কাতার বিশ্বকাপ থেকেই আধা–স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি

আধা–স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি ত্রিমাত্রিক ভিডিওতে দেখতে পাবেন দর্শকেরাওছবি: টুইটার

জুনের মাঝামাঝিতেই জানা গিয়েছিল, কাতার বিশ্বকাপ থেকেই দেখা যেতে পারে আধা–স্বয়ংক্রিয় (সেমি-অটোমেটেড) অফসাইড প্রযুক্তি। আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা।

কাতার বিশ্বকাপ থেকেই মাঠে কার্যকর হবে এই প্রযুক্তি। খেলার গতি ধরে রাখা এবং নিখুঁত সিদ্ধান্ত নিতেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ছেলেদের বিশ্বকাপে প্রযুক্তিটি এই প্রথম ব্যবহার করা হবে।

আরও পড়ুন

গত বছর আরব কাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপে আধা–স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছে ফিফা। এ প্রযুক্তিতে ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অফসাইডের অ্যালার্ট পাবেন। মাঠের রেফারির সঙ্গে কথা বলে তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত রেফারির হাতে বলেই এটিকে ‘আধা-স্বয়ংক্রিয়’ পদ্ধতি বলা হচ্ছে।

ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী যে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তারই উন্নততর সংস্করণ হলো আধা–স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি। তিন বছরের গবেষণা ও বিভিন্ন পরীক্ষার পর এই প্রযুক্তি চালু করা হলো, যেন কাতারে (বিশ্বকাপে) দল, খেলোয়াড়, দর্শকেরা সেরাটা পান।

প্রযুক্তির সহায়তায় ফুটবলের সব স্তরে উন্নতি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফিফা। ২০২২ বিশ্বকাপে আধা–স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা তারই প্রমাণ।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

স্টেডিয়ামে ছাদের নিচে মোট ১২টি ক্যামেরা বসানো হবে এই প্রযুক্তির জন্য। এর মাধ্যমে মাঠে বলের গতিবিধি দেখা হবে। বলের সঙ্গে খেলোয়াড়ের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে খেলোয়াড়দের শরীরে ২৯টি জায়গার অবস্থানও দেখা যাবে ক্যামেরার মাধ্যমে। সেকেন্ডে প্রতিটি খেলোয়াড়ের শরীরের অবস্থানের ৫০টি করে তথ্য মিলবে এই প্রযুক্তিতে। এতে বল ও খেলোয়াড়ের সঠিক অবস্থান বোঝা যাবে।

কাতার বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বল ‘আল-রিহলা’র ভেতরেও ইনার্শিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট (আইএমআই) সেন্সর বসানো হবে। অফসাইডের ব্যবধান খুব অল্প কিংবা একেবারে সূক্ষ্মতম হলেও সেটি ধরা পড়বে এই সেন্সরে।

বলের মাঝে বসানো থাকবে এই সেন্সর। সেকেন্ডে ৫০০ বার মাঠে বলের অবস্থান জানিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি। খেলোয়াড়দের হাঁটু থেকে শরীরের অবস্থান এবং তার সঙ্গে কিক নেওয়ার সময় কিংবা রিসিভের সময় বলের অবস্থানও জানা যাবে। সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করে অফসাইড হলে তা সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও অফিশিয়ালদের জানিয়ে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।

অর্থাৎ, সতীর্থের পাস থেকে বল রিসিভের সময় কেউ অফসাইড হলে তৎক্ষণাৎ ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) কক্ষে জানিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি। ভিএআর কক্ষ থেকে মাঠের রেফারিকে সিদ্ধান্ত জানানোর আগে গোটা বিষয়টি ম্যানুয়ালি একবার পরীক্ষা করে নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শেষ হবে, তাই খেলার গতিও ঠিক থাকবে এবং সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নেওয়ার পাশাপাশি নিখুঁতও হবে। একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। আরব কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা গেছে, আগে যেখানে ভিএআর প্রযুক্তিতে অফসাইডের সিদ্ধান্ত দিতে প্রায় ৭০ সেকেন্ড সময় লাগত, আধা–স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তিতে তা ২৫ সেকেন্ডে নেমে এসেছে।

ভিডিও অফিশিয়াল মাঠের রেফারিকে সিদ্ধান্ত জানানোর পর স্টেডিয়ামের জায়ান্টস্ক্রিনে অফসাইডের ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন দেখতে পাবেন দর্শকেরা। মাঠে খেলোয়াড়ের শরীরে কোন অংশ, কখন ঠিক কি অবস্থায় অফসাইড হয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যাবে। আর এই ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন ফিফার বিশ্বকাপ সম্প্রচার স্বত্ত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানকেও দেওয়া হবে, যেন বিশ্বব্যাপী দর্শকেরা টিভিতে তা দেখতে পান। ২১ নভেম্বর কাতারে শুরু হবে ফিফা বিশ্বকাপ।

আরও পড়ুন