জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ শুরু হচ্ছে তিন দিনের ১৭তম জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা। অংশ নিচ্ছে ৩৫টির বেশি দল এবং ৪০০-এর বেশি অ্যাথলেট। গত ফেব্রুয়ারির জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের তুলনায় দল ও খেলোয়াড় সংখ্যা কিছুটা কম হলেও উত্তেজনা কিন্তু কম নয়। এবারও প্রতিটি ইভেন্টে ঘাম ঝরবে, প্রতিযোগিতা হবে নৈপুণ্য আর ধৈর্যের।
সবচেয়ে আলোচিত বিষয় অবশ্যই ইমরানুর রহমান। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে এবার জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছেন এই তারকা অ্যাথলেট। গত ফেব্রুয়ারির আসরে চোটের কারণে ইমরানুর অনুপস্থিত ছিলেন। তখন ১০০ মিটারের শিরোপা জিতেছিলেন নৌবাহিনীর মোহাম্মদ ইসমাইল। এবার ইমরানুরের প্রত্যাবর্তন অ্যাথলেটিকসে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।
দেশের দ্রুততম মানব এবার কে হবেন, এখন এই কৌতূহল সবার। একদিকে ইমরানুর, অন্যদিকে ইসমাইল। দুজনই নৌবাহিনীর অ্যাথলেট। নৌবাহিনীর কোচ মোহাম্মদ আল আমিনের জন্য একজনকে বেছে নেওয়া কঠিন। তবে তিনি বলছেন, ‘ইমরানুর দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে ১০০, ২০০ মিটার ও ৪×গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতে অংশ নেবে। তার পারফরম্যান্সই নির্ধারণ করবে দলের চূড়ান্ত ফলাফল।’
ইমরানুর জিতলে এটি হবে তাঁর ১০০ মিটারে পঞ্চম ঘরোয়া শিরোপা। ১০০ মিটার ও ২০০ মিটারের পাশাপাশি রিলে দলের ভাগ্যও তাঁর ওপর নির্ভর করছে। অন্যদিকে মহিলা বিভাগে সবার দৃষ্টি থাকবে নৌবাহিনীরই অ্যাথলেট শিরিন আক্তারের দিকে। এক যুগে ১৬ বার দেশের দ্রুততম মানবীর খেতাব জয়ের পর শিরিন একবার হেরেছিলেন সুমাইয়া দেওয়ানের কাছে। সেটিও ১২ বার জেতার পর। শিরিন এবার ১৭তম শিরোপা জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে। তাঁকে দ্বিতীয়বার পেছনে ফেলতে চাইবেন সুমাইয়া। মহিলা ১০০ মিটার স্প্রিন্ট আজ বিকেল চারটায়, আর ছেলেদের ১০০ মিটার শুরু হবে আজই বিকেল পৌনে চারটায়।
প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ অবশ্যই ইমরানুরের প্রত্যাবর্তন। কে জিতবে, কে হারবে—এটি শুধু খেলার নয়, এটি দেশের দ্রুততম মানব হওয়ার নতুন লড়াইও। সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়া ইমরানুরের উপস্থিতি প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্যও চ্যালেঞ্জ। কয়েক মাস আগে অস্ত্রোপচারের পর এখন পুরো তৈরি তিনি, যা তাঁর জন্য নতুন প্রেরণা। নবীন প্রতিভা এবং অভিজ্ঞতার লড়াই এবাবের আসরকে রোমাঞ্চের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।
অর্থ পুরস্কার গতবারের মতোই। প্রতি ইভেন্টে প্রথম তিন বিজয়ী পাবেন যথাক্রমে ৫, ৩, ২ হাজার টাকা করে। রেকর্ড গড়লে ২০ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাবেক জাতীয় অ্যাথলেট শাহজালাল মবিন নারী ও পুরুষ ১০০ মিটারে জয়ীদের জন্য ৪০ হাজার টাকা পুরস্কার পাঠিয়েছেন।
তবে প্রতিযোগিতায় থ্রো ইভেন্টের খেলোয়াড়েরা নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতে পারেন। বর্শা নিক্ষেপ ছাড়া ডিসকাস, শটপুট ও হ্যামার থ্রো যে জাতীয় স্টেডিয়ামে হবে না, হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। মাঠ নষ্ট হবে—বাফুফের এই আপত্তিতে ডিসকাস, শটপুটের মতো ইভেন্টগুলো জাতীয় স্টেডিয়ামে করতে পারছে না অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন।
এবারের প্রতিযোগিতায় বাড়তি আকর্ষণ, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ৪৬ জন অ্যাথলেটকে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন বিশেষ সম্মাননা দেবে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাবেয়া খাতুন, লুৎফুন নেছা হক বকুল, সুফিয়া খাতুন, সুলতানা কামাল, রওশন আখতার ছবি, শামীমা সাত্তার মিমুরা। ২৭–২৮ জন বাদে বাকিরা প্রয়াত। প্রয়াতদের পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বেলা তিনটায়। এরপরই সাবেক অ্যাথলেটদের সম্মাননা জানানোর পর্ব।
প্রতিযোগিতার বাজেট রাখা হয়েছে ২০–২২ লাখ টাকা। স্পনসর পাওয়া যায়নি বলে সব খরচ ফেডারেশনই বহন করবে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘স্পন্সর খুঁজতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। তাই খরচ ফেডারেশনের তহবিল থেকে হচ্ছে।’ অর্থ পুরস্কার গতবারের মতোই। প্রতি ইভেন্টে প্রথম তিন বিজয়ী পাবেন যথাক্রমে ৫, ৩, ২ হাজার টাকা করে। রেকর্ড গড়লে ২০ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাবেক জাতীয় অ্যাথলেট শাহজালাল মবিন নারী ও পুরুষ ১০০ মিটারে জয়ীদের জন্য ৪০ হাজার টাকা পুরস্কার পাঠিয়েছেন।
একদিকে উত্তেজনা, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ—সব মিলিয়ে এই প্রতিযোগিতায় মূল আকর্ষণ ইমরানুর। তবে এবার একজনকে দেখ যাবে না। ৪০০ মিটারে রেকর্ডধারী জহির রায়হান এমনিতেই নিষিদ্ধ থাকায় খেলতে পারতেন না। তার ওপর তিনি এখন হয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।