তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে ভালো খেলেও শেষ পর্যন্ত হারের হতাশা বাংলাদেশের

বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে তুর্কমেনিস্তানছবি: এএফসি

ড্রয়ের আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত পারল না বাংলাদেশ। তুর্কমেনিস্তানের কাছে হেরে গেল ২-১ গোলে। এই হার বাংলাদেশের জন্য হতাশার। ভালো খেলেও ফসল ঘরে তুলতে না পারার আক্ষেপেরও।

বাহরাইনের বিপক্ষে প্রথমার্ধে বাংলাদেশ প্রায় কোণঠাসা ছিল। কিন্তু আজ তুর্কমেনিস্তান বিপক্ষে ভিন্ন ছবি। আজ আর নিচে নেমে রক্ষণ নয়। পড়িমরি করে কোনোরকমে বল ক্লিয়ার করার তাড়াহুড়োও নেই। আজ তুলনামূলক ওপরে উঠে খেলার দিন। প্রতিপক্ষ পোস্টে শট নেওয়ার দিন।

৫৪ ধাপ এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের অ্যাটাকিং থার্ডে এসে পাস খেলার দিন। রক্ষণকে চিন্তায় ফেলার দিন। গোল খেয়ে দ্রুত গোল শোধ করার দিনও। কিন্তু শেষ দিকে অরক্ষিত রক্ষণ দ্বিতীয় গোলটা হজম করে দলকে ঠেলে দিয়েছে পরাজয়ের দিকে।

আরও পড়ুন
খুব দ্রুত গোল শোধ করেছিল বাংলাদেশ
ছবি: এএফসি

স্কোরলাইন একপাশে রেখে বলতেই হয়, আজ ইতিবাচক ফুটবল দেখা গেছে বাংলাদেশের ফুটবলারদের পায়ে। সমস্যা হয়েছে শুরুতে নিজেদের ওপর চাপ নিয়ে প্রতিপক্ষকে গোটা চারেক কর্নার দিয়ে ফেলা। পঞ্চম মিনিট থেকে অষ্টম মিনিটে টানা তিনটি কর্নার পেয়েছে তুর্কমেনিস্তান। তা থেকেই গোল হয়ে যায়। বক্সের ভেতর থেকে কোনাকুনি গড়ানো শটে ১-০ করেন ফরোয়ার্ড আনাদুরদায়েভ। অথচ এই গোলের জন্য তুর্কমেনিস্তানকে ঘাম ঝরাতে হয়নি। ভাঙতে হয়নি বাংলাদেশের রক্ষণ।

গোল খেয়ে ৪ মিনিটের মধ্যে যেভাবে ১-১ করেছে বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ বার্তাটা পেয়ে গেছে, ‘সাবধান।’ বাঁ দিক থেকে বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো থেকে পোস্টে হেড করেন রাকিব। সেই বল তুর্কমেনিস্তানের গোলকিপার ফেরালেও ফিরতি বল বাতাসেই ছিল। প্রায় গোললাইনের কাছে দাঁড়ানো ইব্রাহিম হেডে বল জালে পাঠান।

হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে পঞ্চম ম্যাচে এসে আজ প্রথম গোলের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর আগের চার ম্যাচের ফল মালদ্বীপ ০-২, মঙ্গোলিয়া ০-০, ইন্দোনেশিয়া ০-০ এবং বাহরাইন ০-২।

আরও পড়ুন

বাহরাইন ম্যাচের ৪-১-৪-১ ছক আজও ধরে রাখেন কোচ কাবরেরা। একাদশে আনেননি কোনো পরিবর্তন। চার ডিফেন্ডারের সামনে রক্ষণপর্দা হয়ে ছিলেন ফাহাদ। জামাল ছিলেন মাঝমাঠে। রক্ষণে চাপ কম পড়ায় জামাল সুযোগ পেয়েছেন ওপরে এসে পাস বাড়াতে। কয়েকটি বলও তিনি বাড়িয়েছেন সামনে।

তবে ভয় হচ্ছিল বাংলাদেশ যেভাবে কর্নার দিচ্ছিল, তাতে না তুর্কমেনিস্তান দ্বিতীয় গোলটা করে ফেলে। কারণ, বাতাসে ভাসা বলগুলো বেশির ভাগই পাচ্ছিল উচ্চতায় লম্বা তুর্কমেনিস্তানের ফুটবলাররা।

একই সঙ্গে বাংলাদেশ শিবিরে আশাও জাগছিল দ্বিতীয় গোলের। ৪২ মিনিটে তো গোল প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। পাল্টা আক্রমণে রাকিবের গোলমুখে বাড়ানো বল সাজ্জাদ যাওয়ার আগেই অফসাইডের ফাঁদে পড়ে যান।

আরও পড়ুন
দারুণ খেলেছেন বিশ্বনাথ
ছবি: এএফসি

নবাগত সাজ্জাদকে দেখে মনে হলো, আন্তর্জাতিক ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাঁর সময় লাগবে। তাঁর জায়গায় অভিজ্ঞ কোনো স্ট্রাইকার থাকলে বাংলাদেশ আজ আরও অন্তত গোটা দুই গোল পেতে পারত। সাজ্জাদের শারীরিক সামর্থ্য ও দম কম হওয়ায় ভালো জায়গায় বল পেয়েও কিছু করতে পারেনি। তুর্কমেনিস্তানের ডিফেন্ডারা তাঁকে সহজেই সামলান।

৪৮ মিনিটে রাকিব বাঁ দিক থেকে ঢুকে বক্সে বল দেন সাজ্জাদকে। কিন্তু সাজ্জাদ জায়গা বানাতে পারলেন না শট নেওয়ার। রাকিব বল নেওয়ার সময়ই সাজ্জাদকে কোচ নির্দেশ দিয়েছিলেন দ্রুত যাওয়ার। কিন্তু সাজ্জাদ পারলেন না। এরপর ইব্রাহিমের ক্রসে একটা হেড অবশ্য নিতে পেরেছেন, তবে সেটা যায় বাইরে। পোস্টে থাকলে গোল হতে পারত।

ইব্রাহিম তখনই চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন। বদলি নামেন ফয়সাল আহমেদ। ফয়সাল এসে তুর্কমেনিস্তানের রক্ষণে একটা ছোটখাটো ঝাঁকুনি দেন। দ্রুতগতিতে বল নিয়ে ঢোকেন কয়েকবার। একবার তাঁর শট কোনোভাবে আটকান তুর্কমেনিস্তানের গোলকিপার। এর আগেই অবশ্য সাজ্জাদের জায়গায় মাঠে পাঠানো হয় মাহবুবুর রহমানকে।

আরও পড়ুন
শেষ পর্যন্ত পারেনি বাংলাদেশ
ছবি: এএফসি

পাল্টা আক্রমণে যে গোল খেতে পারে, সেই হুঁশ ছিল না বাংলাদেশের। তাই ভালো খেলতে খেলতেই আবার নিরাশা। দ্বিতীয় গোল খেয়ে গেল বাংলাদেশ। ৭৭ মিনিটে বাঁ দিক থেকে বক্সে আসা বল সহজেই জালে পাঠান বদলি ফরোয়ার্ড আমানভ। ডিফেন্ডাররা তখন জায়গামতো নেই।

এই গোলের পর কুয়ালালামপুরের বুকিত জলিল স্টেডিয়ামে নামে ঝুমবৃষ্টি । তার মধ্যেই বাংলাদেশ ২-২ প্রায় করেই ফেলেছিল। একসঙ্গে দুজন খেলোয়াড় বল জালে ঠেলতে গিয়ে কেউই পারলেন না। শেষ মিনিট বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো দিয়ে বক্সে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গোল আর ধরা দেয়নি। উল্টো শেষ মিনিটে আবার বাংলাদেশের জালে বল পাঠায় তুর্কমেনিস্তান। অফসাইডের কারণে সেটি গোল হয়নি।

তাতে কি, ততক্ষণে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশের ভাগ্যে টানা দ্বিতীয় পরাজয় লেখা হয়ে গেছে। জয় না হোক, আজ অন্তত ড্র পেতেই পারত বাংলাদেশ। উল্টো হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়লেন ফুটবলাররা।

আরও পড়ুন