মাতাল হয়ে রিয়াল মাদ্রিদের অনুশীলনে যেতেন ব্রাজিল তারকা

জিদান, বেকহাম ও রামোসদের সঙ্গে চিচিনিওছবি : টুইটার

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ব্রাজিল থেকে বেশ কিছু ফুলব্যাক আলো ছড়িয়ে ইউরোপে পাড়ি দিয়েছিলেন। রবার্তো কার্লোস ও কাফু তো বটেই, মাইকন, দানি আলভেজ, মার্সেলোদের মতো ফুলব্যাকদের উত্থানটাও এই সময়েই। ফলে ব্রাজিল থেকে তরুণ প্রতিভাবান ফুলব্যাক তুলে আনলেই সফলতার মুখ দেখা যাবে, ইউরোপের বড় বড় ক্লাব এমনটা ভাবা শুরু করে দিয়েছিল।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডই যেমন যমজ ভাই রাফায়েল দা সিলভা ও ফাবিও দা সিলভাকে দলে টেনেছিল। আর্সেনালে এসেছিলেন আন্দ্রে সান্তোস, লিভারপুলে ফাবিও অরেলিও। ম্যাক্সওয়েল ছিলেন ইন্টার মিলান ও পিএসজিতে।

আরও পড়ুন

লেফটব্যাকে রবার্তো কার্লোসের উত্তরসূরি হিসেবে মার্সেলোকে দলে টানা রিয়াল মাদ্রিদ রাইটব্যাক হিসেবেও তরুণ এক ব্রাজিলিয়ানকে কিনে এনেছিল। সাও পাওলো থেকে ২০০৬ সালে রিয়ালে আসা সেই রাইটব্যাকের নাম ছিল চিচিনিও, যাঁর জন্য প্রায় ৫০ লাখ ইউরো খরচ করেছিল রিয়াল।

কিন্তু সব ব্রাজিলিয়ানই যে কাফু-কার্লোস হন না, সেটার উদাহরণ এই চিচিনিও। রিয়ালের বিত্তবৈভব ও আয়েশি জীবনযাপনে মাথা ঘুরে যাওয়া এই ডিফেন্ডার ফর্ম হারিয়ে ফেলেন খুবই তাড়াতাড়ি। এক বছরের বেশি টিকতে পারেননি সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। সে এক বছর কী কী করেছেন, সম্প্রতি সেটাই জানিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যম গ্লোবোএস্পোর্তের সিরিজ রেসাকাতে। লাগামছাড়া মদ পানের অভ্যাস রিয়াল ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছিল তাঁর। শুধু তা–ই নয়, মাতাল হয়ে অনুশীলনেও যেতেন এই ব্রাজিলিয়ান।

রিয়ালে চিচিনিওর সঙ্গে যেসব ব্রাজিলিয়ান খেলতেন
ছবি : টুইটার

গ্লোবোএস্পোর্তের ইপিটিভি প্রযোজিত এই সিরিজ মদ পানের কুফল নিয়েই। রেসাকার শেষ পর্বে হাজির হয়েছিলেন চিচিনিও। মদ তাঁকে কীভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে, সেটাই ব্যাখ্যা করেছেন এই ৪১ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে মদ পান শুরু করা এই ফুটবলার অবশ্য গত ১০ বছর সুরা স্পর্শ করেননি। জিদান, বেকহাম, ফিগো, রোনালদো, রাউলদের এই সতীর্থ জানিয়েছেন, মদ পানের নেশায় এতটাই বুঁদ ছিলেন, যে মদ খেয়েই অনুশীলনে যোগ দিতেন সকাল সকাল।

আরও পড়ুন

তবে সতীর্থ বা কোচরা যেন না বুঝতে পারেন তাঁর মদ্য পানের ব্যাপারে, সেটা নিয়েও তাঁর উদ্যোগের কমতি ছিল না, ‘আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে আমি মদ পান করে অনুশীলনে গিয়েছিলাম কি না, আমি “হ্যাঁ” বলব। মদ খাওয়ার পর মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য কফি খেতাম, আর শরীর থেকে যেন মদের গন্ধ না পাওয়া যায়, সে জন্য সুগন্ধি দিয়ে গোসল করতাম। পেশাদার ফুটবলার হওয়ার কারণে আমার জন্য মদ পাওয়াটা সহজ ছিল, রেস্তোরাঁয় গেলে মদ পান করার জন্য কেউ টাকা নিত না আমার কাছ থেকে। যত খুশি মদ পান করতাম।’

আরও পড়ুন

মদের সঙ্গে সেই ছোটবেলা থেকেই গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন চিচিনিও, ‘১৩ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো মদ পান করি, আর থামিনি। প্রাদ পোলিসের অঞ্চলের মফস্বল এক শহরে থাকতাম, রিবেইরো প্রেতোর পাশে, সপ্তাহান্তে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হতো। তখনই সবাই মিলে ক্লাবে গিয়ে মদ পান করতাম। যেহেতু অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলাম, বড় কাউকে দিয়ে মদ কেনাতাম, সেটা লুকিয়ে লুকিয়ে পান করতাম, যাতে মা–বাবা বা পুলিশ না ধরতে পারে।’

রবার্তো কার্লোসের সঙ্গে চিচিনিও
ছবি : টুইটার

চিচিনিওর অবস্থা দেখে এক বছরের বেশি দলে রাখেনি রিয়াল। এই রাইটব্যাক পরে পাড়ি জমান ইতালিতে, এএস রোমার হয়ে খেলার জন্য। সেখানেও মদের সঙ্গ ছাড়তে পারেননি, ‘অনুশীলনের পর মদ পান করতাম। বেলা দুইটা-আড়াইটা থেকে শুরু করে ভোররাত চারটা পর্যন্ত মদ পান করতাম। প্রত্যেকবার মদ পান করে রোমার অনুশীলনে আসার পর ক্লাবের কোনো না কোনো কর্তার সঙ্গে দেখা হয়ে যেত। আর ঝগড়াঝাঁটি শুরু হতো।’

ব্রাজিলের হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলেছেন এই ফুলব্যাক। খেলেছেন ২০০৫ সালের কনফেডারেশনস কাপ, ২০০৬ বিশ্বকাপ। কিন্তু যে প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে রিয়ালে নাম লিখিয়েছিলেন, সে ঝলক আর তাঁর পায়ে দেখা যায়নি পরে।