কদিন আগেও ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। এখন জাতীয় দলের আশপাশে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রাথমিক দলে ছিলেন, কদিন আগে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। ওই সিরিজের পারফরম্যান্সেই স্বপ্ন দেখছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার। ১৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন কথা বললেন এসব নিয়েই

l এত দ্রুত বদলে গেল নিজের জগৎ, কেমন লাগে?
জুবায়ের হোসেন: অবাক লাগে। ভালোও লাগে। জাতীয় দলে খেলা যেকোনো ক্রিকেটারের স্বপ্ন। আমি ক্যাম্পে আছি মানে স্বপ্নপূরণের কাছাকাছিই আছি।
l কীভাবে হয়ে গেল এত কিছু?
জুবায়ের: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে (গত ফেব্রুয়ারিতে) গিয়ে আঙুলে চিড় ধরল, একটা ম্যাচও খেলতে পারিনি। মন খারাপ ছিল খুব। পরে জাতীয় দলের নেটে ডাকা হলো আমাকে। জাতীয় দলের কোচ হাথুরুসিংহে ও বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক সময় নিয়ে আমার বোলিং দেখেছেন। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছি। দুই কোচই আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি ভালো বোলিং করো। এখনই তোমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য আছে।’ অনেক উৎসাহ পেয়েছি তাঁদের কথায়। আত্মবিশ্বাসও পেয়েছি। সাহস বেড়েছে। নির্বাচকেরাও অনেক সাহস দিয়েছেন আমাকে।
l আপনার নিজের কী মনে হয়, আসলেই আপনি প্রস্তুত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য?
জুবায়ের: নির্বাচকেরা আমাকে নিয়েছেন নিশ্চয়ই সামর্থ্য আছে বলেই। আমি নিজেও আত্মবিশ্বাসী। পরিশ্রম করছি অনেক। জানি, আমি পারব। দলে নেওয়া হবে কি না, সেটা নির্বাচকদের ব্যাপার। তবে আমি প্রস্তুত।
l বাংলাদেশে তো লেগ স্পিনার বিরল এক প্রজাতি, আপনি কীভাবে লেগ স্পিনার হলেন?
জুবায়ের: আগে ছিলাম ওপেনিং ব্যাটসম্যান। বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্ট খেললাম একবার, পারফর্ম করতে পারিনি। পরে এক বড় ভাই বললেন, বাংলাদেশে তো লেগ স্পিনার নেই, তুই লেগ স্পিন কর।’ ওনার কথা শুনেই শুরু করলাম। দেখলাম, শুরু থেকেই আমার বল বেশ টার্ন করছে। মনে হলো, লেগ স্পিনটা আমার গড গিফটেড, এটাই করা উচিত। শুরু করলাম। জামালপুরে আমাদের দলে একজন লেগ স্পিনার ছিল, রানা। ওকে দেখেও কিছু শিখলাম। পরে অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ দল হয়ে এখন এখানে।
l নিজের সবচেয়ে শক্তির জায়গা মনে করেন কোনটি?
জুবায়ের: গুগলি খুব ভালো পারি। গুগলিটা টার্নও করে বেশ। জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে বেশির ভাগ উইকেটই পেয়েছি গুগলিতে। ফ্লিপারও পারি। গুগলির তুলনায় ফ্লিপার সহজ মনে হয় আমার। জোরের ওপর ছেড়ে দিলেই হয়। কিন্তু গুগলিতে টার্ন করানোটা গুরুত্বপূর্ণ। লেগ স্পিনও বেশ টার্ন করে আমার। নিয়ন্ত্রণও ভালো। শর্ট পিচ, ফুল টস হয়ই না প্রায়। মাঝেমধ্যে শুধু কিছু হাফভলি হয়।
l এখন কোনটি নিয়ে বেশি কাজ করছেন?
জুবায়ের: গুগলি-ফ্লিপার নিয়ে তো কাজ করছিই। এখন বেশি কাজ করছি ক্রিজের ব্যবহার আর গতিবৈচিত্র্য নিয়ে। স্পিনারদের জন্য ক্রিজের ব্যবহারটা জরুরি। বাতাসে গতির বৈচিত্র্যটাও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতে। লেগ স্পিন অনেক কঠিন, অনেক সাধনার ব্যাপার। অনুশীলনে আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানা বল করি। কোনো বিশ্রাম নেই না। আঙুলে-কাঁধে একটু ব্যথা করে। ম্যাসাজ করালে ঠিক হয়ে যায়।
l কোচিং তো সেভাবে পাননি, লেগ স্পিনারদের ভিডিও দেখেন?
জুবায়ের: কোচিং বলতে ওয়াহিদ স্যার (ওয়াহিদুল গণি) কিছুদিন কাজ করেছেন। সোহেল স্যার (সোহেল ইসলাম) অবশ্য অনেক কাজ করেছেন আমাকে নিয়ে। ভিডিও দেখি। লেগ স্পিনার হব সিরিয়াসলি ঠিক করেছি যেদিন, সেদিন থেকেই আমার নায়ক শেন ওয়ার্ন। অনেক ভিডিও দেখি তাঁর। ওয়ার্নের লেগ স্পিনটাই সবচেয়ে ভালো লাগে, এত টার্ন করাতে পারত! জায়গাটাও খুব ভালো ছিল। খুব চতুর বোলার ছিল।
l আপনি কতটা চতুর?
জুবায়ের: মাত্র তো শুরু, অভিজ্ঞতা কম। এখনো শিখছি।
l তরুণ লেগ স্পিনারের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক কঠিন হতে পারে। ভেঙে পড়ার ভয় নেই?
জুবায়ের: যেখানেই সুযোগ পেয়েছি, ভালো করেছি। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে, কদিন আগে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচ, এক দিনের ম্যাচ। সব ম্যাচেই ভালো করেছি। ভয় নেই তাই। বিশ্বাস আছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেললে ভালো করব। না পারলেও ভয় নেই। আমি অনেক শক্ত মানসিকতার।
l স্বপ্নের কথা বলুন বা লক্ষ্য?
জুবায়ের: বাংলাদেশের সেরা বোলার হতে চাই। অনেকেই আছেন, কিছুদিন পরই হারিয়ে যান। আমি অনেক দিন খেলতে চাই। ওয়ার্ন-মুরালির মতো অনেক রেকর্ড গড়তে চাই।