সাক্ষাৎকারে নজিবউল্লাহ জাদরান

‘জীবনেও ৫০ বা ১০০ করার জন্য খেলিনি’

‘নজিব উইল ফিনিশ ইট’—টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নজিবউল্লাহ জাদরানকে নিয়ে কথাটা বেশ প্রচলিত। সবচেয়ে বেশি বলেন নাকি আফগানিস্তান দলের ইংলিশ কোচ জনাথন ট্রট। বিপিএলে তাঁর দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়েও ‘ফিনিশার’ পরিচিতির মর্যাদা রেখেছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ খেলতে বিপিএল ছাড়ার আগে জাদরান প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন টি-টোয়েন্টি ফিনিশার হিসেবে তাঁর ব্যাটিং–দর্শন নিয়ে।

প্রথম আলো:

ব্যাটিংয়ের জন্য বিপিএলকে সবাই কঠিন টুর্নামেন্ট বলে। আপনি তো বেশ মেরে খেলেন। আপনার কী মত?

নজিবউল্লাহ জাদরান: বিপিএল খেলছি পাঁচ-ছয় বছর। এখানে কীভাবে খেলতে হয়, তা আমি জানি। কোন মাঠে কেমন কন্ডিশন, একটা ভালো ধারণা আছে। আপনি যখন ভিন্ন ভিন্ন লিগে খেলতে যাবেন, তখন পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে দ্রুত মানিয়ে নিতে হয়। যত দ্রুত মানিয়ে নেবেন, তত ভালো খেলতে পারবেন।

প্রথম আলো:

জাতীয় দল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে আপনাকে একই দায়িত্বে দেখা যায়, সেটা ফিনিশারের।

জাদরান: যে লিগেই যাই না কেন, আমার জায়গা হয় চার, পাঁচ কিংবা ছয়ে। ইনিংসের শেষে আমি দ্রুত স্ট্রাইক রেট বাড়াতে পারি। যখন চার-পাঁচে খেলতে হয়, যখন হিটিং করা দরকার, তখন হিটিং করি। যেখানে স্বাভাবিক ব্যাটিং করা দরকার, তা করি। জাতীয় দলেও তা-ই করি। যদি আস্কিং রেট বেশি হয়ে যায়, তখন ওপরেও খেলতে হয় আমাকে। আসলে যখন ম্যাচের পরিস্থিতি কঠিন, তখনই ব্যাটিং করতে পছন্দ করি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

আপনাকে প্রতিপক্ষ দলের একজন বোলারকে টার্গেট করতে দেখা যায়…

জাদরান: হ্যাঁ, একজন-দুজন বোলারকে টার্গেট করি। আমি জানি যে এই বোলারকে আনা হয়েছে আমার উইকেট নেওয়ার জন্য। আমি ওই বোলারের বলে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করি না। তার বলে আমি নিচে নিচে খেলি, প্রান্ত বদল করি। আমি যাকে টার্গেট করে রেখেছি, সেই বোলার এলে ১৫-২০ রান নেওয়ার চেষ্টা করি। যেন আগের ওভারগুলো পুষিয়ে নিতে পারি, সামনের ওভারগুলোও।

বিপিএলে ব্যাট হাতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ‘ফিনিশার’ নজিবুল্লাহ
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

ফিনিশার মানেই পেস-হিটার। আপনি এদিক থেকে একটু ভিন্নধর্মী। আপনি স্পিন-পেস, দুই ধরনের বলেই ভয়ংকর।

জাদরান: যখন স্পিনারদের উইকেট, তখন সেখানে পেসারদের মারা সহজ। আর পেসারদের উইকেটে স্পিনারদের। তবে আমার মাথায় এটাই ঘুরতে থাকে, যে-ই বোলিং করুক না কেন, বাজে বল করলে ছাড়ব না। দলের চাহিদা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি। দলকে জেতাতে হবে, নিজের পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি যদি ৪০ বলে ৫০ করি আর দল হারে, সেটা ভালো বলব না। যদি ১০ বলে ২০ রান করি আর দল জেতে, তাহলে আমি সবচেয়ে সন্তুষ্টি পাই।

প্রথম আলো:

নজিব আছে, সে জিতিয়ে দেবে—দলগুলোর এমন আস্থা অর্জন করেছেন কীভাবে?

জাদরান: আমি যে জায়গায় খেলি, সেখানে প্রত্যাশার চাপ এমনই। সেখানে বলার সুযোগ নেই যে নাহ্‌, এখন একটু ফ্রি হয়ে খেলি। আমিও চাপটা বেশ উপভোগ করি। প্রত্যাশার চাপও বেশি এখন। কারণ, আমি যেখানে খেলি, যেখান থেকে দলকে জেতানো যায়, হারানোও যায়।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

অর্ধশতক, শতক—ব্যাটিংয়ের এসব মাইলফলককে আপনি কীভাবে দেখেন?

জাদরান: আমি অনেক বড় খেলোয়াড়কে দেখেছি, দলের জন্য নিজের ৯০ রানেও ইনিংস ঘোষণা করেছেন। আমারও ৩০, ৪০, ৬০, ৭০—এসব মাথায় কাজ করে না। নিজের জন্য কখনো ৫০ করিনি। ৯৯ রানে খেললেও যদি দলের দরকার হয়, আমি মারবই। জীবনেও আমি ৫০ বা ১০০ করার জন্য খেলিনি। তাহলে গত দু-তিন বছরে আমার অনেকগুলো ৫০ হতো, সেগুলোও ২০-২৫ বলে। যদি আমি ৪০ বলে ৫০ রান করি, তাহলে হয়তো প্রতিপক্ষকে ১৫০ রানের মতো লক্ষ্য দিতে পারি। কিন্তু আমি যদি ওই ৪০ বলেই ৮০ রান করি, তাহলে দলের রানটা ১৮০ হতে পারে। আমি সে চেষ্টাই করি। আমি নটআউট থাকার চিন্তা করি না। নটআউট থাকলে গড় বাড়বে—এসব চিন্তাই করি না। আমার দলে যে দায়িত্ব, সেটাই করার চেষ্টা করি। এ জন্যই আমি ১০ বছর ধরে খেলতে পারছি। লিগেও নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছি। কারণ, আমি দলের জন্য খেলি।