সাক্ষাৎকারে ডেভিড হেম্প

‘টি-টোয়েন্টিতে ভালো ভিত্তি দাঁড় করাতে পেরেছি’

শুরু করেছিলেন বিসিবির হাই পারফরম্যান্স দল থেকে। গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘরের মাঠের নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও নিউজিল্যান্ড সফরে জাতীয় দলের খণ্ডকালীন ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন ডেভিড হেম্প। সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে পুরোদমে বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করছেন বারমুডার এই কোচ। যেখানে তিনি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে একরকম বাংলাদেশকে দেখেছেন, টেস্টে আরেক রকম। পুরো অভিজ্ঞতা নিয়ে ইংল্যান্ডে ছুটিতে যাওয়ার আগে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন হেম্প।

প্রশ্ন:

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল? বাংলাদেশের পরের টেস্ট আগামী আগস্টে। এর মধ্যে তাদের কী করণীয় আছে?

ডেভিড হেম্প: ওরা যাওয়ার আগে আমি ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশেষ করে দিপু (শাহাদাত হোসেন), জয় (মাহমুদুল হাসান) আর জাকির (জাকির হাসান)—ওদের আগামী দুই মাসে কী করণীয়, তা নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলেছি। চান্ডিকা (হাথুরুসিংহে) ফিরে এলেও বিষয়টি দেখবে, ওরা কেমন করল, সামনে কেমন হবে তাদের প্রস্তুতি। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে সবাই যখন ফিরবে, তখন টেস্ট দলের ব্যাটসম্যানদের বিষয়টিও মাথায় রাখা হবে। আর আমি আলাদা করে ওদের এই সিরিজের শিক্ষাটা কাজে লাগাতে বলেছি। কৌশলগত ও মানসিক দিক থেকে কিছু জায়গা চিহ্নিত করেছি, যা নিয়ে কাজ করতে হবে।

রিশাদ হোসেনের প্রশংসা করেছেন হেম্প
প্রথম আলো
প্রশ্ন:

সিলেট থেকে চট্টগ্রামের চারটি ইনিংসের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করেছে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় ইনিংসে। আপনার কী মনে হয়, টেস্ট সিরিজের আগে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে পারলে টেস্ট সিরিজে আরও ভালো ব্যাটিং দেখা যেত?

হেম্প: হ্যাঁ, সবচেয়ে বেশি সময় ব্যাটিং করেছি চট্টগ্রামের শেষ ইনিংসে। সিদ্ধান্তও ভালো নিয়েছি। ততক্ষণে ওরা জানে যে প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের শক্তির জায়গাগুলো কী, কীভাবে ওই হুমকিগুলো সামলে রান বের করতে হবে। এটা আসলে সঠিক প্রস্তুতি ও সে অনুযায়ী প্রয়োগের ব্যাপার। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচির চ্যালেঞ্জ তো আছেই। আপনার যদি প্রস্তুতির সময় না থাকে, তাহলে নেই। যা আছে এর মধ্যেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। লাল বলের খেলা মানেই ক্রিজে টিকে থাকা, যে চ্যালেঞ্জ সামনে আছে, সেটা সামলে নেওয়া। তবে হ্যাঁ, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমাদের খুবই নিখুঁত ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। তাহলে ভালো করার সুযোগ বাড়বে।

রিশাদ লম্বা, যেই লেংথের বলটা অন্যদের জন্য ভালো, সেটা তার জন্য মারার বল। এটা রিশাদের ইতিবাচক দিক।
ডেভিড হেম্প
প্রশ্ন:

আপনি জাতীয় দলের তরুণ ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে বিসিবি হাই পারফরম্যান্স বিভাগেও কাজ করেছেন। সেখানে কাজ করার যথেষ্ট সময় থাকে। জাতীয় দলের সূচির কারণে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করার তেমন সুযোগ থাকে না। এ ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

হেম্প: আমি এভাবে দেখছি না। আমি আগে একটা দলের কোচ ছিলাম। এখন ভিন্ন একটা দলকে কোচিং করাই। পার্থক্য এটাই। জাতীয় দলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক আগ্রহ, অনেক আলোচনা থাকবে। আমি সেদিকে না তাকিয়ে নিজের কাজের দিকে মনোযোগ দিই। আমি নিজে যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সেটাই আসল। আমি ছেলেদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। সেটা আমার কাজটাকে সহজ করে তোলে।

প্রশ্ন:

জাকের আলী ও রিশাদ হোসেনের মতো নতুনেরা ভালো করেছেন। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

হেম্প: রিশাদ লম্বা, যেই লেংথের বলটা অন্যদের জন্য ভালো, সেটা তার জন্য মারার বল। এটা রিশাদের ইতিবাচক দিক। বেশ সোজা মারে, লং অন আর মিডউইকেটের দিকে। বিশেষ করে স্পিনারের বলে। ম্যাচে হয়তো এখনো দেখানোর সুযোগ হয়নি। কিন্তু সে অফ সাইডেও ভালো খেলে। তবে সে এখনো নিজের ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছে। কোন সময় কোন শট খেলতে হবে, তা তার জানতে হবে। তবে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে সে দারুণ খেলেছে। জাকেরও টি-টোয়েন্টিতে দারুণ খেলেছে। তাকে আমি দেখছি এশিয়ান গেমস থেকে। নিজের খেলায় সে যথেষ্ট উন্নতি এনেছে।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে আপনাকে অনেক সময় নিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। তাঁর মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের টি-টোয়েন্টি দলে ফেরাকে কীভাবে দেখেন?

হেম্প: তার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে যেকোনো দলই পেতে চাইবে। সে অনুশীলনে উদাহরণ সৃষ্টি করছে। আমাদের দলটা কিন্তু তরুণ। ওদের মধ্যে যদি এমন একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকে, যে অতীতে সব ধরনের পরিস্থিতি দেখেছে, শিখেছে এবং উন্নতি করেছে, এটা অবশ্যই দলের জন্য ভালো।

ছন্দে নেই লিটন
শামসুল হক
প্রশ্ন:

লিটন দাসের কী হলো? কৌশলগত বা মানসিক কোনো সমস্যা?

হেম্প: না, আমার তেমন মনে হয় না। আমার মনে হয় সে যেভাবে খেলে সফল হয়েছে গত দু-তিন বছর, তাকে সেখানে ফিরে যেতে হবে। যখন সে সফল হয়েছে, তখন তার প্রস্তুতি কেমন ছিল, সেটা দেখতে হবে। নিউজিল্যান্ডে তাকে ভালোই মনে হয়েছে। ভালো দুটি ইনিংস ছিল। এই সিরিজটা খারাপ গেছে। এমন একটা সিরিজ যেতেই পারে। ভালো খেলোয়াড়েরা এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায়। আশা করি, লিটনও ঘুরে দাঁড়াবে।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

সামনে অনেক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, বিশ্বকাপও আছে। কেমন সম্ভাবনা দেখছেন?

হেম্প: দেখুন, আমরা টি-টোয়েন্টিতে একটা ভালো ভিত্তি দাঁড় করাতে পেরেছি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছি। টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলেও সিরিজটি যেকোনো দিকেই যেতে পারত। আমরা যে মানসিকতা নিয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজ খেলেছি, সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। ইতিবাচক ক্রিকেট খেলে যেতে হবে, ব্যাটিং ও বোলিংয়ে। এই মানসিকতা ধরে রাখতে পারলে ফল আসবেই