এক নম্বর কার্লসেনকে হারিয়ে ১০ বছর বয়সী ‘দাবার মেসি’র কিস্তিমাত

দাবার মেসি ফাউস্তিনো ওরোফিদে

ফাউস্তিনো ওরোর বয়স মাত্র ১০ বছর। আর্জেন্টাইন বিস্ময়বালকের নামের পাশে এরই মধ্যে ‘মেসি’ শব্দটা বসে গেছে। তবে ফুটবল মাঠে নয়, নতুন এই মেসির রাজত্ব দাবার ৬৪ ঘরে। বিনা কারণে তার নামের পাশে যে ‘মেসি’ শব্দটা বসেনি, সেই প্রমাণ আরেকবার দিয়েছে ওরো। বিশ্বের এক নম্বর দাবা খেলোয়াড় ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারিয়েই হইচই ফেলে দিয়েছে চার বছর আগে দাবায় হাতেখড়ি নেওয়া ওরো।

দাবার মেসি কার্লসেনকে হারিয়েছে গত শনিবার। দ্য বুলেট ব্রল নামে পরিচিত বার্ষিক এক অনলাইন টুর্নামেন্টে প্রিয় দাবাড়ু কার্লসেনের বিপক্ষে ৪৮ চালে কিস্তি মাত করেছে ওরো। বুলেট ব্রলে একটু দ্রুতগতিতেই চাল দিতে হয় দাবাড়ুদের। সেই দাবায় কার্লসেনের ভুলের সুযোগ নিয়েই ইতিহাস গড়েছে ওরো।

অনলাইন এই টুর্নামেন্টে কার্লসেনসহ অংশ নিয়েছেন ১৫৬ জন দাবাড়ু। সেই ১৫৬ জনের মধ্যে দাবার মেসি হয়েছে ২১তম। চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হিকারু নাকামুরা।

ওরোর জন্য আলোচনায় আসা নতুন কিছু নয়। ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড র‌্যাপিড দাবা চ্যাম্পিয়নশিপেও একজন গ্র্যান্ডমাস্টারসহ তিনজনকে হারিয়ে নজর কেড়েছিল ওরো। ওই টুর্নামেন্টের পরই ওরোকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করেন দাবা বিশেষজ্ঞরা। ফিদে মাস্টার খেতাব জেতা ওরো এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন দাবার র‍্যাঙ্কিংয়েও।

দাবা কোর্টে মগ্ন ফাউস্তিনো ওরো
ফিদে

বুলেট ব্রলে এবারের চ্যাম্পিয়ন হিকারু নাকামুরা গত বছর মুখোমুখি হয়েছিলেন ওরোর। সেই ম্যাচের পর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে নাকামুরা কথা বলেন ওরোকে নিয়ে, ‘ফাউস্তিনো অবশ্যই গ্র্যান্ডমাস্টার হবে। ওর সম্ভাবনা আছে আরও উঁচুতে ওঠার।’
বুলেট ব্রল টুর্নামেন্টটা আয়োজন করে চেস ডট কম। এই বুলেট দাবায় প্রতিটি চালের জন্য এক মিনিট করে সময় পান প্রতিযোগীরা। সরাসরি নয়, অনলাইনেই মুখোমুখি হন দাবাড়ুরা। ২০২৩ সাল সবচেয়ে কম বয়সে আন্তর্জাতিক মাস্টারের নর্ম জেতা ওরো এখন অনূর্ধ্ব-১১ দাবায় বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড়। ফিদে র‍্যাঙ্কিংয়ে তার ইএলও রেটিং ২৩৩০।

সেই ওরো নিজের প্রিয় দাবাড়ু কার্লসেনকে হারিয়ে দেওয়ার পর যেন বিশ্বাসই করতে পারছিল না কী করেছে সে, ‘আমি খুব খুশি। এটা অবিশ্বাস্য। কারণ, আমি এর আগে কখনোই তাঁর মুখোমুখি হইনি।’

আরও পড়ুন
সে লড়াকু, সব সময়ই জয়ের জন্য খেলে। এটা দারুণ এক ব্যাপার। কারণ, অনেক প্রতিভাবান দাবাড়ুকে দেখেছি, যারা খেলতে গেলেই প্রতিপক্ষের সামনে ভয়ে কুঁকড়ে যায়। কিন্তু আমি ফাউস্তিকে ছয় বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক মাস্টারদের বিপক্ষে নির্ভয়ে খেলতে দেখেছি।’
হোর্হে রোসিতো, দাবা কোচ

চার বছর আগে বিশ্ববাসী যখন করোনা মহামারিতে ঘরবন্দী, সে সময়েই দাবার সঙ্গে পরিচয় হয় ওরোর। ওরোর কোচ হোর্হে রোসিতো জানিয়েছেন শিষ্যের দাবাড়ু হয়ে ওঠার গল্প, ‘ফাউস্তি (ওরো) দাবার ঘুঁটি নাড়াচাড়া শুরু করে ২০২০ সালে মে মাসে মহামারির সময় ইউটিউবে দাবার টিউটোরিয়াল দেখে। ওর বাবা ওকে দাবার বোর্ড চিনিয়েছিলেন, এরপর ভিডিও দেখে ফাউস্তিনো দাবায় আগ্রহী হয়। ওই বছরে সেপ্টেম্বরে ওর বাবা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমার মনে আছে ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ওকে আমি প্রথম দাবার পাঠ দিই। ওই সময়ে ওর বয়স মাত্র ছয়।’

লড়াকু মানসিকতাই ওরোকে এগিয়ে দিয়েছে দাবি করলেন তার কোচ, ‘সে লড়াকু, সব সময়ই জয়ের জন্য খেলে। এটা দারুণ এক ব্যাপার। কারণ, অনেক প্রতিভাবান দাবাড়ুকে দেখেছি, যারা খেলতে গেলেই প্রতিপক্ষের সামনে ভয়ে কুঁকড়ে যায়। কিন্তু আমি ফাউস্তিকে ছয় বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক মাস্টারদের বিপক্ষে নির্ভয়ে খেলতে দেখেছি।’

আরও পড়ুন