‘সুনামগঞ্জের মেয়েরা শরীরগঠনে নামবে, কেউ কখনো ভাবেনি’

শরীরগঠন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মেয়েরাছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনের মিলনায়তনে ছুটির দিনের সন্ধ্যায়ও তিলধারণের জায়গা ছিল না। প্রচণ্ড শব্দে গান বাজছে। আর গানের তালে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ‘পোজ’ দিচ্ছেন মাকসুদা আক্তার, নুসরাত মীম, পপি রানী দাসরা। জাতীয় শরীরগঠনের উন্মুক্ত নারী বিভাগের প্রতিযোগিতা দেখতে গ্যালারিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।

পুরুষদের শরীরগঠন প্রতিযোগিতা নিয়মিত হলেও মাত্র তিন বছর মেয়েদের বডিবিল্ডিংয়ের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশন। তৃতীয়বারে সর্বোচ্চ ১৪ নারী এসেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।

এবারের জাতীয় শরীরগঠন প্রতিযোগিতায় টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মাকসুদা আক্তার। রানারআপ হয়েছেন রুশলান স্টুডিওর নুসরাত মীম। পপি রানী দাস জিতেছেন ব্রোঞ্জ।

পপি রানী দাস
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের মেয়ে পপি প্রথমবার অংশ নিয়েই জিতেছেন ব্রোঞ্জ। ঢাকার বাইরের জেলা থেকে কোনো মেয়ে এসে শরীরগঠন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন, ব্যাপারটা তত সহজ ছিল না পপির জন্য।

পদক জয়ের পর রোমাঞ্চিত পপি শুরুর দিনগুলোর লড়াইয়ের কথা বলছিলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই মা–বাবা প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না। আমার বোন এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। ওর সাহায্য না পেলে আমার এখানে আসা সম্ভব ছিল না। সত্যি বলতে কী, সুনামগঞ্জ জেলা থেকে একজন মেয়ে উঠে এসে এভাবে শরীরগঠনে নামবে, এটা কেউ কখনো ভাবেনি। কিন্তু আমি সেটা করে দেখিয়েছি। আরও অনেক দূর যেতে চাই আমি।’

পপির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বোন পারুল দাস হাসিমুখে বলছিলেন, ‘পপির শরীরগঠনের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল। যার যে কাজ ভালো লাগে, তাকে সেটা করতে দেওয়া উচিত। আমি মা-বাবাকে বুঝিয়েছি। তাঁরা কিছুতেই রাজি ছিলেন না। পরে অবশ্য তাঁরা কিছুদিন পর ওকে জিমে যেতে অনুমতি দেন। পদক হাতে পপিকে দেখে বেশি খুশি হয়েছি আমি।’

ফুটবল, ক্রিকেট ছাড়া ব্যক্তিগত অনেক খেলায় দারুণ পারফর্ম করছেন মেয়েরা। এত সব প্রতিযোগিতা রেখে কেন শরীরগঠন বেছে নিলেন?

প্রতিযোগিতার মঞ্চে ছেলে বডিবিল্ডাররা
ছবি: সংগৃহীত

পপি জানালেন, নিজের পছন্দেই এসেছেন শরীরগঠনে, ‘হঠাৎ করেই আমার শরীরের ওজন বেড়ে যাচ্ছিল। তখন থেকে শরীরের প্রতি বেশি সচেতন হই। জিম করতে শুরু করি। যখন জিম, ডায়েট শুরু করলাম, তখন ভাবলাম তাহলে প্রতিযোগিতায় কেন অংশগ্রহণ করব না!’

সিলেটে বিবিএতে পড়াশোনা করা পপি স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন শুরুতে, ‘মঞ্চে যখন উঠি, তখন কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। তবে দর্শক ভালোই উৎসাহ দিয়েছেন। এরপর আমার ভয় কেটে গেছে।’

পপি যেখানে স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন, শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হওয়া মাকসুদা শুরু থেকেই ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। হওয়ারই কথা! কিছুদিন আগে মুম্বাইয়ে আন্তর্জাতিক অ্যামেচার অলিম্পিয়ায় তৃতীয় রানারআপ হয়েছেন মাকসুদা। এরপর ঢাকায় এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসীই ছিলেন মাকসুদা।

পদক ধরে রাখতে পেরে খুশি তিনি, ‘আবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে। তবে বেশি ভালো লাগছে বাংলাদেশের মেয়েরা শরীরগঠনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে দেখে।’