কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকাই। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ ১১ জুলাই। ইউরোতে অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।
১৯৮২ ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপ, ১৯৮৪ ইউরো। ১৯৮৮ সালে নেদারল্যান্ডস যখন ইউরো জিতল, আগের আট বছর আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় ঠাঁই পায়নি ‘টোটাল ফুটবল’-এর ধারক-বাহকেরা। চাইলে ইতিহাস পুনরাবৃত্তির আশা করতে পারেন ভাইনালডম-ডিপাইরা। এবার ইউরো খেলতে যাওয়া নেদারল্যান্ডস সাত বছর ধরে কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেই সুযোগ পায়নি!
২০১৬ ইউরো ও ২০১৮ বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া নেদারল্যান্ডস রোনাল্ড কোমানের অধীন নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছিল বেশ। বার্সেলোনার টানে কোমান গত বছর চলে গেলেও ইউরোজয়ী সাবেক এই ডিফেন্ডারের জায়গায় এসেছেন ফ্রাঙ্ক ডি বোর। খুব বেশি কিছু বদলাননি। কোমানের দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরে ডাচদের ইউরোতে নিয়ে যাচ্ছেন ডি বোর। এর মধ্যে ২৬ সদস্যের দলও ঘোষণা করে দিয়েছেন।
দল: নেদারল্যান্ডস
ফিফা র্যাঙ্কিং: ১৬
দলে আছেন যাঁরা
গোলরক্ষক
টিম ক্রুল (নরউইচ সিটি), মার্কো বিজোত (এজেড আলকমার), মার্তেন স্তেকেলেনবার্গ (আয়াক্স)
সেন্টারব্যাক
ম্যাটাইস ডি লিখট (জুভেন্টাস), স্তেফান ডি ভ্রেই (ইন্টার মিলান), নাথান আকে (ম্যানচেস্টার সিটি), ডেলি ব্লিন্ড (আয়াক্স), জোয়েল ভেল্টম্যান (ব্রাইটন), ইউরিয়েন তিম্বার (আয়াক্স)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
ডেনজেল ডামফ্রাইজ (পিএসভি)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
প্যাট্রিক ফন আনহল্ট (ক্রিস্টাল প্যালেস), ওয়েন উইনদাল (এজেড আলকমার)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
জর্জিনিও ভাইনালডম (লিভারপুল), ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং (বার্সেলোনা), মার্টেন ডে রুন (আতালান্তা), দাভি ক্লাসেন (আয়াক্স), তিউন কুপমাইনার্স (এজেড আলকমার)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
রায়ান গ্রাভেনবার্চ (আয়াক্স), কুইন্সি প্রমেস (স্পার্তাক মস্কো)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
স্টিভেন বের্গুইস (ফেইনুর্ড), কোডি গাকপো (পিএসভি)
স্ট্রাইকার
ভাউট ভেগহর্স্ট (ভলফসবুর্গ), লুক ডি ইয়ং (সেভিয়া), মেমফিস ডিপাই (অলিম্পিক লিওঁ), দনিয়েল মালেন (পিএসভি)
কোচ
ফ্রাঙ্ক ডি বোর
অধিনায়ক
জর্জিনিও ভাইনালডম
ইউরোতে সেরা সাফল্য
চ্যাম্পিয়ন (১৯৮৮)
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
ইউক্রেন (১৩ জুন)
অস্ট্রিয়া (১৭ জুন)
উত্তর মেসিডোনিয়া (২১ জুন)
শক্তি
নেদারল্যান্ডসে সবচেয়ে বড় শক্তি—বেশ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের উপস্থিতি। রক্ষণে ডি লিখট, উইনদাল, মাঝমাঠে ডি ইয়ং, কুপমাইনার্স, গ্রাভেনবার্চ, আক্রমণে মালেন; এই ইউরোতে সবচেয়ে বেশি তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় নিয়ে গড়া দলগুলোর একটি নেদারল্যান্ডস। সঙ্গে ভাইনালডম, ডিপাই, ডি ভ্রেই, ডে রুনদের মতো অভিজ্ঞরা তো আছেনই।
দুর্বলতা
দলের মূল অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক নেই দলে। এ খবর নেদারল্যান্ডসের জন্য দুই দিক দিয়ে নেতিবাচক। শুধু অসাধারণ একজন সেন্টারব্যাক হারাচ্ছে না, নেতৃত্বগুণের অভাবও ভোগাবে ডাচদের। মূল গোলরক্ষক ইয়াসপার চিলেসেনের না থাকাটাও চিন্তার কারণ। এই দুজন না থাকার কারণে ‘টোটাল ফুটবল’-এর নির্যাস অনুযায়ী একদম পেছন থেকে আক্রমণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বেশ ভুগবে ডাচরা।
গত দুই বছরে নেদারল্যান্ডসের দুর্দান্ত ফর্মের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল রোনাল্ড কোমানের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক। অনেক ম্যাচে নেদারল্যান্ডস পিছিয়ে পড়লেও পরে কোমানের কৌশলী মস্তিষ্কের কারণে ম্যাচ জিতে এসেছে ডাচরা। আয়াক্সের হয়ে একাধিকবার লিগজয়ী ফ্রাঙ্ক ডি বোর এখনো ওভাবে ম্যাচে প্রভাব রাখতে পারার উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেননি। ডি বোর নিজের শেষ তিন চাকরি থেকেই ছাঁটাই হয়েছেন, তাই ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখে নেদারল্যান্ডস ভয় পেলেও দোষ দেওয়া যায় না।
মূল একাদশের অনেক খেলোয়াড়ের কোনো যোগ্য বিকল্প নেই। ডিপাই, ডি ইয়ং, ডি ভ্রেই কিংবা ভাইনালডমদের কিছু হয়ে গেলে বিকল্প হিসেবে একই মানের পারফর্ম করার জন্য দলে কে আছেন, প্রশ্ন তোলাই যায়।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৪-৩-৩/৫-৩-২)
নেদারল্যান্ডসের এই দলের ছক মূলত দুটি। দুর্বল দলের বিপক্ষে ৪-৩-৩, অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দলের বিপক্ষে একজন বাড়তি ডিফেন্ডার নিয়ে ৫-৩-২ বা ৩-৫-২।
৪-৩-৩ ছকে মূল গোলকিপার ক্রুলের ওপরে দুই সেন্টারব্যাক হিসেবে থাকবেন ডি লিখট ও ডি ভ্রেই, রাইটব্যাক ডামফ্রাইজ ও লেফটব্যাক উইনদাল। মাঝমাঠে ডি ইয়ং ডিপলায়িং মিডফিল্ডার হিসেবে পেছন থেকে প্রেস কাটিয়ে বল বের করে দেওয়া, সামনে নিখুঁতভাবে বল পাঠানো—এসব কাজ করবেন। লিভারপুলের হয়ে রক্ষণাত্মক ভূমিকায় দেখা গেলেও ডাচ দলে আক্রমণের লাইসেন্স দেওয়া হয় ভাইনালডমকে।
ফন ডাইকের অনুপস্থিতিতে দলের অধিনায়কত্ব পালন করা ভাইনালডম আক্রমণাত্মক ভূমিকাতেই খেলবেন। এখন ডি বোর দলকে আক্রমণাত্মক খেলাতে চান না রক্ষণাত্মক, তার ওপর নির্ভর করে মাঝমাঠের বাকি খেলোয়াড় নির্বাচিত হবেন। বাড়তি আক্রমণ চাইলে দাভি ক্লাসেন, একটু রয়েসয়ে খেলতে চাইলে আতালান্তার ডি রুন। সামনে বড় দলের বিপক্ষে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানো হবে ডিপাইকে, তাঁর চতুর মুভমেন্ট ও গতি দিয়ে বড় দলকে হারানোর কৌশল থাকবে ডি বোরের। ডিপাইয়ের দুই দিকে খেলবেন মালেন, কুইন্সি প্রমেস ও স্টিভেন বের্গুইসের মধ্যে যেকোনো দুজন।
দুর্বল দলের বিপক্ষে খেলা পড়লে ডিপাইকে বাঁ দিকে রেখে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানো হবে সেভিয়ার ‘নাম্বার নাইন’ লুক ডি ইয়ংকে। তখন আরেক উইঙ্গার হিসেবে থাকবেন বের্গুইস ও প্রমেসের মধ্যে যেকোনো একজন।
৩-৫-২ ছকে ডি লিখট ও ডে ভ্রাইয়ের পাশাপাশি বাঁ দিকের সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলানো হবে হয় আয়াক্সের ডেলেই ব্লিন্ড, নাহয় ম্যানচেস্টার সিটির নাথান আকেকে। সে ক্ষেত্রে মাঝমাঠ থেকে ডে রুনকে উঠিয়ে দেওয়া হবে।
সাত থেকে আটটি দলের ইউরো জেতার সামর্থ্য আছে এবার। আমরা যদি সেমিফাইনালে উঠতে পারি, আমি সেটাকেই বেশ ভালো ফলাফল হিসেবে মনে করব
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
নেদারল্যান্ডসের এই দলে দুর্দান্ত কিছু তরুণ ফুটবলার আছেন সন্দেহ নেই। কিন্তু ফন ডাইক, চিলেসেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতি দলটাকে ভোগাতে পারে। শিরোপার আশা হয়তো করছে না নেদারল্যান্ডস, সব দিক বিবেচনায় কোনোরকমে সেমিফাইনালে উঠতে পারলেই তৃপ্ত হতে পারে দলটি।