কেমন আছে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার পরিবার

বাংলাদেশের দাবার ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল নাম ৫০ বছর বয়সী গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার চলে যাওয়ার এক বছর পূর্তি আজ। এক বছর পর কেমন আছে তাঁর পরিবার?

জিয়া পরিবারের জন্য এ ছবি এখন শুধুই স্মৃতি।সৌজন্য

ঢাকার পল্টনের দাবা ফেডারেশন। ২০২৪ সালের ৫ জুলাই বিকেল। জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার ১২তম রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান ও এনামুল হোসেন রাজীব। চারপাশে নিস্তব্ধতা। সময় তখন ৫টা ৫০ মিনিট।

আচমকাই চেয়ার থেকে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন জিয়াউর রহমান। চোখের পলকে বদলে যায় দৃশ্যপট। রাজীব উঠে দাঁড়ান। ছুটে আসেন খেলোয়াড় ও ফেডারেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তড়িঘড়ি করে জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে। মাত্র ৯ মিনিটেই হাসপাতালে পৌঁছানো গেলেও ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসকেরা জানান, আগেই থেমে গেছে জিয়ার হৃৎস্পন্দন।

বাংলাদেশের দাবার ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল নাম ৫০ বছর বয়সী গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার চলে যাওয়ার এক বছর পূর্তি আজ। কিন্তু স্ত্রী তাসমিন হোসেনের কাছে আজও দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে দিনটি। তাসমিন বিশ্বাস করতে পারেন না, জিয়া আর নেই।!

তিনি বলেন, ‘এই এক বছরে জিয়া ছাড়া আমাদের জীবন যেন অচল হয়ে ছিল। মনে হয়েছে, ও শুধু খেলতে গেছে। ফিরে আসবে। প্রতিটি ক্ষণে ওর শ্বাস ফেলা টের পাই, ওর কণ্ঠস্বর শুনি।’

খেলতে খেলতেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান
শামসুল হক

জিয়ার একমাত্র সন্তান ২০ বছর বয়সী তাহসিন তাজওয়ার বাবার স্বপ্নকে বুকে নিয়ে হেঁটে চলেছেন দাবার পথে। এই এক বছরে তিনি ফিদে মাস্টার থেকে আন্তর্জাতিক মাস্টার (আইএম) হয়েছেন। গত এপ্রিলে হাঙ্গেরিতে তাহসিন পূরণ করেন নর্মের প্রয়োজনীয় শর্ত। কিন্তু রেটিং ২৪০০ না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক আইএম খেতাব পাননি এখনো।

জিয়ার মৃত্যুর পর দাবা ফেডারেশনের তৎকালীন নেতৃত্ব জিয়ার পরিবারের জন্য অর্থিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল (গত নভেম্বরে ফেডারেশনে নতুন নেতৃত্ব এসেছেন)। কিন্তু জিয়ার স্ত্রী হতাশা নিয়ে বলছেন, ‘বিদায়ী ফেডারেশন থেকে এক কোটি টাকা দেবে বলেছিল। কিন্তু কোনো আর্থিক সহায়তা পাইনি।’

এ নিয়ে দাবা ফেডারেশনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দীন শামীমের কথা, ‘দেশে পরিবর্তন আর নানা অস্থিরতার কারণে ফান্ড গঠন আর সম্ভব হয়নি।’ জিয়ার জানাজায় এসে তাঁর পরিবারের পাশে থাকার কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওও) এক শীর্ষ কর্মকর্তা। কিন্তু বিওএর থেকেও কোনো সহায়তা পায়নি প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টারের পরিবার।

আরও পড়ুন

তবে পাশে থেকেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তারা ১৫ লাখ টাকা দিয়ে সহায়তা দিয়েছে জিয়া–পুত্রকে। ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ব্যক্তিগতভাবে দেন পাঁচ লাখ টাকা। সরকারি একটি তহবিল থেকে দুই লাখ এবং বার্জার পেইন্টস কোম্পানি তাহসিনকে আর্থিক সহায়তা করেছে বলে জানান জিয়ার স্ত্রী। জিয়া চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে তাঁর পরিবার। দাবা ফেডারেশনের সহায়তায় জিয়ার পরিবারের উদ্যোগে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজন করা হচ্ছে ‘জিয়া স্মৃতি দাবা টুর্নামেন্ট’।

জিয়া দেশের অন্যতম সফল দাবাড়ু। ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। জাতীয় দাবার সর্বোচ্চ ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন তিনিই।

আজ বিকেলে পল্টন দাবা ফেডারেশনে শুরু এ প্রতিযোগিতা, চলবে ১১ জুলাই পর্যন্ত। ৭ দিনে হবে ৯ রাউন্ডের খেলা। টুর্নামেন্টে নিবন্ধন করেছেন শতাধিক দাবাড়ু। তবে কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৬ জনকে বাছাই করেছেন আয়োজেকেরা। কয়েকজনের ক্ষেত্রে শিথিল করা হলেও মূলত ১৮০০ রেটিং ঊর্ধ্ব দাবাড়ু নেওয়া হয়েছে।

গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তারের খেলার কথা এই টুর্নামেন্ট। আইএম ফাহাদ রহমান অবশ্য নিবন্ধন করেও খেলবেন না বলে জানিয়েছেন শেষ মুহূর্তে। ভারতের চারজন ও নেপালের তিনজন দাবাড়ুর খেলার কথা। থাকছে পাঁচ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার।

ভবিষ্যতে টুর্নামেন্টটি বড় পরিসরে আয়োজনের ইচ্ছা আছে উদ্যোক্তাদের। ১৯৭৪ সালের ১ মে জন্ম নেওয়া জিয়াউর রহমান ছিলেন দেশের পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের মধ্য দ্বিতীয়। নিয়াজ মোরশেদের পর ২০০২ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পান তিনি। জিয়া দেশের অন্যতম সফল দাবাড়ু। ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। জাতীয় দাবার সর্বোচ্চ ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন তিনিই। দাবা অলিম্পিয়াডে বহুবার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, খেলোয়াড়ের পাশাপাশি ছিলেন কোচও।

তাঁর ছুঁয়ে থাকা প্রতিটি ঘুঁটির প্রতিটি চাল যেন এখনো বলে যায়, জিয়া আছেন এবং থাকবেন।

আরও পড়ুন