আমিরুলদের সৌজন্যে হকিতে বদলের হাওয়া
টুর্নামেন্টের আগে তিন-চার মাসের জন্য কোচ নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ক্যাম্প—দেশের হকিতে এটাই যেন রীতি। জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে ২৪ দলের মধ্যে ১৭তম হয়ে চ্যালেঞ্জার ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশ। আমিরুল ইসলাম-রাকিবুল হাসানরাও প্রথমবার অংশ নিয়ে বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু সামনে কী হবে, সেটা জানা নেই তাঁদের। যদিও ফেডারেশন চায় এ দলটার পরিচর্যা করতে।
নিয়মিত ক্যাম্প চালু রাখার পাশাপাশি প্রথম বিভাগ লিগটা অন্তত শুরুর কথা ভাবছেন হকির সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.)। কাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে সেই ভাবনার কথাই জানিয়েছেন তিনি, ‘এ মাসেই আমরা ক্লাবগুলোকে চিঠি দেব। অন্তত প্রথম বিভাগ লিগটা যাতে চালু করতে পারি।’
যদিও অনিয়মিত লিগই হকিতে একটা নিয়ম! ১৯৯৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৬ বছরে মাত্র ১৩ বার প্রিমিয়ার হকি লিগ হয়েছে, সর্বশেষ ২০২৩ সালে। মারামারির কারণে সেটিও শেষ করা যায়নি, পরে সভা ডেকে আবাহনী ও মেরিনার্সকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগের অবস্থাও একই। সর্বশেষ প্রথম বিভাগ হকি লিগ মাঠে গড়িয়েছে ২০২৩ সালে, যা হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। এই লিগও অনিয়মিত। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে গত ২৬ বছরে প্রথম বিভাগ লিগ হয়েছে ১২ বার। ২০১২ সাল থেকে দ্বিতীয় বিভাগ লিগ হয়েছে মাত্র পাঁচবার।
বয়সভিত্তিক আর জাতীয় দল মিলিয়ে লম্বা সময় ক্যাম্প না করে ১০ দিন চালু রেখে বিরতি দিয়ে আবার চালু করার পরিকল্পনা ফেডারেশনের। সে জন্য প্রতিবার ফিটনেস পরীক্ষাও দিতে হবে খেলোয়াড়দের। পারফরম্যান্স ধরে রাখতে এটাকেই কার্যকর পন্থা মনে করছেন রিয়াজুল হাসান, ‘সারা বিশ্বে এভাবেই চলে। আমরা ১০ দিন একটা ক্যাম্প করে বিরতি দেব। এরপর আবার ক্যাম্প ডাকব। এটা করার মূল উদ্দেশ্যই সবাইকে খেলার মধ্যে রাখা। এ সময় তারা অনুশীলন করবে, নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলবে।’
তবে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা নেই ফেডারেশনের। গত বছরের নভেম্বরে হকিতে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে সরকার। সেই কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৩ মাসে মাত্র তিনটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট করেছে—ছেলেদের বিজয় দিবস, মেয়েদের ডেভেলপমেন্ট কাপ ও অপরাজেয় আলো নারী হকি টুর্নামেন্ট। হকির সাধারণ সম্পাদক বললেন টুর্নামেন্ট করতে হলে টাকার দরকার। এ মুহূর্তে সেই অবস্থা নেই, ‘টুর্নামেন্ট করতে তো টাকা লাগে। টাকা কই পাব! অনূর্ধ্ব-১৯ দলটা একটা বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। কিন্তু সরকার থেকে এক পয়সাও পেলাম না। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দিয়েছে। বাকিটা ফেডারেশনের এফডিআর ভেঙে, ধার করে জোগাড় করেছি।’
খেলোয়াড়েরা চান নিয়মিত লিগ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মেহরাব হাসান বললেন খেলার মধ্যে না থাকলে কদিন পর সবাই তাদের ভুলে যাবে, ‘লিগ নিয়মিত না হলে উন্নতি করাটা কঠিন। আমরা বিশ্বকাপে খেলে অনেক কিছু শিখেছি। এখন পারফরম্যান্স ধরে রাখতে আর নিজেদের আরও পরিণত করতে হলে নিয়মিত খেলা দরকার।’ জুনিয়র হকি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা আমিরুলের কথা, ‘লিগটা চালু থাকলে আর কিছু লাগে না।’
বিশ্বকাপে অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ১৭তম করা কোচ সিগফ্রিড আইকম্যানের চুক্তি শেষ। আজই বিদায় নিচ্ছেন এই ডাচ কোচ। যাওয়ার আগে তিনি পরামর্শ দিলেন, ‘বাংলাদেশের উচিত, হকির বয়সভিত্তিক দলগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো। তাদের নিয়মিত লিগ আয়োজন করা, শক্তিশালী দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলা জরুরি। না হলে ভালো কিছুর আশা করা ঠিক হবে না।’
১৮ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসে ফিরে যাবেন শুধুই এই বিশ্বকাপের জন্য নিয়োগ দেওয়া আইকম্যান। জাতীয় দলেও এ মুহূর্তে নেই কোনো কোচ। মশিউর রহমান সর্বশেষ সিনিয়রদের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁকে এশিয়া কাপের জন্য রেখেছিল ফেডারেশন। এরপর জুনিয়র দলের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেন তিনি।
বারবার কোচ বদলও অবশ্য বাংলাদেশের হকিতে নতুন নয়। এর আগে সাবেক খেলোয়াড় আ ন ম মামুন উর রশিদকে হকির এএইচএফ কাপ টুর্নামেন্টের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। টুর্নামেন্ট শেষে তাঁরও কাজ শেষ। মামুন বলছেন, ফেডারেশনের কার্যকরী পরিকল্পনা অভাব আছে, ‘তাদের কোনো পরিকল্পনাই নেই। একজন কোচ শুধু একটা টুর্নামেন্টে কাজ করেন। এভাবেই চলে আসছে।’