প্রথমেই যদি জানতে চাই, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের জীবনটা আসলে কেমন?
নাজমুল: যদি শুধু আমার কথা বলি, অধিনায়ক হওয়ার আগেও আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় টার্গেটেড প্লেয়ার ছিলাম। এর একটা কারণ, আমার পারফরম্যান্স আপ টু দ্য মার্ক নয়। এটা আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি। অধিনায়ক হওয়ার পর এটা আরও বেড়ে গেছে। আমাদের দেশে ক্যাপ্টেন্সি করার চ্যালেঞ্জ হলো ওই মানুষটার ওপর ফোকাসটা অনেক বেশি বেড়ে যায়। তার পারফরম্যান্স, টিম কীভাবে চালাচ্ছে, কীভাবে হ্যান্ডল করছে প্লেয়ারদের—সবকিছু মিলিয়ে মূল ফোকাসটা তার ওপর থাকে। এটা আমি এনজয়ই করি।
তাহলে আর সমস্যা কী?
নাজমুল: সমস্যা হলো, আমাদের দেশে ক্যাপ্টেনকে সাহায্য করার লোক কম। ক্রিকেট বোর্ড বলেন বা আশপাশে যারা আছে, তাদের কথা বলেন। আস্তে আস্তে কিছু চেঞ্জ হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও হবে। আমার কথা হলো, কাউকে অধিনায়ক করলে তার ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। তাকে প্রায়োরিটি দিতে হবে, অথরিটি দিতে হবে। এমনিতেই বাংলাদেশে অধিনায়কত্ব করা কঠিন। কারণ, আমাদের টিমের পারফরম্যান্স ভালো নয়, আমি নিজে এত ধারাবাহিক পারফরমার নই...। বিরাট কোহলির মতো নিয়মিত রান করলে এত কঠিন হতো না, বাংলাদেশ অনেক জিতত, সহজ হয়ে যেত। আমার তো মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া টিমের ক্যাপ্টেন্সি করা সহজ।
এসব কারণেই কি গত বছর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন?
নাজমুল: অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলাম, কারণ আমি যা চাচ্ছিলাম, পাচ্ছিলাম না। আবার দেখা গেছে, আমি কিছু কাজ করছি, সেটি সফল হলে কৃতিত্বটা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। আর খারাপ কিছু হলে দোষটা আমার ওপর চলে আসছে। আমি এমন একটা ছেলে, নিজের কথা নিজে বলতে পারি না। হয়তো এটা আমার ঘাটতিই, বলতে পারি না যে আমি এটা করলাম। আমি যেভাবে দলটা চালাতে চাই, যে দলটা চাই, যেভাবে টিমের একটা কালচার তৈরি করতে চাই, তা আমি মনমতো করতে পারছিলাম না। এ কারণে আমার মনে হচ্ছিল, যদি টিম আমি চালাই, দল ভালো না করলে সেই দায়িত্ব আমার, আমি সবার কাছে সামনে জবাবদিহি করতে রাজি। কিন্তু যদি আমাকে ওই দায়িত্ব না দেওয়া হয়, তারপরও জবাবদিহি আমাকেই করতে হয়, তাহলে এখানে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।
তা সমস্যাটা কীভাবে মিটল যে আপনি মত বদলালেন?
নাজমুল: প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসেছিলাম, বসার পর উনি ভালোভাবে জিনিসটা ব্যাখ্যা করেন। তারপর নির্বাচকদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁরা আমাকে একদিন জিজ্ঞেসও করেছেন…একটা নিউজও হয়েছিল যে নির্বাচকদের জন্য আমি ছেড়ে দিতে চাইছি। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো, এখন তো আরও ভালো। ওই সময় ওনারাও নতুন নতুন, আমিও নতুন অধিনায়ক। অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগেও আমি সব সময় বলতাম, অধিনায়ককে কিন্তু অনেক সময় দিতে হবে। না হলে এই ট্রাস্টের বিষয়টা আসবে না। এখন যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এই জায়গাগুলো অনেক ভালো।
তখন আপনি এমনও তো বলেছিলেন, তিন সংস্করণে একজন অধিনায়ক থাকাই ভালো। তাহলে টি-টোয়েন্টি ছাড়লেন কেন? নাকি আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে?
নাজমুল: না, আমি নিজেই ছেড়ে দিয়েছি। একটাই কারণ, আমি ব্যাটিংটা উপভোগ করতে চাই। ব্যাটিংয়ের পেছনে আমি সময় দিতে পারছিলাম না। টি-টোয়েন্টি খেলাটা খুব ফাস্ট। প্রতি বলে বলে ডিসিশন নিতে হয়। এরপর ব্যাটিং...ওয়ানডেতে আমি সময় পাই, টেস্টে আমি সময় পাচ্ছি, টি-টোয়েন্টিতে আমার নিজের ব্যাটিংয়ের জন্য ওই সময়টা পাচ্ছিলাম না। যে কারণে আমার ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছিল না। অথচ আগের বছরই (২০২৩) ইংল্যান্ডের সঙ্গে আমি ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলাম, তখন ওরা চ্যাম্পিয়ন। এরপর আর সেভাবে ভালো করতে পারিনি। চিন্তা করে দেখলাম, টিমের কথা বেশি ভাবতে ভাবতে নিজের ব্যাটিংয়ের পেছনে যথেষ্ট সময় দিতে পারছি না।
সেই সময়টা কি প্র্যাকটিসে, নাকি মাঠের কথা বলছেন...ম্যাচে ব্যাটিং করার সময়ও তো অধিনায়কের মাথায় নানা কাটাকুটি চলে...
নাজমুল: না, ব্যাটিংয়ের সময় আমার কখনো মনে হয় না, আমি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। তিন ফরম্যাটের কোনোটাতেই এটা আমার কোনো দিন মনে হয়নি। প্র্যাকটিসে মনে হচ্ছিল যে সময়টা হয়তো কম পাচ্ছি। আবার ম্যাচে ধরেন আমি ফিল্ডিং করে আসলাম, আমি তো নাম্বার থ্রিতে যাই, অনেক সময় ওপেনিংয়ে যাই, নিজের ব্যাটিংটা আমি কীভাবে করতে চাই, স্কোরবোর্ডে এই রান, এখন আমি কীভাবে ব্যাটিং করব, একটা তো প্ল্যান থাকে। এটাই আমি গুছিয়ে নিতে পারছিলাম না। ওই সময়টা পাচ্ছিলাম না। তখন আমার মনে হয়েছে, আমি বরং শুধু ব্যাটিংটাতে ফোকাস করি। কারণ, আমি আমার মনে হয় এই ফরম্যাটটাতে আমার পক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলা সম্ভব এবং ওই অ্যাবিলিটি আমার আছে।
টি-টোয়েন্টিতে নতুন অধিনায়ক হয়েছেন লিটন। আপনার চোখে লিটন অধিনায়ক হিসেবে কেমন?
নাজমুল: খুব ভালো অধিনায়ক, খুব ভালো। মাঠের ভেতর সিদ্ধান্ত নেওয়া বলেন, চিন্তাভাবনা বলেন, খুব ভালো। আমার বিশ্বাস, সে অধিনায়ক হিসেবে খুব ভালো করবে।
অধিনায়ক লিটনের কী দেখে আপনি এমন বলছেন, নির্দিষ্ট কিছু কি বলতে পারবেন?
নাজমুল: লিটন খুব কম ম্যাচ করেছে তো…তারপরও আমার মনে হয় ও চিন্তাভাবনায় খুব ক্লিয়ার থাকে। খুব বেশি কনফিউশন আমি দেখিনি। যদিও খুব অল্প সময়ে মন্তব্য করা কঠিন। আমার মনে হয়, সময় গেলে আরও বোঝা যাবে। তবে যে কয়টা ম্যাচে আমি মাঠে দেখেছি বা খেলেছি একসঙ্গে, আমি খুব এনজয় করেছি। ও নিশ্চিত ভালো অধিনায়ক হবে।
পূর্ণকালীন অধিনায়ক হিসেবে আপনার ১৫ মাস হয়ে গেল। এই সময়ে অধিনায়ক হিসেবে কী করতে পেরেছেন, কী পারেননি?
নাজমুল: আমি যে রকম পাকিস্তান টেস্ট সিরিজটাকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাখব অর্জনের দিক থেকে। ওই সময়টা চিন্তা করেন, ক্রিকেট বোর্ড ঠিক নেই, সরকার পতন হয়েছে, ড্রেসিংরুমের মধ্যে একটা অশান্তি ছিল সাকিব ভাই, তামিম ভাই ইস্যু। এর পাশাপাশি কোচের সঙ্গে প্লেয়ারদের ঝামেলা, কোচ থাকবে কি থাকবে না, চলে যাবে। এর মধ্যে আমি চেষ্টা করেছি টিমটাকে চালানোর। এই টিমটাকে নিয়ে আমি এগিয়েছি, যেটা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল।
যদি অর্জনের কথা বলি, পাকিস্তানে গিয়ে আমরা টেস্ট সিরিজ জিতলাম, নিউজিল্যান্ডে কখনো ওয়ানডে জিতিনি, ওখানে ওয়ানডে জিতেছি। হোমে টেস্ট জিতেছি। এই জিনিসগুলো আমাকে অনেক আনন্দ দেয়। এটা ভেবে আমার ভালো লাগে যে আমি কিছু একটা করতে পেরেছি, যা আগে কখনো হয়নি।
এমন বিশেষ কিছু কি করেছেন, যা ভেবে ভালো লাগে?
নাজমুল: তাহলে একটা ভেতরের তথ্য আপনাকে বলি—জয়, জাকির ও সাদমান আমার তিনজন টেস্ট ওপেনার। যদি আমি ভুল না করি, গত বছর ১২টি টেস্টের সব কটিতেই ওরা ছিল। ওদের আমি ডিনারে নিয়ে গিয়ে বলেছি, এই ১২ টেস্ট তোমরা তিনজন খেলবে, এর বাইরে কেউ আসবে না। যা আমি করতে পেরেছিলাম। এটা বলাটা বড় ব্যাপার ছিল। কারণ, ওরা ভালোও করছিল না খুব একটা। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, ওই সুযোগটা দিতে হবে। কারণ, ওদের রিপ্লেস করার মতো ভালো কেউ ছিল বলে আমার মনে হয়নি।
যেমন মিরাজের নাম্বার ফোরে ব্যাটিং করাটা। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে করেছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে করেছে ওয়ানডেতে...। এই জিনিসটাও ওর সঙ্গে একদমই খুব ক্লিয়ার ছিল, যদি সাকিব ভাই কোনো কারণে দলে না থাকে, তাহলে ও ৪ নম্বরে খেলবে।
পাশাপাশি পেস বোলার তাসকিন বা যারাই আছে, ওদেরকে যদি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে ওরা বলতে পারবে। আমি চেষ্টা করেছি ওদের যতটুকু সম্ভব টেক কেয়ার করার। বিরতি দিয়ে খেলানোর। এটা ভেবে ভালো লাগে যে সবাইকে পরিষ্কার একটা বার্তা দিতে পেরেছি।
হাসান মাহমুদ যখন দল থেকে বাদ পড়ে, তাকে কিন্তু পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছিল যে হাসান, এই এই জিনিসগুলো ঠিকমতো হচ্ছে না, এগুলো ঠিক করলে তুমি হয়তো টিমে কন্টিনিউ করবে, নয়তো করবে না। আমি একটা কালচার তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম। যেটা হাসান মাহমুদের ক্ষেত্রে যা, আমার ক্ষেত্রেও তা-ই। ও তখন ওটা করতে পারেনি, কিছুদিনের জন্য দলেও কিন্তু ছিল না। ওই কাজগুলো করার পর হাসান মাহমুদ আবার তিন সংস্করণে খেলছে।
আমি যা চেয়েছি, দলে বড় খেলোয়াড় কেউ নেই, ছোট খেলোয়াড় বলেও কেউ নেই। দলের একটা নিয়ম আছে, দলের একটা চাওয়া আছে, তা যেন সবাই ঠিকমতো পালন করে। এই জিনিসগুলো হয়েছে।
রিশাদের ক্ষেত্রে সবাই আমাদের আগের কোচের কথা বলে। এই বিষয়ে অবশ্যই কোচের অনেক ভূমিকা ছিল। কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলেছি, রিশাদকে ম্যাচ খেলতেই হবে। আপনি রিশাদকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো ও বলবে যে আমি ওকে বলেছিলাম, রিশাদ সব ম্যাচ খেলবে। রিশাদ যদি ১০ ওভারে ১০০ রানও দেয় বা টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে ৪০ রান দেয়, তাতে কিছু আসে-যায় না। ও মন খুলে খেলবে। কারণ, আমাদের রিস্ট স্পিনার লাগবে। রিশাদ এখন পিএসএলে গেছে, ভালো করছে, লাস্ট ইন্টারন্যাশনাল সিরিজেও ভালো করেছে। যখন দেখি যে প্লেয়াররা ভালো করছে বা হাসান মাহমুদ খুব ভালোভাবে কামব্যাক করেছে, আমার ওপেনারগুলোকে খেলাতে পেরেছিলাম, পাকিস্তান সিরিজে জিতেছি, তখন মনে হয় যে আমি কিছু একটা করেছি।
হাসান মাহমুদের সমস্যাটা কী ছিল, তা কি বলা যায়?
নাজমুল: মূলত ওয়ার্ক এথিক। যে কারণে সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারছিল না। ও যখন এল, তখন কিন্তু খুব ভালো করছিল। এরপর মাঝখানে একটু ছাড়া ছাড়া। ওই সময় মনে হচ্ছিল, ও একটু সফট হয়ে গেছে।
এসব ঠিক করতে তো ড্রেসিংরুম কালচারটা খুব জরুরি। বাংলাদেশ দলে খেলতে হলে এমন হতে হবে, এই করা যাবে, এই করা যাবে না—এসব পরিষ্কার থাকতে হবে। বাংলাদেশ দলে এটার অভাব আছে বলে মনে হয়, আপনি কী বলেন?
নাজমুল: একদম সত্যি কথা বলি, আমি যখন প্রথম বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হই, সবার আগে আমার এই এজেন্ডাটা ছিল। আমাদের এই এই কিছু রুলস আমাদের থাকতে হবে, এটা এটা করতে হবে। কথার কথা হিসেবে বলি, বল পাশ দিয়ে গেলে ডাইভ দিয়ে হলেও ঠেকাতে হবে। না দিলে তুমি দলে থাকতে পারবে না। কিন্তু এই রুলস প্রয়োগ করতে আমি যেটা প্রথমেই বলেছি, অধিনায়কের ওই রকম প্রায়োরিটি থাকতে হবে, অথরিটি থাকতে হবে, অধিনায়কের প্রতি ওই রকম রেসপেক্ট সবার থাকতে হবে। ওই জিনিসটা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। শুনতে খারাপ লাগলেও এটা সত্যি কথা। যে কারণে একটা অধিনায়ক চাইলেও এটা করতে পারবে না।
এটা দুইটা কারণে—একটা হলো অধিনায়ক ও রকম ধারাবাহিক পারফরমার না। আরেকটা হলো, অধিনায়কের প্রতি বোর্ডের ওই ট্রাস্ট নেই। এখন ধারাবাহিক পারফরমারের কথা যদি বলেন, বাংলাদেশের কথা যদি আমি চিন্তা করি, ও রকম কেউই না। আমাদের সবার ওই জায়গায় উন্নতির দরকার আছে। যেহেতু আমি একজনকে অধিনায়ক বানিয়েছি, তাহলে আমি তার ওপর পুরো ভরসাটাই রাখি। সেটা আমি হই বা দুই দিন পরে মিরাজ হোক বা এখন লিটন আছে, লিটনই হোক। একটা ছেলে যদি এক বছর ধরে খারাপ খেলে, ও কি নিজে থেকে বলবে আমি ক্যাপ্টেন থাকতে চাই। যদি দেখা যায় দলও ভালো করছে না, নিজেও ভালো খেলছে না, সে কিন্তু সরে আসবে। আমি যখন একটা মানুষকে অধিনায়কত্ব দেব, তাকে যেন ওই ক্ষমতাটা দিয়ে দিই। এই ছেলেটা দলের নিয়ম ভেঙেছে, অধিনায়ক চায় না পরের ম্যাচ সে খেলুক, এটা যে কেউ হতে পারে। এই রুলটা তখনই করা সম্ভব, যখন ওই ধরনের অথরিটিটা ক্যাপ্টেনের থাকবে। এটা নিয়ে সম্প্রতি সালাউদ্দিন স্যার (বাংলাদেশ দলের সিনিয়র সহকারী কোচ) এবং (কোচ) ফিল সিমন্সের একটা আলাপ–আলোচনা হচ্ছে। আশা করি, ভালো কিছু হবে।
আপনারা কী করতে চাচ্ছেন, সুনির্দিষ্টভাবে দু–একটা কি বলা যায়?
নাজমুল: সরি, এই বিষয়ে এই মুহূর্তে একদমই বলতে চাচ্ছি না। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।