ছক্কা মারা নিয়ে সাক্ষাৎকারে রিশাদ, ‘স্লেজিং করছিল তো, তাই একটু অ্যাটাক করেছি’

খেলা শেষ হয়েছে বিকেলে। সিরিজ জয়ের উদ্‌যাপন শেষ করেই রাত সাড়ে আটটার ফ্লাইটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরেছেন রিশাদ হোসেন। চট্টগ্রামের গরমে সারা দিন ম্যাচ খেলার পর ভ্রমণ—শরীরে ক্লান্তি ভর করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু রিশাদের কণ্ঠ শুনে তা মনে হলো না। ফোনের এ পাশ থেকে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের রোমাঞ্চ টের পাওয়া যাচ্ছিল। প্রতিশোধের আনন্দও ছিল। ছক্কায় ছক্কায় টি-টোয়েন্টি সিরিজটা বাংলাদেশকে প্রায় জিতিয়েই ফেলেছিলেন রিশাদ। কিন্তু ২৮ রানের হারে সেটা হয়নি। কাল ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে আর হাতছাড়া করেননি রিশাদ। বোলিংয়ে ১ উইকেট নেওয়ার পর ১৮ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। কাল রাতে প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রিশাদ জানালেন শ্রীলঙ্কাকে সিরিজে হারানোর অনুভূতির কথা। এসেছে লেগ স্পিনের সঙ্গে নিজের ছক্কা মারার দক্ষতার প্রসঙ্গও।

প্রথম আলো:

নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে প্রায় নিয়মিতই একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন। নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলার জন্য এটা কতটা সাহায্য করছে?

রিশাদ হোসেন: টানা সুযোগ পাওয়ার সুবিধা বলতে…আপনি যখন ধারাবাহিকভাবে সুযোগ পাবেন, পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। ভয় কাজ করবে না। কোনটা কীভাবে খেললে ভালো হয়, সেটা নিজের কাছে পরিষ্কার হয়।

অপরাজিত ৪৮ রানের ইনিংস খেলার পথে রিশাদ
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে নিশ্চয়ই অনেক সাহস দিচ্ছেন…

রিশাদ: তা তো অবশ্যই। উনার কথায় ভালো খেলার ইচ্ছা বেড়ে যায়। আমারও বাড়ছে। অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। এটা অবশ্যই আমাকে সাহায্য করছে। আর দলের সবাই তো সমর্থন দিচ্ছেই। সবাই বলছে, তুমি ভালো করলে আমাদের দেশের জন্য ভালো। অনেকগুলো ম্যাচ জিততে পারব।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

অধিনায়কের সমর্থন? লেগ স্পিনারের জন্য সেটাও তো জরুরি।

রিশাদ: হ্যাঁ। শান্ত ভাই (নাজমুল হোসেন) আমার ওপর বিশ্বাস রাখছেন। বলছেন, তুই পারবি।

প্রথম আলো:

বোলিংয়ের ক্ষেত্রে দেখেছি, রান হলেও আক্রমণাত্মক বোলিং করছিলেন। বাউন্ডারির পরও দেখা গেছে আপনি ফ্লাইট দিচ্ছেন। এটা ম্যানেজমেন্টের সমর্থন না থাকলে তো সম্ভব নয়।

রিশাদ: তা তো অবশ্যই। সেটা পুরো দল থেকেই পাচ্ছি।

ম্যাচসেরা হওয়ার পর ধারাভাষ্যকার শামীম আশরাফের প্রশ্নের উত্তরে রিশাদ
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

ব্যাটিংয়ে আসি। আপনি চার-ছক্কা মারতে পারেন, সেটা আগেও অনেকবার দেখিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। কিন্তু হাসারাঙ্গা, পাতিরানা…তাঁরা তো আইপিএল মানের বোলার। তাদের এভাবে এত বিশাল বিশাল ছক্কায় ওড়ালেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

রিশাদ: হা–হা–হা, নাহ্‌, তেমন কিছু নয়। আলহামদুলিল্লাহ।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

একটু বিশ্লেষণ করে বলুন। নিশ্চয়ই ছক্কা মারার পেছনে কৌশলগত কোন ব্যাখ্যা আছে।

রিশাদ: না কোনো লজিক নেই। একদমই নরমাল। মানে বল দেখেছি, মেরেছি। এই আর কি।

প্রথম আলো:

১৮ বলে ৪৮…কোনো পরিকল্পনা ছিল না?

রিশাদ: না, তেমন কিছু নয়। স্লেজিং করছিল তো, তাই একটু অ্যাটাক করেছি (হাসি)।

প্রথম আলো:

পাওয়ার হিটিংয়ের ক্ষেত্রে একেকজন একেকরকম কৌশল কাজে লাগায়। আপনার কোনো নিজস্ব কৌশল আছে?

রিশাদ: আমি সব সময়ই ছক্কা মারার জন্য রেডি থাকি, বিশ্বাস করেন। আমি রেডি থাকি যে সব সময় বল দেখব আর মারব। আর কিছু নয়।

প্রথম আলো:

যে সময় ব্যাটিংয়ে নামেন, তখন সাধারণত মেরেই খেলতে হয়। ম্যাচের পরিস্থিতিও নিশ্চয়ই সাহায্য করে।

রিশাদ: হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। তবে তখন দলের যেটা প্রয়োজন, তা করার চেষ্টা করি। মারতে হলে মারতেই পারি। দরকার হলে সিঙ্গেলও নিই।

প্রথম আলো:

প্রিয় শট? স্লগ সুইপ?

রিশাদ: আমার কোনো প্রিয় শট নেই। যেদিকে বল দেবে, সেদিকেই ঘুরাব (হাসি)।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

বোলিংয়ে কোন জায়গায় উন্নতির সুযোগ দেখেন?

রিশাদ: উন্নতির তো শেষ নেই। অনেক কিছুই উন্নতি করার আছে। আমি ম্যাচ টেম্পারমেন্ট বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ম্যাচে কোন অবস্থায় কী করতে হবে, কখন রান থামাতে হবে, কখন উইকেট নিতে হবে। এসব যেন ভালোভাবে সামলাতে পারি—এসব নিয়ে কাজ করছি।

প্রথম আলো:

আমরা শুনি যে লেগ স্পিনার তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। অনেক বোলিং করতে হয়। অনেক ম্যাচ খেলতে হয়। আপনার ক্ষেত্রে উল্টোটা হচ্ছে। যেকোনো কারণেই হোক, আপনি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত নন। এটাকে কীভাবে দেখেন?

রিশাদ: সুযোগ বলতে আমরা সুযোগ তো কম পাইনি। যেকোনো দলই চাইবে জিততে। এর মধ্যে আমাদের একটা সুযোগ আসুক বা দুইটা—এর মধ্যেই আমাদের ভালো করতে হবে। যতই বলি না কেন, ভালো না করলে সুযোগ হবে না।  

প্রথমবার ওয়ানডে ক্রিকেটে ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে অলরাউন্ডার রিশাদ
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। জায়গা করে নিতে পারবেন বিশ্বকাপের দলে?

রিশাদ: বিশ্বকাপ দেরি আছে। প্রিমিয়ার আছে। জিম্বাবুয়ে সিরিজ আছে। এরপর আমেরিকায় সিরিজ আছে। অনেক খেলা আছে। এত দূর চিন্তা করছি না।

আরও পড়ুন