জাপানকে কোণঠাসা করছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি টমাস বাখ।ফাইল ছবি: এএফপি

এত দিন মনে হয়েছে, অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে টোকিওর জনগণ, যারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ ফেলতে যাওয়া এই মহাযজ্ঞ আয়োজনে আগ্রহ হারিয়েছে। অন্যদিকে জাপানের অলিম্পিক আয়োজক কমিটি, টোকিও শহরের কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক কমিটি—যারা যেকোনোভাবেই হোক অলিম্পিক আয়োজন করবে বলে পণ করে রেখেছে। সব আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) ও জাপানের অলিম্পিক কমিটিকে হরিহর আত্মা বলেই মনে হচ্ছিল।

সে ধারণা একটু দূরে ঠেলে দিতে হচ্ছে। কারণ, জাপানের অলিম্পিক কমিটির (জেওসি) এক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তাঁরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। করোনা সংক্রমণের মধ্যে জনগণের আপত্তির মুখেও অলিম্পিক আয়োজন করতে জাপানকে নাকি বাধ্য করছে আইওসি!

কাওরি ইয়ামাগুচি।
ছবি: টুইটার

অলিম্পিক আয়োজন স্থগিত করার জন্য এর আগেও দাবি উঠেছে। মে মাসের মাঝপর্যায়ে জাপানের রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী কেনজি উতসুনোমিয়াই অলিম্পিক বাতিলের জন্য আবেদন করেন। টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকেও অলিম্পিক আয়োজনের সঙ্গে জড়িত সব কর্তৃপক্ষের কাছে আয়োজনটি স্থগিত করার জন্য আবেদন করেছেন। সে জন্য অলিম্পিক বাতিল করার পক্ষে সাধারণ মানুষের ৩ লাখ ৫১ হাজার সইও জোগাড় করেছেন।

অলিম্পিক আয়োজনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এত দিন চুপ করে থাকলেও এই প্রথম এমন কাউকে মুখ খুলতে দেখা গেছে। বার্তা সংস্থা কিওদোতে জেওসির নির্বাহী সদস্য কাওরি ইয়ামাগুচির একটি কলাম ছাপা হয়েছে আজ শুক্রবার। সেখানে ইয়ামাগুচি লিখেছেন, ‘আমাদের এমন এক জায়গায় কোণঠাসা করা হয়েছে যে এখন আর থামার উপায় নেই। আমরা যদি থেমে যাই, আমরা ডুবব, আবার না থামলেও ডুবব।’

কাওরি ইয়ামাগুচি, যখন খেলোয়াড় ছিলেন।
ছবি: টুইটার

১৯৮৮ সিওল অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতা এই জুডোকা করোনা সংক্রমণের এই সময়ে অলিম্পিক আয়োজনের কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁর ধারণা, বিশ্বে এখন যে অবস্থা চলছে, তাতে অলিম্পিক গুরুত্ব হারিয়েছে বহু আগেই। তাঁর ধারণা, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাকে পাত্তাই দিচ্ছে না, ‘এই অলিম্পিক কেন হচ্ছে? কার জন্য হচ্ছে? গেমস এরই মধ্যে তার অর্থ হারিয়ে ফেলেছে এবং শুধু আয়োজন করতে হবে, তাই করা হচ্ছে। তবে আমার ধারণা, এটা বাতিল করার সুযোগ এরই মধ্যে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আইওসি মনে করে জাপানের জনমত (অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে) গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।’

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আর টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটি ২৩ জুলাই অলিম্পিক শুরু করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। তাদের দাবি, ১০ হাজারের বেশি অ্যাথলেটের সমাগম হলেও সবাইকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম আয়োজক কমিটি। আইওসির সহসভাপতি জন কোটস বলেছেন, টোকিওতে লকডাউন চললেও তাঁরা অলিম্পিক আয়োজন করবেন। ওদিকে প্রতিষ্ঠানের আরেক সদস্য ডিক পাউন্ড বলেছেন, ‘পৃথিবী ধ্বংস’ না হয়ে গেল অলিম্পিক আয়োজন করবেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

কিছুদিন আগে অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে করা এক জরিপে ৬০ ভাগ মানুষ এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। মানুষের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এভাবে অলিম্পিক আয়োজনে আইওসির স্বেচ্ছাচারী মনোভাব দেখতে পাচ্ছেন ইয়ামাগুচি। সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক লিখেছেন, ‘তাদের (ওআইসির) ধারণা, জাপানের জনগণের ইচ্ছাকে মাটিচাপা দিয়েই এগোতে পারবে তারা। ওদিকে জরিপেই দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক মানুষ অলিম্পিক বাতিল বা পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে।’

জাপানে করোনার চতুর্থ ঢেউ চলছে। এর মধ্যে আয়োজক শহর টোকিও ছাড়া আরও নয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। অন্তত ২০ জুন পর্যন্ত জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকবে। সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। কারণ, এর আগেও বেশ কয়েকবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

করোনা মহামারির কারণে টোকিও অলিম্পিক বাতিল করার জন্য চাপ বাড়ছে।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

এদিকে জাপানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসা পরামর্শক বলেছেন, অলিম্পিক উপলক্ষে চলাফেরা শুরু হলে দেশটিতে নতুন করে সংক্রমণ বাড়বে। শুক্রবার পার্লামেন্ট কমিটির সামনে কথা বলেছেন শিগেরু ওমি। সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পরামর্শক প্যানেলের প্রধান বলেছেন, ‘মানুষ “ঘরে থাকা”র অনুরোধ অনেক শুনেছে। সরকার এমন সংকটময় মুহূর্তে নতুন কিছু হাজির না করলে মানুষকে আটকে রাখা অসম্ভব হবে। আমাদের জন্য জরুরি হলো অলিম্পিক আয়োজন যেন জনস্রোতের সৃষ্টি না করে, সেটা নিশ্চিত করা।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ওমি অলিম্পিক স্থগিত বা বাতিল করতে বলেননি। তবে বলেছেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে জাপান অলিম্পিক আয়োজন ‘স্বাভাবিক কিছু’ নয়।

এখন পর্যন্ত জাপানে সাড়ে সাত লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাপিয়েছে।