নভেম্বর ঢাকা একাদশের কাছে ১-০ (পুরো সফরে ৯৫টি খেলায় অংশ নিয়ে এটাই একমাত্র পরাজয়) গোলে পরাজিত হয়। ঢাকা একাদশের হয়ে গোল করেছিলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর গ্রামের পাখি সেন। এই দলের ১১ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে দশজন ছিলেন ওয়ারী ক্লাবের খেলোয়াড়। এর মধ্যে আটজন ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র। দলের অধিনায়ক ছিলেন এস মিত্র মেডিকেল স্কুলের ছাত্র। এটা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ৮০ থেকে ৯০ বছর আগেও আমাদের এই পূর্ব বাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ফুটবল চর্চা ছিল।
জগন্নাথ কলেজের তদানীন্তন অধ্যক্ষ রায় বাহাদুর সত্যেন ভদ্র, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন, আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ বি সি গুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার ফজলুর রহমান, ড. মাহমুদ হাসান, ড. জেনকিনস প্রমুখ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে খেলার চর্চাকে সব সময় উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করেছেন। ড. জেনকিনস, ড. মাজহারুল হক, ড. মাহমুদ হুসেইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে ফুটবল খেলতেন। আতিকুজ্জামান খান এবং অন্য অধ্যাপকেরা খেলতেন ক্রিকেট, ভলিবল, টেনিস ও ব্যাডমিন্টন। ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন, প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক, ড. এ আর খান ছাত্রদের সঙ্গে দাবা খেলেছেন। ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের প্রথম সভাপতি। ড. এ আর খান দীর্ঘ সময় ধরে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২৭ সালে অখণ্ড ভারতে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের ফাইনালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ১-০ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একমাত্র গোলটি করেছেন খন্দকার নাসিম। এরপর ১৯৩১ সালে বিহারের পাটনায় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল ফাইনালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১-০ গোলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্যার সুলতান আহমদ ট্রফি জয় করে। গোল করেছেন হাজি রমিজউদ্দিন। শুধু তা–ই নয়, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ক্রিকেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দল ১৯৫৮ সালে লুৎফর রহমানের (মাখন ভাই) নেতৃত্বে কায়েদে আজম জাতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ইস্ট জোনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) কমবেশি খেলার চর্চা ছিল। ঢাকাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্রীড়াঙ্গনে স্থবিরতা নেমে এসেছে নব্বইয়ের দশকের শুরুর পর থেকে। ফুটবল ক্রিকেটের মতো দলীয় খেলায় জাতীয় পর্যায়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ৩৫ বছরে উল্লেখ করার মতো ভূমিকা নেই। স্বাধীনতার পর ঢাকাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় গেমসে একপর্যায়ে ভালো করলেও সেই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এখন আর জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় দল খুঁজে পাওয়া যায় না।
দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্রীড়াঙ্গনকে ঝাঁকুনি দেওয়ার মাধ্যমে জাগিয়ে তোলা, ছাত্রদের জন্য খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, সাধারণ মানুষের প্রিয় খেলার মানোন্নয়ন ও অগ্রগতিতে কার্যকর ইতিবাচক ভূমিকা রাখা এবং সর্বোপরি ফুটবল প্রসারের আন্দোলনের লক্ষ্যে ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের যাত্রা শুরু হয়েছে ২০২৩ সালে। স্পনসর ইস্পাহানি এবং প্রথম আলো মনে করে, এই টুর্নামেন্টের মধ্যে ফুটবল–স্বপ্ন লুকিয়ে আছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ইস্পাহানি গ্রুপের ব্যবসার শুরু দুই শ বছরেরও আগে। ১৯৪৭ সালে করপোরেট হেড অফিস স্থাপিত হয়েছে চট্টগ্রামে। ইস্পাহানি গ্রুপ সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় প্রথম থেকেই মানবসেবা ও কল্যাণ সমাজসেবা, শিক্ষা, মানবতা এবং ক্রীড়াঙ্গনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে পুরোনো ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক হলো ইস্পাহানি গ্রুপ। এই গ্রুপ বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন খেলার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে। স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পাকিস্তানের দিনগুলোতে ক্রিকেট, ফুটবল, হকিতে পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি ক্লাব পরিচালনা করেছে।
ফুটবলে ইস্পাহানি স্পোর্টিং ক্লাব ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে ওঠে। এই সময় কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের স্বর্ণযুগের কৃতী সেন্টার ফরোয়ার্ড হাফিজ রশিদকে ইস্পাহানি দলে খেলার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রথম বিভাগ ফুটবলে ইস্পাহানি কখনো শিরোপা না জিতলেও সব সময় ভালো দল গঠন করেছে। হকির প্রথম বিভাগ লিগে ১৯৭০ সালে ইব্রাহীম সাবেরের নেতৃত্বে ইস্পাহানি স্পোর্টিং শেষবারের মতো শিরোপা জিতেছে। এই দলে ছিলেন আবদুস সাদেক, সাব্বির ইউসুফ, মহসিন প্রমুখ খেলোয়াড়। ইস্পাহানি এখন আর নিজেরা দল না গড়লেও বিশেষ করে চট্টগ্রামে ছোট–বড় ফুটবল এবং অন্যান্য খেলার নিত্যসঙ্গী।
প্রথম আলো একটি বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক হলেও এর বাইরে তারা সব সময় মানুষের সঙ্গে আছে। আছে মানুষের ভালোর সঙ্গে, মানুষের প্রয়াসের সঙ্গে। তাদের অঙ্গীকার সমাজ এবং দেশের জন্য কিছু করা। প্রথম আলো বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে স্বাতন্ত্র্র্য সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। অনেক বছর ধরে নিয়মিতভাবে ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ইস্পাহানি গ্রুপের সহযোগিতায় চাইছে এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্রীড়াঙ্গনে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটাতে। তরুণদের ফুটবলের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট করতে।
এবার ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের তৃতীয় আসরে গত ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ের খেলা শুরু হয়। চট্টগ্রামে অংশ নিয়েছে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় দল। এরপর অনুষ্ঠিত খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলের খেলায় অংশ নিয়েছে চারটি করে দল। সবশেষে ঢাকার আঞ্চলিক পর্বে ২৮টি দল খেলছে সাভারের বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির চমৎকার ফুটবল মাঠে। প্রথমবার টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল ৩২টি দল। গত বছর (২০২৪) ৪২টি। আর এবার ৪৬টি। আগামী বছর এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা আরও বাড়বে, বাড়বে আঞ্চলিক ভেন্যু—এটি আশা করাই যায়। এবারই তো অংশ নিতে চেয়েছিল ৭১টি বিশ্ববিদ্যালয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টুর্নামেন্ট এবং টুর্নামেন্ট পরিচালনা পর্ষদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে, নিরপেক্ষতা ও শতভাগ পেশাদারত্বে পরিচালিত হয় এই টুর্নামেন্ট। এখানে নীতি এবং আদর্শের প্রশ্নে আপস নেই।
গত ১৫ ডিসেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি) ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উত্তেজনায় ভরপুর ফাইনাল ম্যাচের মধ্যে দিয়ে সাঙ্গ হয়েছে ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫। আসলে যা ফুটবল উৎসব। ফাইনালে গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে ট্রাইবেকারে ৭-৬ গোলে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছে এআইইউবি। এআইইউবি এবারই প্রথম শিরোপা জিতল। এই টুর্নামেন্ট তিনবার তিন দলকে শিরোপা উপহার দিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক। একচেটিয়া প্রাধান্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় দলের নেই। লড়াই করেই শিরোপা জয় করতে হবে। ভালো ফুটবল খেললে যেকোনো দলের সম্ভাবনা থাকবে। এবারই প্রথম আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের দুটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ফুটবলের আন্তর্জাতিক ভেন্যু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে টুর্নামেন্টের গুরুত্ব ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অংশগ্রহণকারী দল এবং তাদের সমর্থকেরা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়াতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দুটি সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করেছে টুর্নামেন্টের প্রচার সহযোগী এটিএন বাংলা।
প্রথম সেমিফাইনালে রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে ৬-৫ গোলে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিকে একচেটিয়া ম্যাচে ৬-০ গোলে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফুটবলকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে,Ñএটি দেশের বৃহত্তর ফুটবল মঞ্চের জন্য ইতিবাচক।
এবারই প্রথম এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম ম্যাচেই তারা টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য আছে ক্রীড়াঙ্গনে। নির্বাচিত ডাকসুতে যাঁরা আছেন,তাঁদের খেলাধুলার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।
এবারের টুর্নামেন্টে যেটি বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো, সেটি হলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দল, বাংলাদেশ লিগ, চ্যাম্পিয়ন লিগ এবং প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগের প্রচুর খেলোয়াড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র হিসেবে খেলেছেন। এতে করে খেলার মান ছিল উন্নত। হয়েছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অধিকাংশ খেলা ছিল গোছানো এবং পরিকল্পনামাফিক। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খেলোয়াড়ি ‘কোটায়’ নিয়মিতভাবে খেলোয়াড় ভর্তি করছে। এটি ক্রীড়াঙ্গনের জন্য শুভ উদ্যোগ। আরেকটি বিষয় হলো, গত দুইবারের তুলনায় হাতে সময় নিয়ে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবার টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে। এতে করে মাঠে ফুটবলে ছিল চিত্তাকর্ষক।
টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাফায়েল টুডু। গোল করেছেন ৮টি। টুর্নামেন্টে ট্রফি ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছে ৫ লাখ টাকা এবং রানার্সআপ দল ৩ লাখ টাকা। তিনবারের সফল আয়োজনের পর আগামী বছর ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ আসর আরও জমজমাট হবে—এটা আশা করাই যায়।
* ইকরামউজ্জমান: ক্রীড়া লেখক ও ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল পরিচালনা কমিটির সদস্য