বয়সভিত্তিক সাফের টুর্নামেন্টে নিয়মিতই অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু রুমা আক্তার, জয়নব বিবিদের জন্য এবারের অনূর্ধ্ব-১৭ নারী সাফ টুর্নামেন্ট একটু অন্য রকম।

দক্ষিণ এশিয়ার এই টুর্নামেন্টে যে অংশ নিচ্ছে ইউরোপের দল রাশিয়া! আগামী পরশু থেকে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুরু হবে অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এই টুর্নামেন্টে খেলবে ভারত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও রাশিয়া।

এবারের সাফের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করছে উয়েফা। মূলত উয়েফার অনুরোধেই সাফের দেশগুলোর সঙ্গে এই আসরে খেলতে যাচ্ছে রাশিয়া।

সত্তর দশকে একবার রাশিয়ার দল প্রিন্স দিনামো বাংলাদেশে এসেছিল। দীর্ঘদিন পর সাফের এই টুর্নামেন্টে খেলতে আজ সকালে ঢাকায় পা রেখেছে রাশিয়ার মেয়েরা। যদিও রাশিয়ার সিনিয়র দল উয়েফা থেকে নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই উয়েফাই বয়সভিত্তিক এই দলটিকে ঢাকায় খেলতে পাঠাতে কোনো আপত্তি করেনি।

আজ বাফুফে ভবনে এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন কোচ গোলাম রব্বানী। রাশিয়ার এই টুর্নামেন্টে খেলতে যে আপত্তি নেই, সংবাদ সম্মেলনে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাফুফের মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার, ‘বয়সভিত্তিক এই সাফে রাশিয়াকে খেলার জন্য উয়েফা এএফসিকে সহযোগিতা করছে। যে কারণে ওরা এখানে খেলতে এসেছে।’  

সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে বেশির ভাগ প্রশ্নই করা হলো রাশিয়াকে ঘিরে। প্রথমবারের মতো ইউরোপের দলের সঙ্গে খেলার আগে স্বাভাবিকভাবেই রোমাঞ্চিত বাংলাদেশের মেয়েরা। কোচ গোলাম রব্বানী সেই কথাই বললেন, ‘এটা আমাদের মেয়েদের জন্য বিরাট প্রাপ্তি। অবশ্যই রাশিয়া শক্তিশালী দল। তবে আমাদের মেয়েরাও প্রস্তুত। ওরা রাশিয়ার বিপক্ষে খেলার আগেই রোমাঞ্চিত। এখানে আমাদের লক্ষ্য ভালো খেলা। বিগত দিনে যেভাবে খেলেছে, এখানেও সেভাবে খেলবে এবং প্রতিটি ম্যাচই আশা করি ভালো খেলবে।’

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে রাশিয়ার অবস্থান ২৬। বাংলাদেশের অবস্থান ১৪০। যদিও এটি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট। কিন্তু এই দলের বিপক্ষে অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশের, এমনটাই মনে করছেন কোচ গোলাম রব্বানী, ‘রাশিয়া ইউরোপিয়ান দল। এদের বিপক্ষে খেলে তারা অনেক কিছু শিখবে। আসলে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় যে ফুটবল খেলি সেটা আর ইউরোপের স্টান্ডার্ড এক নয়। অনেক পার্থক্য আছে।  এখানে ভালো দিক হলো-আমাদের মেয়েরা যেভাবে পারফরম্যান্স করছে, কোথায় উন্নতির জায়গা সেগুলো খুজে বের করতে পারব। উয়েফাকে ধন্যবাদ যে এমন আয়োজন তারা করেছে।’

গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ। ওই টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই দলের তিন খেলোয়াড় বাদ পড়েছেন এই টুর্নামেন্টে। দলে নতুন মুখ ফরোয়ার্ড মোসাম্মত সাগরিকা ও ডিফেন্ডার নাদিয়া আক্তার। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অভিষেক হতে যাচ্ছে এই দুজনের। এ ছাড়া ৮ থেকে ১২ মার্চ এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বের দল থেকে ডাক পেয়েছেন নুসরাত জাহান, তৃষ্ণা রানী ও সুরভী আকন্দ।

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক রুমা আক্তার টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের পর আমরা লিগে খেলেছি। ১ জানুয়ারি থেকে এই টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সিনিয়র আপুদের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। এখানে আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’

প্রতিযোগিতায় লিগ ভিত্তিতে হবে খেলা, এর মানে প্রতিটি দল সবার সঙ্গে একবার করে মুখোমুখি হবে। সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দল হবে চ্যাম্পিয়ন। ২০ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ ভুটান। এরপর ২২ মার্চ রাশিয়া, ২৪ মার্চ ভারত ও ২৮ মার্চ নেপালের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ দল: সঙ্গীতা রানী দাস, কানম আক্তার, জয়নব বিবি, অর্পিতা বিশ্বাস, রুমা আক্তার, রিতু আক্তার, মুন্নী আক্তার, ঐশী রহমান, নুসরাত জাহান, থুইনু মারমা, পূজা দাস, অনন্যা মুর্মু, মুন্নী খাতুন, তৃষ্ণা রানী, কানন রানী বাহাদুর, মোসাম্মত সাগরিকা, নাদিয়া আক্তার, মালাথুই মারমা, সুলতানা আক্তার, সুরভী আকন্দ।