রোমাঞ্চ ছড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা টুয়েলভ

শিরোপা হাতে ঢাকা টুয়েলভের খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপনছবি: আশরাফুল আলম

কে জানত, এতটা রোমাঞ্চ ছড়িয়ে শেষ হবে করপোরেট নারী কাবাডি লিগের ফাইনাল। খেলা শেষ হতে তখন মাত্র ৬ সেকেন্ড বাকি। দুই দলের স্কোরও সমান ২২-২২।

ঢাকা টুয়েলভের অধিনায়ক রেখা আক্তারি শেষ রেইডে ছুঁয়ে দেন টেকনো টুয়েলভের খেলোয়াড় রুপালী আক্তারকে। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেও দেরি হলো না। জয়ের আনন্দে স্টেডিয়ামে বেজে ওঠা ‘চ্যাম্পিয়ন’ গানের তালে তালে উল্লাস করলেন ঢাকা টুয়েলভের খেলোয়াড়েরা।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

পল্টন কাবাডি স্টেডিয়ামে আজ ফাইনালে টেকনো মিডিয়াকে ২৩-২২ পয়েন্টে হারিয়ে করপোরেট নারী কাবাডি লিগে প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা টুয়েলভ। দেশের ছয়টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ছয় দল নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল করপোরেট নারী কাবাডি লিগ। ফাইনাল জমজমাট করতে আয়োজনের কমতি ছিল না বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের।

গ্যালারিতে শুধু কাবাডি খেলোয়াড়েরাই ছিলেন না, বিভিন্ন স্কুল থেকে খেলা দেখতে আসা ছাত্রছাত্রীরাও চিৎকারে মাতিয়ে রাখে স্টেডিয়াম। বাদ্যবাজনার তালে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দুই দলের সমর্থকেরা। খেলার শুরু ও বিরতিতে বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার ও কালচারাল সেন্টারের সদস্যদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানও মুগ্ধ করে রাখে দর্শকদের।

ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে দুই দল। ম্যাচের একটি মুহূর্ত
ছবি: আশরাফুল আলম

ফাইনাল ম্যাচের শুরুতে বেশ পিছিয়ে ছিল টেকনো মিডিয়া। একপর্যায়ে ঢাকা টুয়েলভের পয়েন্ট ছিল ১০, টেকনো মিডিয়ার পয়েন্ট ছিল ১। কিন্তু যতই সময় গড়িয়েছে, দারুণভাবে খেলায় ফিরেছে টেকনো মিডিয়া। শেষ কয়েক মিনিটে তো দুই দল সমানতালে লড়েছে। কখনো ঢাকা টুয়েলভ এগিয়ে তো, তারপরই টেকনো মিডিয়া এগিয়ে। এরপর দুই দলই সমানতালে একটি করে পয়েন্ট আদায় করেছে। আর খেলা শেষের আগে দেখা দেয় চরম নাটকীয়তা, দুই দলেরই পয়েন্ট দাঁড়ায় সমান ২২।

আরও পড়ুন

এর আগে গ্রুপের প্রথম পর্বে ঢাকা টুয়েলভ ৩০-১৮ পয়েন্টে হারিয়েছিল টেকনো মিডিয়াকে। দ্বিতীয় পর্বে টেকনো মিডিয়া জেতে ২৩-১৯ পয়েন্টের ব্যবধানে। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘোরলাগা বিস্ময় ঝরে পড়ল অধিনায়ক রেখা আক্তারির কণ্ঠে, ‘আমি ভাবিনি যে ম্যাচটা এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমাদের সেই আত্মবিশ্বাস ছিল।’

শেষ দিকে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা টুয়েলভ
ছবি: আশরাফুল আলম

করপোরেট কাবাডি লিগের খেলোয়াড় বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছর জানুয়ারি মাসে। পল্টন আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আইজিপি কাপ অনূর্ধ্ব-১৮ যুব কাবাডি থেকে বাছাই করা হয় ১০০ জন খেলোয়াড়। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা। গত দুই মাস ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে আবাসিক ক্যাম্পে রেখে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখান থেকে বাছাই করা ৭৮ জনকে নিয়ে গঠন করা হয় ছয়টি দল।  

এবার করপোরেট কাবাডি লিগ থেকে নতুন খেলোয়াড় উঠে আসবে, এমনটাই মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শাহনাজ পারভীন মালেকা, ‘অনেক নতুন খেলোয়াড় এসেছে। আমাদের অনেক মেয়ে বিয়ের কারণে খেলা ছেড়ে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে ভবিষ্যতের খেলোয়াড় ছিল না, সেই জায়গা ওরা নেবে।’

আরও পড়ুন

এর আগে মেয়েদের কাবাডি মানেই ছিল মাত্র দুটি দল—বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ আনসার। এবারের করপোরেট কাবাডি লিগের মাধ্যমে সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে ফেডারেশন। চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ ঢাকা টুয়েলভের কোচ বজলুর রহমানও সেটাই বললেন, ‘আমাদের পাইপলাইনে আগে খেলোয়াড় ছিল না। এখন প্রতিটি পজিশনে অনেক খেলোয়াড়। কে ভালো, কে মন্দ, সেটা বোঝা মুশকিল। এখন যদি জাতীয় দল গঠন করা হয়, সেটা হবে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল। যেটা আগে একদম ছিল না।’

রানার্স আপের পুরস্কার নিচ্ছেন টেকনো মিডিয়ার খেলোয়াড়েরা
ছবি: আশরাফুল আলম

জাতীয় দলের ভারতীয় কোচ সাজুরাম গয়াতও ফেডারেশনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেন, ‘এমন একটি লিগ আয়োজনের জন্য আমি ফেডারেশনকে ধন্যবাদ দেব। আগে মেয়েদের দুটির বেশি দল ছিল না। এখন অনেক দল হয়েছে। অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসায় লিগের প্রতিটি ম্যাচ হয়েছে খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করলে আশা করি এশিয়ান গেমসে এই মেয়েরাই পদক জিতবে।’

নারী লিগের সেরা রেইডার ঢাকা টুয়েলভের আঞ্জুয়ারা রাত্রি, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় একই দলের স্মৃতি আক্তার, সেরা ক্যাচার হয়েছেন টেকনো মিডিয়ার রুপালী আক্তার। খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী।