ইমরানুর-শিরিনের শ্রেষ্ঠত্বে ভাগ বসাতে পারেননি কেউ

আবারও দেশের দ্রুততম মানব-মানবী ইমরানুর (ডানে) ও শিরিনশামসুল হক

সেই চেনা দৃশ্য। দৌড় শেষ করে নিজ নিজ সংস্থার পতাকা নিয়ে ছবির জন্য পোজ দেবেন তাঁরা দুজন। হাসবেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। ঘরোয়া অ্যাথলেটিকসে এটাই এখন নিয়মিত ছবি। নতুন কেউ এসে তাঁদের দুজনের রাজ্যে হানা দিতে পারেননি। ইমরানুর রহমান আর শিরিন আক্তারই দেশের দ্রুততম মানব-মানবী।

আরও পড়ুন

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ ৩৭তম জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দিনে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে জিতেছেন যথারীতি দুই পুরোনো মুখই। দুজনই জিতেছেন সহজে। সেনাবাহিনীর ইমরানুর টানা চতুর্থবার হলেন দ্রুততম মানব। বাংলাদেশে নৌবাহিনীর শিরিন ১৫ বার।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে আর্মি স্টেডিয়ামে ৪৬তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে সেরা ছিলেন তাঁরাই। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেবার তাঁর টাইমিং ১০.৪৯ সেকেন্ড। শিরিনের ১২.২০। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নতুন ট্র্যাকে দৌড়ে নতুন ইলেকট্রনিক বোর্ডে ইমরানুরের টাইমিং ১০.৩৬ সে.। শিরিনের ১২.১১।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের স্প্রিন্টারদের মধ্যে নাজমুন নাহার বিউটি ১০০ মিটারে সেরা হয়েছেন ১৭ বার। শিরিন এখন বিউটির ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলেছেন। আজ দ্রুততম মানবীর খেতাব ধরে রেখে শিরিন ছিলেন উচ্ছ্বসিত, ‘আমার যে কত খুশি লাগছে, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এটা আমার কঠোর পরিশ্রমের ফল। বরাবরই চেয়েছি আমি আমার জায়গায় সেরা থাকব। এত বছর ধরে নিজেকে সেরা হিসেবে ধরে রাখতে পেরেছি। আমি আমার সংস্থা বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এত দূর আসতে পারতাম না।’

এ নিয়ে ১৫বার দেশের দ্রুততম মানবী হলেন শিরিন
প্রথম আলো

ইলেকট্রনিক বোর্ডে শিরিনের সেরা টাইমিং ১১.৯৫। তবে আজ টাইমিং একটু বেশি হলেও শিরিন খুবই সন্তুষ্ট, ‘এ নিয়ে ১৫ বার হয়েছি। মাঝে শুধু একবার পাইনি। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই।’
ইমরানুরও ছিলেন খুশি, ‘চেষ্টা করি ভালো করতে। ভবিষ্যতে আরও ভালো করতে চাই।’ গত বছর এশিয়ান ইনডোরে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতে চমকে দেন। এক বছর পর সেই এশিয়ান ইনডোরে আবারও খেলতে চলেছেন। তেহরানে সোনা ধরে রাখা চাপ হবে জানিয়ে ইমরানুর বললেন, ‘প্রস্তুতি ভালো আছে। আশা করি ভালো করব।’

আরও পড়ুন

২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি প্রথমবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেন ইমরানুর। সেবার মাহবুব আলমের (১০.৫৪ সে.) ২২ বছরের পুরোনো জাতীয় রেকর্ড ভেঙে টাইমিং করেন ১০.৫০। একই বছর ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকসে ১০.২৯ সেকেন্ড টাইমিং করেন। ওই বছরই ডিসেম্বরে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ১০.৪৯ সেকেন্ড সময় নেন। সে তুলনায় আজ তাঁর টাইমিং ভালোই হয়েছে।

ইমরানুর আজ সময় নিয়েছেন ১০.৩৬ সেকেন্ড
প্রথম আলো

ইমরানুরের পেছনে থেকে দ্বিতীয় হয়েছেন মোহাম্মদ ইসমাইল। মেয়েদের বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন সুমাইয়া দেওয়ান, যিনি গত প্রতিযোগিতার আগেরটিতে হারিয়ে দেন শিরিনকে।
ইমরানুর-শিরিনের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার দিনে হাই জাম্পে নতুন রেকর্ড গড়েছেন রিতু আক্তার। আসলে রিতু নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন। আগে ছিল ১.৭৫ মিটার, আজ লাফিয়েছেন ১.৭৬ মিটার।

৩৭ মাস পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অ্যাথলেটিক ফিরেছে আজ। প্রতিযোগিতা উপলক্ষে সাজানো হয়েছে মাঠ। বড় বড় ছবির কাটআউট বসানো হয়েছে।  তবে তাতে নেই সাবেক তারকা অ্যাথলেটদের কোনো ছবি। যাঁদের সামনে রেখে তরুণেরা শিখবে তারাই অবহেলিত এই আয়োজনে। ৪০ ইভেন্টের প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে মাত্র দুদিনে। তা-ও আবার ফ্লাডলাইট নেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। ফলে কিছু গোঁজামিল দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

সংবাদমাধ্যমের ভিড় ছিল অনেক। ১০০ মিটার কাভার করতে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু দৌড় শেষ করে মাইকের তীব্র আওয়াজে শোনাই যাচ্ছিল না শিরিন-ইমরানুরের কথা। তাঁদের কথা হারিয়ে গেছে ভিড় আর কোলাহলের মধ্যে। জাতীয় স্তরের এমন একটি প্রতিযোগিতায় সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজন করতে প্রথম দিনেই ব্যর্থ বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। ১০০ মিটার শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল পৌনে চারটায়। কিন্তু ওই সময় চলে মার্চ পাস্ট আর কর্মকর্তা-অতিথিদের বিশাল বক্তৃতা পর্ব। গোটা পর্বটা এক ঘণ্টারও পর শেষ হয়। ততক্ষণে অ্যাথলেটরাই বিরক্ত হয়ে ওঠেন।

নিম্নমানের মশাল থেকে আগুনের গোলা পড়ে যায় ট্র্যাকে। এমন অনেক অব্যবস্থাপনা ছিল জাতীয় অ্যাথলেটিকসের প্রথম দিনে
প্রথম আলো

মশালদৌড়ে হলো আরেক কাণ্ড। মশাল নিয়ে দৌড়াচ্ছিলেন সাবেক পোল ভোল্টার শরিফুল ইসলাম ও সাবেক দ্রুততম মানবী নাজমুন নাহার বিউটি। কিন্তু এমনই নিম্নমানের মশাল যে, মশাল থেকে আগুন গোলটা পড়ে যায় নতুন ট্র্যাকের পাশে ঘাসের ওপর। অল্পের জন্য ট্র্যাকে পড়েনি। এতে দুই বাহকই আহত হতে পারতেন। এমন দৃশ্য অতীতে কখনো দেখা যায়নি জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায়।