‘আমি তো বাটপারও না, চোরও না যে দুই নম্বরি করে খাব’

বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞায় হতাশ হয়ে পড়েন জহির রায়হান। খুঁজতে থাকেন বিকল্প পথ। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে পান বৃত্তির সুখবর। ফেডারেশনকে জানান বিষয়টি। কিন্তু ফেডারেশন তাঁকে অনুমতি না দেওয়ায় একপ্রকার জেদ করেই পাড়ি জমান মার্কিন মুলুকে। কাল যুক্তরাষ্ট্র থেকে জহির উদ্দিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অলিম্পিয়ান দৌড়বিদ শুনিয়েছেন দেশ ছাড়ার কারণ আর অ্যাথলেটদের প্রতি ফেডারেশনের অবহেলার গল্প।

প্রশ্ন:

আপনাকে তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না...

জহির রায়হান: কেন খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি তো হারিয়ে যাইনি। আছি তো।

প্রশ্ন:

‎তাহলে কোথায় আছেন?

‎জহির: যুক্তরাষ্ট্রে আছি। এখানে ভালোই আছি।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

যুক্তরাষ্ট্রে কেন?

জহির: দেশে যদি টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ না থাকে, তাহলে সেখানে থেকে কী আর করব। দেখুন, আমার রক্তে এই খেলা। চাইলেও ছাড়তে পারব না। তাই চলে এলাম। এখানে নিয়মিত অনুশীলন করছি।

অ্যাথলেটিকস জহিরের রক্তে। যুক্তরাষ্ট্রে অনুশীলন করছেন জহির
ফাইল ছবি
প্রশ্ন:

দেশে গুঞ্জন চলছে, আপনি পালিয়ে গেছেন...

জহির: আমি কীভাবে পালিয়ে গেলাম...(হাসি)। পালিয়ে কোনো দিন আমেরিকায় আসা যায় না। পালিয়ে নয়, বৃত্তি নিয়ে এখানে এসেছি। যারা এসব গুজব ছড়ায়, তাদের নিয়ে কিছু বলার নেই।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

আগামী মাসেই তো আপনার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যেত। আরেকটু কি অপেক্ষা করা যেত না?

জহির: নিষেধাজ্ঞা উঠলেও কি আর সেভাবে খেলতে পারব? ছয় মাসে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছি। একমাত্র আমিই জানি, মনের ওপর দিয়ে কতটা ঝড় গেছে। এখন ট্র্যাকে নামলে কেমন বা কী করতে পারব, জানি না। দেখা যাক, আমি তো অ্যাথলেটিকস ছাড়িনি। এখানে এসেছি উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য। নিজেকে আরও ভালোভাবে তৈরি করতে চাই।

প্রশ্ন:

শুধুই প্রশিক্ষণের জন্য দেশ ছেড়েছেন, নাকি কোনো অভিমানও ছিল?

জহির: কিছুটা অভিমানও আছে। আমি পদে পদে অবহেলিত। এরপর নানা সমস্যা তো আছেই। শুধু আমি একা নই, প্রত্যেক অ্যাথলেটই অবহেলিত। অ্যাথলেটদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফেডারেশনের কোনো পরিকল্পনা নেই।

শুধু প্রশিক্ষণ নয় অভিমানেও দেশ ছেড়েছেন জহির
প্রথম আলো
প্রশ্ন:

কেমন সমস্যা আর কেনই–বা এমন সমস্যা?

জহির: একজন অ্যাথলেটের সাপ্লিমেন্টে (বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান) যদি মাসে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়, সে কী খাবে আর কী খেলবে। তার তো পরিবারের কথাও ভাবতে হয়। তার ওপর ফেডারেশন নানা চাপ প্রয়োগ করে যায়। কথা বলতে পারবা না, নিষেধাজ্ঞা, বহিষ্কার। ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকিও দেয় ফেডারেশন...আরও কত কী। এরপর রাজনীতি তো থাকেই।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

যুক্তরাষ্ট্রে কি স্থায়ী হওয়ার চিন্তাভাবনা আছে?

‎জহির: সেটা (স্থায়ী হওয়া) সময়ই বলে দেবে। বর্তমানে একটা ক্লাবের সঙ্গে আছি। এখানকার অলিম্পিকের যে কোচরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে ট্রেনিং করছি। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেটদের সঙ্গেও ট্রেনিং করার সুযোগ হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভালোই চলছে।

প্রশ্ন:

বৃত্তি পাওয়ার বিষয়টি কি ফেডারেশনকে জানিয়েছিলেন?

জহির: বৃত্তি পাওয়ার পরই আমি ফেডারেশনকে জানাই। কিন্তু ফেডারেশন আমাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। কয়েক দিন চিন্তাভাবনার পর নিজে নিজেই চেষ্টা করে যাই। শেষ পর্যন্ত সব কাগজপত্র ঠিক করে এ দেশে চলে আসি।

প্রশ্ন:

ফেডারেশন থেকে অনুমতি না দেওয়ার পরও গেলেন কেন?

‎জহির: দেশে থেকে আমি কী করব? আমার ভবিষ্যৎ কী, বলেন। আমি তো বাটপারও না, চোরও না যে দুই নম্বরি করে খাব। খেলাধুলাই আমার সব। এখন যদি খেলতেই না পারি, তাহলে দেশে থেকে কী হবে!

দেশে অ্যাথলেটিকসের ভবিষ্যত দেখেন না জহির
জহির রায়হানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট
প্রশ্ন:

দেশের হয়ে কি আর খেলবেন না?

‎জহির: কেন খেলব না! আসলে দেশের হয়ে আমার খেলাটা নির্ভর করছে এখানে কতটুকু উন্নতি করলাম, তার ওপর। যদি মনে হয়, দেশের হয়ে খেললে ভালো করতে পারব, তাহলে অবশ্যই খেলব। যদি মনে হয় পারব না, তাহলে আর খেলব না। আর ফেডারেশন যদি মনে করে আমাকে তাদের প্রয়োজন, আমাকে ডাকলে আমি খেলব। যেহেতু আমি বাংলাদেশের সন্তান, বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারলেই বেশি ভালো লাগবে।

প্রশ্ন:

সামনের এসএ গেমসে কি আপনাকে দেখা যাবে?

‎জহির: এই গেমসেই যে খেলতে হবে, এমন তো নয়। যখন আমার মনে হবে ভালো কিছু করতে পারব, তখনই আমি দেশের হয়ে খেলব। সেভাবে প্রস্তুত না হয়ে খেললে তো আমার জন্য দেশের রেজাল্টও খারাপ হতে পারে।

প্রশ্ন:

আপনি ফেডারেশনকে উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন। এখন তারা যদি আর না ডাকে?

‎জহির: আমাকে যদি তারা (ফেডারেশন) নষ্ট করে ফেলে, তাহলে সেটা আমার নয়, তাদের ব্যর্থতা। যদি আমাকে খেলতে না দেয়, কোনো সমস্যা নেই। আমি প্রয়োজনে এখানে খেলব। এই ক্লাবের হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেব। সেভাবেই ট্রেনিং করছি। আমার সেই যোগ্যতা আছে বলে বিশ্বাস করি। এখানকার কোচরাও বিশ্বাস করেন, আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব। তবে যেটাই করি না কেন, আমি অ্যাথলেটিকসের সঙ্গেই আছি, থাকব।