ফুটবল ইতিহাসে যে প্রথমের জন্ম দিল প্রিমিয়ার লিগ, জানলে অবাক হবেন
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ধুঁকতে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহাম হটস্পার এখন ইউরোপা লিগের ফাইনালে। লিগ টেবিলে ১৫ ও ১৬ নম্বরে থাকা দল দুটির ফাইনালে ওঠার ঘটনা নিঃসন্দেহে দারুণ কিছু। ২১ মে স্পেনের বিলবাওয়ে ‘অল ইংলিশ ফাইনাল’ শেষে এই দুই দলের একটি যে ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে যাচ্ছে, তা এখন নিশ্চিত।
পাশাপাশি এ দুটি দলের যে জিতবে, তারা নিশ্চিতভাবে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার টিকিট পাবে। এর আগে প্রিমিয়ার লিগ থেকে সর্বোচ্চ ৫টি ক্লাবের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা নিশ্চিত হয়েছিল। এখন দুই ইংলিশ ক্লাব ইউরোপার ফাইনালে যাওয়ায় সংখ্যাটি ৬ হতে যাচ্ছে।
এর ফলে নতুন একটি ইতিহাসও গড়তে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ। নিজেদের ইতিহাসে তো বটেই, ইউরোপে যেকোনো দেশের ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে পাঁচ ক্লাবের বেশি চ্যাম্পিয়নস লিগের এক আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে যাচ্ছে।
কীভাবে সম্ভব হলো
গতকাল রাতে ম্যাচের আগপর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগ থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫টি স্লট ছিল। একমাত্র লিগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল ছাড়া অন্য কোনো দল এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এই আসরে খেলার টিকিট পায়নি।
বাকি চারটি স্থানের জন্য অন্তত ৬টি দল লড়াই করছে। তবে পয়েন্ট তালিকার পরের দিকে থাকায় সেই দলগুলোর মধ্যে নেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহাম। এখন তারা আলাদাভাবেই এ লড়াইয়ে নামবে। ইউরোপা লিগের ট্রফি জয়ের পাশাপাশি নিশ্চিত হবে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার যোগ্যতাও।
প্রশ্ন হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ থেকে ৫টি দলই বা কীভাবে নির্বাচিত হলো? মূলত উয়েফা কো–এফিশিয়েন্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দুইয়ে থাকায় ইংল্যান্ডের ৫টি দলের পরের আসরে চ্যাম্পিয়নস খেলা নিশ্চিত হয়েছে। চলতি মৌসুমে এই সুযোগটা পেয়েছিল ইতালি ও জার্মানি। ইতালির বোলোনিয়া ও জার্মানির বরুসিয়া ডর্টমুন্ড সিরিআ ও বুন্দেসলিগায় পঞ্চম হয়ে সুযোগ পেয়েছিল এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে।
কো–এফিশিয়েন্ট র্যাঙ্কিংয়ের হিসাব করা হয় ক্লাবগুলোর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় প্রতিটি জয়ের জন্য ২ ও ড্রয়ের জন্য ১ পয়েন্ট যোগ হয়। চ্যাম্পিয়নস লিগের দলগুলোর জন্য বোনাস পয়েন্টও আছে। একটি দেশের শীর্ষ লিগে খেলা সব কটি ক্লাবের পাওয়া পয়েন্ট যোগ করার পর ক্লাবের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে বের করা হয় কো–এফিশিয়েন্ট পয়েন্ট।
এই নিয়ম মেনেই মূলত পাঁচ দলের চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপা লিগ ফাইনালে দুই ইংলিশ ক্লাব জায়গা করে নেওয়ায় সংখ্যাটি বেড়ে এখন ৬ হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ ইউনাইটেড–টটেনহামের মধ্যে যে দল ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতবে, তারাই খেলবে ২০২৫–২৬ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে।
এর আগে সেরা মৌসুম কোনটি ছিল
প্রিমিয়ার লিগ থেকে এর আগে সর্বোচ্চ ৫টি দল চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পেরেছিল। এই ঘটনাও এর আগে একবারই ঘটেছে। ২০১৭–১৮ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি এবং টটেনহাম হটস্পার একসঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলেছিল। সেবারও ইউনাইটেড শীর্ষ চারের বাইরে ছিল এবং ইউরোপা লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পাঁচটি দলই নকআউট পর্বে পৌঁছে গিয়েছিল এবং প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ইংল্যান্ডে থেকে ৫ দল শেষ ষোলোয় খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল।
এর আগে ২০০৪–০৫ মৌসুমে লিভারপুল চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতলেও লিগ শেষ করেছিল শীর্ষ চারের বাইরে থেকে। তবে সেই সময় লিগের অবস্থান যেমনই হোক, চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাজয়ী দল পরের মৌসুমে খেলার সুযোগ পেত। ফলে সেবার লিভারপুলের সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষ চার দলেরও চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এভারটান বাছাইপর্বের বাধা পেরিয়ে মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারায় সংখ্যাটা চারেই আটকে যায়।