পেলে-মেসি-স্টোকসদের স্মারক, সই করা জার্সি বিক্রি করে কোটিপতি তিনি

নিজের সংগ্রহশালায় পিটার জনসনছবি : টুইটার

তাঁর সংগ্রহশালা দেখলে ‘স্মারক সাম্রাজ্য’ মনে হবে। পেলে, স্টিভ ওয়াহ, কাকা, লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, বিরাট কোহলি, বেন স্টোকস—কার স্বাক্ষরিত জার্সি কিংবা স্মারকচিহ্ন নেই তাঁর কাছে!

স্মারক সংগ্রহের নেশা পেয়ে বসা মানুষটির নাম পিটার জনসন। ইংল্যান্ডের উস্টারশায়ার থেকে উঠে আসা জনসনের একসময় ১৩ লাখ টাকা দেনা ছিল। সেই তিনি এখন কোটিপতি।

নিজের সংগৃহীত ক্রীড়া স্মারক দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন জনসন। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ফার্মা স্টিলা’। কিংবদন্তি ও তারকা ক্রীড়াবিদদের স্বাক্ষরিত জার্সি, বল, স্কার্ফ, ছবি ছাড়াও আরও অনেক সামগ্রী বিক্রি করে ‘ফার্মা স্টিলা’। প্রতিষ্ঠানটিতে তাঁর অধীনে কাজ করেন ১২ জন কর্মী।

ক্রীড়া স্মারক সংগ্রহ করে চড়া দামে বিক্রির ভূত কীভাবে মাথায় চেপে বসল, সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে সে গল্প শুনিয়েছেন জনসন। জানিয়েছেন, ৯ বছর বয়সে থাকতে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর স্বাক্ষর নিতে পেরেছিলেন।

বেন স্টোকসের সঙ্গে ‘ফার্মা স্টিলা’র কর্ণধার পিটার জনসন
ছবি : টুইটার

স্মারক সংগ্রহের পর বিক্রি করতে শুরু করেন কৈশোরে, ‘কিশোর বয়সে থাকতেই পত্রিকা বিক্রি বাদ দিয়ে আমি খেলোয়াড়দের অটোগ্রাফ ও জার্সি সংগ্রহ করতে শুরু করি। তখন থেকেই বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরছি। ফর্মুলা ওয়ান দেখতে এশিয়ায় গিয়েছিলাম, রাগবি বিশ্বকাপ দেখতে জাপানে, ম্যানচেস্টার সিটির প্রাক্‌–মৌসুম প্রস্তুতির সফরেও ছিলাম। এগুলো করতে গিয়ে একসময় ১৩ লাখ টাকা ধার করেছিলাম। এখন আমি কোটিপতি। মাত্র সাড়ে ৪ বছরেই।’

আরও পড়ুন

জনসনের বিপণিবিতানে দক্ষিণ আফ্রিকা রাগবি দলের অধিনায়ক সিয়া কোলিসি ও লিভারপুলের মিসরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহর সঙ্গে তাঁর ছবি আছে। তবে রোনালদো ও মেসির সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্ত দুটি তাঁর মনে সবচেয়ে রোমাঞ্চ ছড়ায়, ‘মনে আছে (চ্যাম্পিয়নস লিগে) রিয়াল মাদ্রিদ–ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচ ছিল। রোনালদোরা কয়টার ফ্লাইটে আসছেন, আগেই জেনে নিই। বিমানবন্দর থেকে হোটেল পর্যন্ত তাঁদের বাস অনুসরণ করি। রোনালদো যে হোটেলে ছিলেন, সেখানেই কক্ষ ভাড়া নিই।’

এর পরের গল্পটাও শুনুন জনসনের মুখে, ‘হোটেলের দোতলায় রোনালদোদের কক্ষ ছিল। হঠাৎ দেখলাম, পুরো দল ওপর তলায় আসছে। আমি দ্রুত লিফটের সামনে দাঁড়াই। লিফট খুলতেই দেখি রোনালদো আমার সামনে। তাঁকে দেখে আমি লাফিয়ে উঠি। আমাকে দেখার পর রোনালদোর অভিব্যক্তি বিদঘুটে ছিল। তবে তিনি আমার বেশ কয়েকটি জার্সিতে স্বাক্ষর করেছেন।’

জনসনের প্রতিষ্ঠান ‘ফার্মা স্টিলা’র সংগ্রহে এখনো রোনালদোর বেশ কয়েকটি জার্সি আছে
ছবি : টুইটার

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির স্বাক্ষরিত জার্সির কদর বেড়েছে। এখন আর মেসির কোনো জার্সিই জনসনের সংগ্রহে নেই। পিএসজি তারকার স্মারক জোগাড় করতে নাকি বড় ঝুঁকি নিতে হয়েছিল তাঁকে, ‘মেসি তখন বার্সায় খেলতেন। তাঁর জার্সি সংগ্রহ করতে আমি বার্মিংহাম থেকে বার্সেলোনায় গিয়েছিলাম। বিমানবন্দরে নেমেই জানতে পারি, বার্সা দল এখানেই আছে। টার্মিনালে প্রবেশ করতে আমি জাল ফ্লাইট বুকিং দিয়েছিলাম। ভেতরে ঢুকতেই দেখি মেসি, নেইমার ও সুয়ারেজ নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছেন। তবু সাহস করে তাঁদের কাছে যাই। তাঁরা তিনজনই আমার জার্সিতে অটোগ্রাফ দেন।’

আরও পড়ুন

জনসন জানিয়েছেন, নিয়মিত কিংবদন্তি ও তারকা খেলোয়াড়দের কাছে যেতে পারা তাঁর দীর্ঘ গবেষণার ফল। দল কিংবা খেলোয়াড়েরা কখন–কোথায় থাকবেন, সবার আগে সেটা জানার চেষ্টা করেন এই ক্রীড়াপ্রেমী, ‘আমি ঝুঁকি নিই এবং বেশির ভাগ সময় এটা কাজে দেয়। মাঝে মাঝে একটু এদিক–সেদিক হয়ে যায়। তবে সাধারণত সফল হই।’

‘ফার্মা স্টিলা’য় জনসনের অধীনে কাজ করেন ১২জন কর্মী
ছবি : টুইটার

এখন পর্যন্ত একবারই ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে জনসনের দেশ ইংল্যান্ড—সেই ১৯৬৬ সালে। সেই দলের জার্সি এখনো ইংলিশদের কাছে পরম গৌরবের প্রতীক।

তেমনই একটি জার্সি বিক্রি করে জনসন সর্বোচ্চ ১৩ লাখ টাকা আয় করেছেন। ‘ফার্মা স্টিলা’র ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, মেসি-কোহলি-হ্যারি কেইনদের স্বাক্ষরিত জার্সি ৫০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রির অফার দিয়েছে তারা। আর জনসনের বিপণিবিতানে এখনো রোনালদোর স্বাক্ষরিত ৪টি জার্সি আছে। কোনোটিই ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার কমে বিক্রি করবেন না তিনি। কিনবেন নাকি রোনালদোর স্বাক্ষরিত জার্সি?

আরও পড়ুন