সোহাগের দেওয়া প্রমাণ কেন আমলে নেয়নি ফিফা

দুই বছরের জন্য আবু নাঈম সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফাছবি: বাফুফে

দুই বছরের জন্য ফুটবল কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর আজ আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আবু নাঈম সোহাগ। এক দশকের বেশি সময় বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা সোহাগ, ফিফা বিচারিক চেম্বারের রায়কে ‘ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ফিফা সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছে কোড অব এথিকসের ধারা ১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব) ও ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) লঙ্ঘনের দায়ে। সোহাগের আইনজীবীর বিবৃতিতে বলা হয়, শুনানিতে প্রতিটি লেনদেনে ফিফার অনুমোদনের প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিচারিক চেম্বার এসব গুরুত্বপূর্ণ (ক্রিটিক্যাল) প্রমাণ বেআইনিভাবে আমলে না নিয়ে রায় দিয়েছেন।

কেন ফিফা অনুমোদিত লেনদেনের সাক্ষ্যপ্রমাণ বিচারিক চেম্বার বিবেচনায় নেননি, তাঁর ব্যাখ্যা আছে পূর্ণাঙ্গ রায়ে।

২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল সোহাগের বিরুদ্ধে ফিফা কোড অব এথিকসের সম্ভাব্য ৪টি ধারা লঙ্ঘনের আনুষ্ঠানিক তদন্তপ্রক্রিয়া শুরু করে ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার। একই বছরের ২৬ অক্টোবরে তদন্ত কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার বিচারিক চেম্বারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।

আরও পড়ুন

১ নভেম্বর সোহাগকে জানানো হয়, চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে বলা হয় সোহাগকে, পাঠানো হয় চূড়ান্ত প্রতিবেদনও। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নিয়ে ১৬ জানুয়ারি অভিযোগ খণ্ডন করে লিখিত অবস্থান তুলে ধরেন সোহাগ।

ইনভেস্টিগেটরি চেম্বারের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের লিখিত বক্তব্য ও তথ্যপ্রমাণ নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি ফিফা সদর দপ্তরে বিচারিক প্রক্রিয়ার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানিতে অভিযুক্ত সোহাগের আইনজীবী ও ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। বিচারিক চেম্বারের প্রশ্নেরও জবাব দেন তারা।

এখানে ‘নতুন প্রমাণ’ হিসেবে কিছু ই–মেইল উপস্থান করেন সোহাগের আইনজীবীরা। ই–মেইলগুলো ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে বাফুফে থেকে ফিফার কাছে পাঠানো হয়েছিল। বাফুফের লেনদেনে ফিফার অনুমোদনের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয় এগুলোকে।

আরও পড়ুন

বিচারিক চেম্বারের রায়ে বলা হয়, ফিফা কোড অব এথিকসের কোথাও বিচারিক প্রক্রিয়ায় ‘নতুন প্রমাণ’ দাখিলের সুযোগ রাখা নেই। বিশেষ করে লিখিত আকারে অবস্থান জানানোর পর ‘নতুন প্রমাণের’ বিষয়ে কিছুই নেই। এ কারণে শুনানিতে হাজির করা ‘নতুন প্রমাণ’ আমলে নেওয়া হয়নি।

নতুন মেইল আমলে নেওয়া হয়নি আরও দুটি কারণে। প্রথমত, ই–মেইলগুলো পাঠিয়েছেন বাফুফের অ্যাকাউন্টস বিভাগের সহকারী প্রধান অনুপম সরকার, যে মেইলের কয়েকজন অনুলিপি প্রাপকদের একজন সোহাগ। দ্বিতীয়ত, এগুলো খুব বেশি দিন আগের নয়। খুব সহজে ১৬ জানুয়ারি লিখিত অবস্থান জানানোর সময় উপস্থাপন করা যেত।

আরও পড়ুন

সব মিলিয়ে নতুন ই–মেইলকে এ মামলায় আমলে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিচারিক চেম্বার। চেম্বারের পর্যবেক্ষণে এটিও বলা হয় যে, নতুন ই–মেইল উপস্থাপন করে অভিযুক্ত বোঝাতে চেয়েছেন, সব লেনদেন ফিফার অনুমোদনে হয়েছে। সুতরাং কেনাকাটা প্রক্রিয়ায় যেসব অনিয়ম পাওয়া গেছে, সব এ অনুমোদনের মাধ্যমে সমাধান হয়ে যায়।

যুক্তিটি বিচারিক চেম্বারের কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের দায়দায়িত্ব ফিফার দিকে ঠেলে দিতে পারেন না, পুরো ক্রয়প্রক্রিয়ার প্রতিটি লেনদেন ফিফা চেক করবে, এটিও আশা করা যায় না। আর এ ই–মেইল যদি গ্রহণ করা হয়, এর প্রাসঙ্গিকতা খুব সীমিত বলে মনে করেছেন বিচারিক চেম্বার।

আরও পড়ুন