বেনজেমার গোলটি কেন অফসাইডে বাতিল হলো

বেনজেমার এই গোলই বাতিল হয়েছেছবি: রয়টার্স

প্যারিসে কাল পাগলাটে অনেক কিছু ঘটেছে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের মতো বড় ইভেন্ট আয়োজনের সম্মান পেয়েও সেটা প্রায় লেজেগোবরে করে ফেলেছে প্যারিস। স্তাদ দে ফ্রান্সে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা দর্শকদের অযথা হেনস্তায় ফেলে দিয়েছিল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল সঠিক সময়ে শুরু করা যায়নি কাল। ৩৬ মিনিট পর শুরু হওয়া ম্যাচে এর চেয়েও গোলমেলে ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুন

প্রথমার্ধে পুরোটাই দাপট দেখিয়েছে লিভারপুল। এর মাঝেই ৪৩ মিনিটে একটা গোল করে বসেন করিম বেনজেমা। কিন্তু সে গোল অফসাইডে বাতিল করা হয়। বহুক্ষণ দেখে ভিএআরও সেটা অফসাইড বলেই জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দর্শক থেকে বিশ্লেষক—অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারেননি কেন সে গোল অফসাইডে বাতিল হয়েছে।

সেই মুহূর্ত
ছবি: টুইটার

৪৩ মিনিটে মাঝমাঠের একটু সামনে থেকে থ্রু বল পাঠিয়েছিলেন ডেভিড আলাবা। সেটা লিভারপুল রক্ষণকে বোকা বানিয়ে বক্সে খুঁজে পায় করিম বেনজেমাকে। চমৎকারভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আলিসন বেকারকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন বেনজেমা। কিন্তু এরপরই বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। শেষ মুহূর্তে বলটা সতীর্থ কেউ পাবে, এই আশায় পাস দেন। কিন্তু সে বল বুঝে নেওয়ার মতো কেউ ছিল না। আলিসন বলটা ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন। ইব্রাহিমা কোনাতেও ছিলেন, ওদিকে ফাবিনিও সাহায্য করতে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

এর মধ্যেই ফেদে ভালভার্দে এগিয়ে এসেছেন। তালেগোলে বলটা ঠিকই বেনজেমার কাছে চলে গেল, এবার ঠিকই বল জালে জড়ান ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। কিন্তু লাইন্সম্যান অফসাইডের ফ্ল্যাগ উঁচিয়ে ধরেন।

এ ব্যাপারে ম্যাচের বিরতিতে বিশ্লেষণে কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘অফসাইডের নিয়মে আছে আক্রমণে থাকা খেলোয়াড় যদি গোলকিপারের সামনে থাকা শেষ ডিফেন্ডারের চেয়ে এগিয়ে না থাকেন তবে অফসাইড হবে না।’ কিন্তু যদি কোনো কারণে গোলকিপার তাঁর দলের দুজন খেলোয়াড়ের চেয়ে এগিয়ে যান, সে ক্ষেত্রে গোলকিপারের অবস্থান আর গুরুত্বপূর্ণ থাকে না। সে ক্ষেত্রে শেষ দুই রক্ষণাত্মক খেলোয়াড়ের অবস্থানই গুরুত্বপূর্ণ। এবং সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডিফেন্ডারের চেয়ে এগিয়ে থাকলেই অফসাইড।

ফাইনালে আরেকটি গোল পাওয়া হলো না বেনজেমার
ছবি: রয়টার্স

কাল বল যখন বেনজেমার কাছে যায় তখন অ্যান্ডি রবার্টসন ছিলেন সবচেয়ে পিছিয়ে, ওদিকে বেনজেমার সঙ্গে প্রায় একই লাইনে ছিলেন ভার্জিল ফন ডাইক। বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল ফন ডাইকের চেয়েও পিছিয়ে থাকায় গোলটা অফসাইড বলে বাতিল হয়েছে।

কিন্তু পরে জানা যায়, এই কারণে বাতিল হয়নি সে গোল। বরং অফসাইডের আইনের ১১.২ ধারা এখানে প্রযোজ্য হয়েছে। ধারায় লেখা হয়েছে, ‘অফসাইডে থাকা একজন খেলোয়াড় যদি প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল পায়, যা ইচ্ছাকৃতভাবে পাঠানো হয়েছে, তাহলে আর সুবিধা গ্রহণ (অফসাইডে থাকার) করা হয়েছে বলে ধরা হবে না।’

আরও পড়ুন

কাল ওই জটলা থেকে বলটা ফাবিনিওর পা হয়ে বেনজেমার কাছে এসেছিল। তাই বেনজেমার পেছনে কজন আছে, সেটা আর গণ্য হতো না। কিন্তু ফাবিনিও বলটা নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় পারেননি, জটলার মধ্যে ভালভার্দের পায়ের ছোঁয়া নিয়ে তা ফাবিনিও হয়ে এসেছে, অর্থাৎ অনিচ্ছাকৃত স্পর্শ ছিল সেটি। এ কারণেই এটা অফসাইড বলে ধরা হয়েছে।

নিয়মটা বেশ জটিল, সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা বোঝা কঠিন। এমনকি সাবেক খেলোয়াড় হয়ে জন টেরিও বুঝতে পারছিলেন না এই অফসাইডের নিয়ম। টুইটে সাবেক ইংলিশ ডিফেন্ডার লেখেন, ‘এটা কীভাবে গোল হলো না? আমি খুশি যে পিটার ওয়ালটন (সাবেক রেফারি) ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছেন। এই নিয়মের কোনো মানেই হয় না, কারণ, একজন লিভারপুল খেলোয়াড় কখন নিজ ইচ্ছায় বেনজেমাকে বল দিতে যাবে? যেহেতু লিভারপুল খেলোয়াড়ের পা থেকে বল এসেছে, তার মানেই তো এটা নিশ্চিত গোল?’

ইচ্ছাকৃত শব্দটার ব্যাখ্যা হয়তো বুঝতে পারেননি টেরি। অবশ্য চেলসি-অতীত থাকায় লিভারপুলের কোনো ধরনের সুবিধা পাওয়া মেনে নিতেও হয়তো আপত্তি আছে টেরির।

আরও পড়ুন