২০ বছর পর এমন কিছু দেখল বাংলাদেশের ক্রিকেট

এ বছর মাত্র ৯টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ।ফাইল ছবি: প্রথম আলো

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফি তখনো মাত্র দুটি ছিল। ব্রাজিল, ইতালি ও জার্মানির ফুটবল বিশ্বকাপের সংখ্যা দিয়ে তো ফুটবল মাঠের ফরমেশনও (৪-৩-৩) বানানো যেত। মেসি-ক্রিস্টিয়ানোদের নাম তখনো শোনেনি কেউ। রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল কিংবা নোভাক জোকোভিচদের গ্র্যান্ড স্লাম জেতানোকে তখনো মুড়িমুড়কি বানানো হয়নি। ফর্মুলা ওয়ান মানে তখনো মাইকেল শুমাখার। ক্যানসার থেকে ফেরা ল্যান্স আর্মস্ট্রং মাত্রই ট্যুর ডি ফ্রান্স জিতে কিংবদন্তি হয়েছে। তাঁর গায়ে কালি লাগার কথা তখনো চিন্তা করা যায়নি।

সময়টা ২০০০। ক্রিকেট দুনিয়ায় বাংলাদেশ তখনো উঠতি শক্তি। টেস্ট ক্রিকেটেও হাতেখড়ি হয়ে গেছে এবং সেবারই এমন কিছু দেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। সেবারই সর্বশেষ পুরো বছরে দশটিও ম্যাচ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর সে বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একদমই ব্যস্ত ছিল না বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে হওয়া এশিয়া কাপের তিনটি ম্যাচের পর আইসিসি নকআউট টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচ। ব্যস, এ চারটি ম্যাচ খেলেই প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক ওই টেস্ট দিয়েই সে বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ পর্ব শেষ হয়েছিল।

আরও পড়ুন

এর পর গত ১৯ বছরে বাংলাদেশ দল যে সব সময় ব্যস্ত ছিল এমনটা নয়, কিন্তু প্রতিবছর অন্তত সব সংস্করণ মিলিয়ে ১০টা ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু ২০২০ সালে এর ব্যতিক্রম হলো। করোনাভাইরাস নামক বৈশ্বিক মহামারি এ বছর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ব্যস্ততাকে দুইটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও চারটি টি-টোয়েন্টিতে আটকে দিয়েছে। অর্থাৎ এ বছর মাত্র নয়টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ।

এবার দুটি টেস্ট খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে মুশফিকদের।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি হয়নি এবার। এ ছাড়া করোনার কারণে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। তিন বছর পর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। সে যাত্রাও পেছাতে হয়েছে। এপ্রিলে এক টেস্ট ও এক ওয়ানডের অদ্ভুত সূচিটাও আলোর মুখ দেখেনি। জানুয়ারিতেই পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দারুণ ব্যস্ততার এক সূচি হঠাৎ করেই ফাঁকা হয়ে গেছে বাংলাদেশের। ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফিটনেস ধরে রাখতে বাধ্য হয়ে টানা দুটি ঘরোয়া টুর্নামেন্টের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

আইসিসির পূর্ণ সদস্য হওয়া বাংলাদেশ ২০০০ সালেই যে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলেছে, সেটা তো আগেই বলা হয়েছে। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলার রেকর্ডটিও ২০০০ সালেরই। ১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রাপ্তির বছরে ৭টি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক জয় পাওয়ার বছরে ম্যাচ সংখ্যা এক কমে এসেছিল। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ বাংলাদেশকে প্রথম বছরে দশটি ম্যাচ খেলার স্বাদ এনে দিয়েছিল। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলতে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ম্যাচ খেলেছিল পাকিস্তান। এরপর জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজের আয়োজন করে কোনো জয় না পেলেও প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির দেখা অন্তত পেয়েছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজও বাংলাদেশের টেস্ট প্রস্তুতির পরীক্ষা নিতে এসেছিল। ফলে বেশ ব্যস্ত একটা বছরই কেটেছিল বাংলাদেশের।

১১ মার্চের এই টি-টোয়েন্টিই ২০২০ সালে বাংলাদেশের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

২০০০ সালই ব্যতিক্রম, এরপর থেকে বাংলাদেশের ব্যস্ততা কখনো খুব একটা কমেনি। ২০০২ সালেই ১৪টি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। আর ২০০৩ বিশ্বকাপ একরাশ হতাশা উপহার দিলেও সে বছর বাংলাদেশ অনেক ব্যস্ত ছিল। ৩০টি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। গত দেড় দশকে মাত্র একবার ২০টির কম ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, ২০১৩ সালে। শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েতে সফর শেষে নিউজিল্যান্ডকে আতিথ্য দেওয়া সে বছরে ১৯টি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ।

উল্টো দিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততা ছিল ২০১৮ সালে। সেবার ৪৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন মাশরাফি-সাকিবরা। ব্যস্ততার দিক থেকে এরপরই আছে ২০০৮ ও ২০১০ সাল। এ দুই বছর ৩৭টি করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ।

২০২০ সালটাও ব্যস্ততায় কাটানোর কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মহামারি সেটা হতে দেয়নি। ২০২১ সালে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত হবে বাংলাদেশ। জানুয়ারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়েই শুরু হয়ে যাবে সেটা। ব্যস্ত দুই দশকে তাই ব্যতিক্রম হয়েই থাকবে এ বছর। তবে এমন হতাশার মধ্যেও একটি উজ্জ্বল দিক চাইলে খুঁজে নেওয়া যায়। এ বছর খেলা নয়টি ম্যাচের ছয়টিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া সেই ছয় জয়ে বছর শেষে জয়–পরাজয়ের অনুপাত এবার ২: ১। জয়–পরাজয়ের এত ভালো অনুপাত নিয়ে বাংলাদেশ কখনো বছর শেষ করতে পারেনি!