নতুন জীবন পেলেন গোলরক্ষক অসীম

মাঠে ফিরেই সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতলেন অসীমছবি: সংগৃহীত

মোনার্ক পদ্মার কাছে হেরে ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি লিগের প্রথম আসরের ফাইনালে ওঠার সুযোগ হাতছাড়া করেছে মেট্রো এক্সপ্রেস বরিশাল। কিন্তু ১৭ নভেম্বর ফাইনাল দেখতে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন মেট্রো এক্সপ্রেস বরিশালের গোলরক্ষক অসীম গোপ। চ্যাম্পিয়ন একমি চট্টগ্রামের খেলোয়াড়েরা ট্রফি নেওয়ার আগের মুহূর্তে যখন সঞ্চালক লিগের সেরা গোলরক্ষকের নাম ঘোষণা করলেন, তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ গোলরক্ষক অসীম গোপ। তবে পরক্ষণেই রোমাঞ্চিত অসীম মঞ্চে উঠে পুরস্কারটি হাতে তোলেন।

২০১২ সালে সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ল্ড হকি লিগ দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক অসীমের। এর পর থেকে টানা সাত বছর খেলেছেন জাতীয় দলে। সর্বশেষ খেলেছিলেন থাইল্যান্ডে ২০১৯ সালে, ইনডোর এশিয়া কাপে। এরপর আর সুযোগ পাননি। অসীমের দুর্ভাগ্যের শুরু ২০২১ সালের অক্টোবরে। প্রায় তিন বছর পর শুরু হওয়া প্রিমিয়ার হকি লিগে কোনো দলই পাননি। মূলত কোটার গ্যাঁড়াকলে পড়ে কোনো দলে নাম লেখাতে পারেননি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গোলরক্ষক।

আরও পড়ুন

নিয়ম অনুযায়ী প্রিমিয়ার হকি লিগে সার্ভিসেস সংস্থার সর্বোচ্চ পাঁচজন খেলোয়াড় নিতে পারে কোনো ক্লাব। মোহামেডান অসীমকে নেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোটা পূরণ করে ফেলায় তাঁকে আর নিতে পারেনি সাদা–কালোরা। মোহামেডানের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেওয়ায় তখন অন্য দলে যাওয়ার সুযোগ ছিল না অসীমের। বাধ্য হয়ে পুরো লিগেই দর্শক হয়ে বসে থাকেন তিনি।

সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার হাতে অসীম গোপ
ছবি: সংগৃহীত

প্রিমিয়ার লিগে খেলতে না পারায় স্বাভাবিকভাবে পরের সবগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে তাঁকে বিবেচনায় রাখেননি বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের নির্বাচকেরা। সে ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে বাদ পড়েন অসীম। এরপর এ বছর মার্চে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত এএইচএফ কাপ (এশিয়ান হকি ফেডারেশন), মে মাসে থাইল্যান্ডে এশিয়ান গেমস বাছাই এবং জুনে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের দলেও ডাক পাননি।

বারবার জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশায় এক সময় অবসরের চিন্তা মাথায় আসে অসীমের। মাঠের বাইরে থাকতে থাকতে ফিটনেস নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি লিগের প্লেয়ার ড্রাফটসে টিকতে হলে বিপ টেস্টে উতরাতে হতো তাঁকে। সেই বিপ টেস্টে উতরে এ প্লাস ক্যাটাগরির খেলোয়াড়ের তালিকাভুক্ত হন অসীম।

লিগ শুরু হলেও প্রথম ম্যাচে তাঁকে খেলানো হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত ওয়ালটন ঢাকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৮টি পেনাল্টি কর্নার ঠেকিয়ে প্রমাণ করেন যে তিনি ফুরিয়ে যাননি। এর পর থেকে প্রতিটি ম্যাচে খেলেছেন অসীম এবং ভালো নেপুণ্য দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত পেলেন লিগের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। জাতীয় দলের গোলকিপার বিপ্লব কুজুর, আবু সাইদ, অভিজ্ঞ জাহিদ হোসেনদের সরিয়ে টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি চোখ কাড়েন অসীম।

নিজেকে ফিরে পেতে পরিশ্রম করেছেন অনেক। সেটাই বলছিলেন অসীম, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরুর আগের দিনও জানতাম না খেলতে পারব কি না। নৌবাহিনীর নিয়মিত অনুশীলনের পরও প্রতিদিন সন্ধ্যায় কোয়ার্টারের মাঠে আলাদা এক ঘণ্টা দৌড়াতাম। আমার লক্ষ্য ছিল এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নিজেকে ফিরে পাওয়া।’

আরও পড়ুন

গত ২৮ অক্টোবর ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি লিগ শুরুর পর থেকে নিজেকে ফিট রাখতে ক্যাম্পে কোনো ভাত খেতেন না অসীম, ‘মন চাইলেও টিম হোটেলে ওঠার পর থেকে ভাত খেতাম না। শুধু সবজি, সালাদসহ অন্য পুষ্টিকর খাবার খেয়েছি। ফিটনেস ধরে রাখার জন্য যা করার সবই করেছি। সেই পুরস্কারও পেয়েছি।’

আগামী বছর পাকিস্তানে হতে পারে এসএ গেমস। আর সেই গেমস দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে আবারও ফিরতে চান অসীম, ‘জাতীয় দলের ট্রায়াল থেকে বাদ পড়ার পর মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম এত দিন। এবারের লিগে যেমন পারফরম্যান্স করেছি, তাতে আমি খুব খুশি। আশা করি, আবারও জাতীয় দলে ফিরতে পারব।’