নাজমুল হোসেনের সাক্ষাৎকার
‘সাফল্যে মাশরাফি ভাই এগিয়ে, তবে আমার সাকিব ভাইয়ের চিন্তা ভালো লাগত’
সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন। পনের মাসের অধিনায়ক জীবনে যে সব অর্জন নিয়ে গর্ব করেন, সেসবও। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে অধিনায়ক-জীবনের অতৃপ্তি দিয়ে। যেসব অধিনায়কের অধীনে খেলেছেন তাঁদের সম্পর্কে যেমন বলেছেন, তেমনি জানিয়েছেন তাঁর প্রিয় অধিনায়কের নামও। কথায় কথায় এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমস্যাগুলোও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উৎপল শুভ্র।
অধিনায়ক হিসেবে আপনার সবচেয়ে স্মরণীয় অর্জন হিসেবে পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার কথাই বলবেন বলে অনুমান করেছিলাম। কারণ, এটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা সাফল্য। অধিনায়ক হিসেবে এর বিপরীত অভিজ্ঞতার কথা যদি জানতে চাই... সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা কী?
নাজমুল: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ…আমি ওখান থেকে শিখেছি, যেটা আমার জন্য ইতিবাচক দিক। তবে পরে মনে হয়েছে, ওই সময়ে আমি আমার প্লেয়ারদের, বিশেষ করে দু-একটা প্লেয়ারকে আরেকটু আগলে রাখতে পারতাম। আমার হয়তো মনে হয়েছিল, আমার ওই ক্ষমতাটা নেই, আসলে ওই ক্ষমতাটুকু আমার ছিল। এটা নিয়ে একটু খারাপ লাগা কাজ করে। ভালো লাগাও কাজ করে যে নেক্সট টাইম এ রকম কিছু হবে না।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা যখন বললেনই, আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে ও রকম ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা কী? হঠাৎ করেই সেমিফাইনালে ওঠার এমন একটা সুযোগ এসেছিল, আপনারা সেই চেষ্টাই করলেন না কেন?
নাজমুল: এখানে তো গুলিটা আমার দিকেই এসেছে। কারণ, আমার প্রেস কনফারেন্স। ওই দিন আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে সংবাদ সম্মেলনটা করেছি। অমন একটা ম্যাচ শেষ করেই সংবাদ সম্মেলনে চলে গেছি। হৃদয় কোথায় ব্যাটিং করেছে, সেটাও ভুল বলেছি। এ কারণেই বিতর্কটা বেশি হয়েছে। অথচ ঘটনা হলো, যখন ওই সমীকরণটা (বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার) হয়েছে, আমি সঙ্গে সঙ্গে কোচকে (চন্ডিকা হাথুরুসিংহে) ফোন করে বলেছি, নো ম্যাটার হোয়াট, আমরা অবশ্যই জেতার জন্য যাব। এরপর ও রুমে ডেকেছে, সেখানে পুরো সমীকরণ অ্যানালিস্টের কাছ থেকে বের করা হয়েছে। আমি বলেছি, কোচ, আমি যাব এটাতে, হেরে গেলে যাব। আমি এটা দায়িত্ব নিয়ে বলছি।
এটা তো আসলে আলোচনারই কিছু ছিল না। ওই সমীকরণ না মিলিয়ে জিতেও তো কোনো লাভ ছিল না, ওই জেতা আর হারা একই কথা...বাংলাদেশের তাই চোখ বুঁজে ওই টার্গেট ছুঁতে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ছিল না?
নাজমুল: এখন আসলে এটা বলাটা খারাপ...অনেকে মনে করবে কোচ নেই, যা খুশি তা বলছে। তবে আপনি খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। কোচকে যখন বলছি, রাজি হয়নি প্রথমে। বলেছে, এটা সম্ভব না, হবে না, এই উইকেটে হবে না। আমি বলেছি, না হলে না হবে।
তারপর আমাদের টিম মিটিং হয়েছে। সব প্লেয়ার চেয়েছে, না, (সেমিফাইনালে উঠতে) আমাদের যেভাবে জেতা লাগে, সেভাবেই জেতার জন্য খেলব। এরপর আমরা মাঠে গেছি। আমাদের প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের চিন্তা ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের সুযোগ একেবারে হাতছাড়া হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করব। প্রথমে কোচ অ্যাগ্রি না করলেও পরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে অ্যাগ্রি করেছে।
আই ওয়াজ দ্য ফার্স্ট পারসন, যে শুরুতেই বলেছিলাম, আজকে আমরা এই ঝুঁকি...ঝুঁকিই-বা কী, হারলে হারব। কিন্তু ওটা (আস্কিং রেট) মিলিয়ে যাব, কারণ এটা অনেক বড় অ্যাচিভমেন্ট হবে।
এর আগে ওই বিশ্বকাপেই কোচের সঙ্গে আমার একবারই খুব ভালো গ্যাঞ্জাম লেগেছে। যেদিন ও বলেছে আমরা সুপার এইটে উঠছি, এখন আমাদের জন্য বোনাস। আমি এটা কখনো মেনে নিতে পারিনি। আমরা এখানে সুপার এইটে ওঠার জন্য এসেছি নাকি?
সেন্ট ভিনসেন্টে খেলা, আমাদের কন্ডিশনে খেলা হচ্ছে...আপনি কীভাবে বলেন যে আমরা ভালো জায়গায় যাব না? এটা নিয়ে ওর সঙ্গে আমার অনেক কথা-কাটাকাটি, অনেক কিছু হয়েছে। ওই দিন আমরা মাঠেই গেছি, যা করতে হয় করব ঠিক করে। এরপর তো যা হওয়ার হলো। গুলিটা গেল যে, ক্যাপ্টেন এগুলো কোনো পরিকল্পনাই করেনি।
আপনার কথা সত্যি বলেই ধরে নিচ্ছি, তাহলে মাহমুদউল্লাহর ওই ঠুকঠুক ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা কী?
নাজমুল: ওই ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। রিয়াদ ভাইকে অনেকে দোষ দিয়েছে। তবে আমি আউট হয়ে আসছি, সাকিব ভাই আউট হয়ে গেছে। আমরা তখন ডাগআউটে বসা, তখন কোচের অনেকগুলো মেসেজ গেছে। কিন্তু আমি জানি না, কেউই জানি না…মেসেজটা আসলে কী গেছে। এখানে একটা কোয়েশ্চেন মার্ক এখনো আছে।
পরে মাহমুদউল্লাহকে জিজ্ঞেস করেননি?
নাজমুল: ওই পরিবেশ পরে আর ছিল না।
আবার অধিনায়কত্ব প্রসঙ্গে আসি। আপনি তিন ফরম্যাটেই ক্যাপ্টেনসি করেছেন। তিনটির ক্যাপ্টেনসিতে মূল পার্থক্যটা কী?
নাজমুল: আমার কাছে মনে হয় টেস্টে খুব ধৈর্য নিয়ে ক্যাপ্টেনসি করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। খুব তাড়াতাড়ি পরিকল্পনা চেঞ্জ করলে সফল না হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। ওয়ানডেতে খেলাটা চেঞ্জ হতে থাকে। ওয়ানডেতে ট্যাকটিকসের পার্টটা টেকনিক্যাল পার্টের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। টি–টোয়েন্টি নির্ভর করে ওই দিন আসলে কোন উইকেটে কীভাবে খেলা হচ্ছে, প্রতিপক্ষ কারা। প্রতি ওভারে ওভারে, বলে বলে চিন্তা করতে হয়...এই বলে আমি কী করতে চাই, এই বলে ফিল্ড প্লেসমেন্ট কেমন হবে বা এই বোলারকে দিয়ে আমি কী বল করাতে চাই, কোন সময় করাতে চাই। আগে থেকে তো একটা পরিকল্পনা থাকেই, তবে মাঠে গেলে অনেক কিছুই বদলে যায়।
আপনি তো অনেকের অধিনায়কত্বে খেলেছেন। মুশফিক, মাশরাফি, সাকিব, তামিম এমনকি লিটনের অধিনায়কত্বেও। অধিনায়ক হিসেবে তাঁদের এমন কোনো গুণ কি চোখে পড়েছে, যা আপনি নিজের মধ্যে নিতে চেয়েছেন?
নাজমুল: মাশরাফি ভাইকে দিয়ে যদি শুরু করি, ওনার মধ্যে বিশ্বাসটা ছিল খুব বেশি। পরিস্থিতি যা-ই থাক, জিতে যাব, হয়ে যাবে। আমরা হারিয়ে দেব। এবং এই জিনিসটা হতো। আমি চেষ্টা করি এই জিনিসটা নেওয়ার। নেওয়ার বলতে কী, আমি এই জিনিসটা অনেক ফলো করেছি। এই জিনিসটা আমার খুবই ভালো লাগত।
মুশফিক ভাই মাঠের বাইরে খুবই গোছানো। সবকিছু প্ল্যানিং করেন। কীভাবে কী করলে প্রতিপক্ষকে হারাতে পারি। এই জিনিসগুলো খুব ভালো লাগত। ওনার আন্ডারে যদিও খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলি নাই। খেলিই নাই মনে হয়।
কেন, ২০১৭ সালে ক্রাইস্টচার্চে আপনার টেস্ট অভিষেকের সময় মুশফিক ক্যাপ্টেন ছিলেন না?
নাজমুল: না, ওই টেস্টে মনে হয় তামিম ভাই ক্যাপ্টেন ছিলেন।
ওহ্, আচ্ছা। তাহলে বাকিদের সম্পর্কে বলুন...
নাজমুল: সাকিব ভাইয়ের মূল যে জিনিসটা..খুবই অ্যাগ্রেসিভ ক্যাপ্টেন। মাঠে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে খুব ক্লিয়ার। এবং খুবই অ্যাটাকিং ক্যাপ্টেন।
তামিম ভাইয়ের কথা বললে উনি প্লেয়ারদের প্রতি খুব কেয়ারিং। প্লেয়ারদের, পুরো দলকে মোটিভেট করে বোঝাতে পারতেন, আমরা দল হিসেবে কোথায় যেতে চাই। সবাইকে সমান প্রায়োরিটি দেওয়ার চেষ্টা করতেন, যেটা কিনা একজন অধিনায়কের জন্য খুব কঠিন; কিন্তু উনি চেষ্টা করতেন।
একটা রিসেন্ট উদাহরণ দিই—গত বিপিএলে আমার ম্যাচ খেলার সুযোগ হচ্ছিল না। আমি তাই আগে প্র্যাকটিসে যেতাম। একদিন প্র্যাকটিসে থ্রোয়ারের বল আমার মাথায় লেগেছে। লাগার পর মাথাব্যথা করছিল বলে আমাকে মেডিকেল রুমে অবজারভেশনের জন্য রেখে দিয়েছিল। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। উনি মাঠে ঢুকে এই ঘটনা শুনে সোজা মেডিকেল রুমে গিয়ে আমার খোঁজখবর নিলেন। ওই দিন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলা ছিল, তারপরও উনি এসে ভালোমতো আমার খোঁজখবর নিয়ে, একেবারে যতটুকু সম্ভব টেক কেয়ার করে, তারপর মাঠে খেলার মধ্যে ঢুকেছেন। এটা আমার জন্য খুবই ভালো লাগার একটা ব্যাপার ছিল। শেখার কথা যদি বলেন, অনেক কিছু শিখেছিও। যে আমি অধিনায়ক, তার মানে আমার অনেক দায়িত্ব। শুধু মাঠের ভেতরে না, বাইরেও। এই জিনিসটা সারা জীবন আমার মনে থাকবে।
অধিনায়ক হিসেবে তাঁদের মধ্যে আপনার চোখে নাম্বার ওয়ান কে?
নাজমুল: আমার সব সময় সাকিব ভাইয়ের অধিনায়কত্ব ভালো লাগত। কারণ, আমি নিজে সব সময় অ্যাটাকিং চিন্তাভাবনা পছন্দ করি। সাকিব ভাই অ্যাগ্রেসিভ লোক, অ্যাগ্রেসিভ চিন্তা করে। জেতার জন্য ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে। আমি ওনার অধিনায়কত্ব খুব এনজয় করেছি। সাফল্যের দিক থেকে মাশরাফি ভাই ওনার অনেক ওপরে। কিন্তু আমার সাকিব ভাইয়ের চিন্তাভাবনা ভালো লাগত।
এটা তো শুধু আপনার অধিনায়কদের কথা হলো। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে সব মিলিয়ে আপনার সবচেয়ে পছন্দের অধিনায়ক কে?
নাজমুল: ধোনি।
কী কারণে? ধোনির কী ভালো লাগে?
নাজমুল: ডিসিশন মেকিং এবং প্রসেস। ওর যত ইন্টারভিউ দেখেছি সবগুলোতেই একটা কথা বলেছে, ও প্রসেসে বিশ্বাসী। কাছ থেকে তো আসলে কথা হয়নি বা সুযোগ হয়নি কখনো। তবে ওর ডিসিশন মেকিং আর সব সময় প্রসেসে বিশ্বাসটা খুব ভালো লাগে। প্রসেসটা ফলো করলে চাপ কমে যায়। জেতা-হারার কথা চিন্তা না করে এই সময়ে আমি কীভাবে খেলতে চাই; ওর ইন্টারভিউ বা খেলা দেখে এটাই মনে হয়েছে।
অধিনায়ক হিসেবে আপনার বেশ কিছু সাফল্য যেমন আছে, তেমনি এটাও তো বাস্তবতা যে আপনার সময়েই ১৯ বছর পর বাংলাদেশ ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে নেমে গেছে। এটা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে না?
নাজমুল: অবশ্যই। অধিনায়ক হিসেবে এটা খুবই হতাশার। এর পেছনে আমি মনে করি খেলোয়াড়দের দোষ। আমরা সব সময় সবাই বলছি, আমাদের অ্যাবিলিটি আছে, কিন্তু আমরা কিন্তু ওই অনুযায়ী পারফর্ম করছি না। অধিনায়ক হিসেবে আমি এই দায়িত্বটা নিচ্ছি যে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলিনি। কেন খেলিনি, তার অনেক কারণ। প্লেয়াররা ভালো না খেললে অনেক সময় আমরা ফ্যাসিলিটিজের কথা বলি, কিন্তু দিন শেষে খেলোয়াড়েরা যে ফ্যাসিলিটিজ পাবে, তার মধ্যেই সেরা খেলাটা খেলতে হবে। ওয়ানডেতে আমরা অনেক দিন ধরে ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমাদের ভালো টুর্নামেন্ট হয়। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়, আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারিনি। পাশাপাশি এটাও সত্য, বেশ কিছু নতুন খেলোয়াড় এসেছে। আমি আশা করব, কিছু সময়ের মধ্যে এটা পরিবর্তন হবে।
আমাদের জাতীয় দল যে ফ্যাসিলিটিজ পায়, এর থেকে ভালো পাওয়া উচিত। ডোমেস্টিক সার্কিটে যারা আছে, যারা স্কুল ক্রিকেট খেলে বা যারা একাডেমিতে প্র্যাকটিস করে, বা যারা এইচপি, ‘এ’ টিম...যে যে জায়গায় খেলা হয়, ঢাকা লিগ বলেন, ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট বলেন...এই পুরো স্ট্রাকচারটাতে আমাদের অনেক উন্নতির জায়গা আছে।নাজমুল হোসেন
হ্যাঁ, বাংলাদেশ দল তো একটা পালাবদল বা ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে...
নাজমুল: আমি আসলে এই ট্রানজিশনে বিশ্বাসী না। দিন শেষে অবশ্যই নতুন খেলোয়াড় আসবে, তাদের জন্য হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু সবার যদি স্কিল থাকে, ওই ধরনের প্রস্তুতি যদি নিই, ওই ধরনের ফ্যাসিলিটিজ যদি আমরা পাই, প্লেয়াররা যদি ওভাবে মেহনত করে, তাহলে আসলে ট্রানজিশন বলে কিছু নাই।
কিন্তু ট্রানজিশন তো থাকেই, সাকিব-তামিমকে তো আর আপনি রাতারাতি রিপ্লেস করতে পারবেন না...
নাজমুল: হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্যি।
ট্রানজিশনের কথা যখন এলই, আপনার কি মনে হয়, বাংলাদেশের সিনিয়ররা একটু বেশি সময় থেকে গেছেন। পরিকল্পনা করে আরেকটু আগে থেকেই তাঁদের বিদায় দেওয়া উচিত ছিল?
নাজমুল: এটা যদি আরও আগে থেকে করা যেত, অবশ্যই আমার মনে হয় আরেকটু বেটার হলেও হতে পারত। এটা আসলে এখন চলে গেছে, এটা নিয়ে কথা বলে লাভ নাই। কিন্তু আমার মনে হয় যে খেলোয়াড়রা এখন খেলছে, তারা যে অনেক নতুন, সেটা বলাটাও ভুল হবে। আপনি যদি আশপাশের দেশের প্লেয়ারদের দেখেন, এরা শুরু থেকেই ভালো খেলে। একজন ভালো না খেললে আরেকজন খেলে। আরেকজন না খেললে অন্য একজন এসে ভালো খেলে।
অন্য দেশে যে নতুন কেউ এসেই ভালো খেলে, সেটার পেছনে তো সেই দেশের ক্রিকেট–কাঠামোর বড় ভূমিকা। ক্রিকেট ফ্যাসিলিটিজেরও। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সেভাবে তৈরি করে বলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই তারা পারফর্ম করতে পারে। বাংলাদেশে তো সেই সুযোগ-সুবিধাই নেই, আশা করেন কিভাবে?
নাজমুল: কথাটা ঠিক। সাধারণ মানুষ বলেন বা আমরা যারা খেলি, বা যারা খেলা ফলো করে, আমরা সবাই চিন্তা করি অস্ট্রেলিয়াকে হারাব, ভারতকে হারাব, ইংল্যান্ডকে হারাতে চাই, তাই তো? কিন্তু ওই ধরনের ফ্যাসিলিটিজ কিন্তু আমাদের নাই। আমরা ওই ধরনের চাচ্ছিও না। কাছাকাছি, যতটুকু করা সম্ভব। যতটুকু আমাদের ক্ষমতা আছে, ওই অনুযায়ী যদি থাকে, ক্রিকেটটা আরও ভালো অবস্থানে থাকতে পারত। কারণ, আমি মনে করি আমাদের আসলে ও রকম ফ্যাসিলিটিজ তৈরি করা সম্ভব। এই জায়গায় আমাদের অনেক বড় ঘাটতি আছে। এটা সবাই স্বীকার করবে। আমাদের জাতীয় দল যে ফ্যাসিলিটিজ পায়, এর থেকে ভালো পাওয়া উচিত। ডোমেস্টিক সার্কিটে যারা আছে, বা যারা স্কুল ক্রিকেট খেলে বা যারা একাডেমিতে প্র্যাকটিস করে, বা যারা এইচপি, ‘এ’ টিম...যে যে জায়গায় খেলা হয়, ঢাকা লিগ বলেন, ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট বলেন...এই পুরো স্ট্রাকচারটাতে আমাদের অনেক উন্নতির জায়গা আছে। যদি এই জায়গাটা ঠিক হতো, তাহলে বললাম না যে, অন্য দেশগুলোতে কেউ এসেই পারফর্ম করে, তখন দেখতেন আমাদের দেশেও এটা হতো।
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে শুধু কথাই হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে এটা আপনার জন্য পীড়াদায়ক না? ধরুন, পটুয়াখালীর একজন ক্রিকেটার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ঠিক করল, সে দিনে ছয় ঘণ্টা/আট ঘণ্টা করে প্র্যাকটিস করবে। কিন্তু করবেটা কোথায়? সে জন্য তাকে ঢাকা আসতে হবে। এসে মিরপুরে গিয়ে দেখবে, সেখানে জাতীয় দল, এইচপি, ‘এ’ দলেরই জায়গা হচ্ছে না। আমার প্রশ্ন হলো, সারা দেশে কেন এমন দশটা/বারোটা 'মিরপুর' থাকবে না?
নাজমুল: আমার যতটুকু মনে পড়ে, আমাদের ছয়টা জায়গায় ছয়টা ভালো স্টেডিয়াম আছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, ফতুল্লা, বরিশাল...আটটা বলে ফেললাম। এগুলোতে যদি প্রপার ফ্যাসিলিটিজ থাকে, আমাদের দেশের ক্রিকেটের জন্য যথেষ্ট। প্রপার মানে আমি বলছি প্রপার—একটা ভালো জিম, একটা ইনডোর, ভালো কয়েকটা মাটির উইকেট, একটা মাঠ এবং কিছু কোচিং স্টাফ। কারণ, মাঠ তো আমাদের আছেই। এসব যদি একটু সুন্দরভাবে গোছানো থাকে…তাহলে যে ছেলেটা বাদ পড়বে, সে রাজশাহীর হোক বা বরিশালের, ওখানে ট্রেনিং করে ও যখন আবার লিগ খেলতে আসবে, পারফর্ম করে কামব্যাক করবে। এসব ভাবলে ক্রিকেটার হিসেবে খুবই কষ্ট লাগে। আমি কোনো প্লেয়ারকে ডিফেন্ড করছি না, কিন্তু অনেক সময় আমাদের খেলোয়াড়দের অনেক বেশি দোষারোপ করা হয়, অনেক বেশি কথা শোনানো হয়, সমালোচনা করা হয়, সাধারণ মানুষ অনেক কথা বলে। কিন্তু যে খেলোয়াড়টা এখান পর্যন্ত আসে, সে কিন্তু অসম্ভব কষ্ট করে আসে। নিজের তাগিদে আসে যে, না, আমার ভালো করতে হবে। অবশ্যই ক্রিকেট বোর্ড হেল্প করে, কিন্তু আমার মনে হয় ওদের নিজেদের যে কষ্টটা এটা অন্য লেভেলের। এই জায়গায় যদি আরেকটু হেল্প প্লেয়াররা পায়, প্লেয়াররা আরও ভালোভাবে পারফর্ম করবে। এই যে ১০ নম্বর র্যাঙ্কিং, এটা আসবে না।
এমন কিছু কি আছে, অধিনায়কত্ব ছাড়ার আগে যা অর্জন করতে চান বা এভাবে যদি বলি, অধিনায়ক হিসেবে কি নির্দিষ্ট কোনো স্বপ্ন আছে?
নাজমুল: আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, এই টিমটা ২০২৭ বিশ্বকাপে সেরা চারে থাকবে। এই দলটা সেই ক্ষমতা রাখে। আমি যদি অধিনায়ক থাকি ওই সময়, তাহলে আমি এই জিনিসটা দেখতে চাইব।
আগে তো ২০২৭ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে হবে, তা-ই না?
নাজমুল: তা তো করতে হবেই। কেন, আমরা কি সামনে সিরিজ জিতব না? গত বিশ্বকাপের আগে আমরা মনে হয় সাত নম্বরে ছিলাম, এবার চার/পাঁচে থাকতে পারলে ভালো লাগবে।