বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়ানডে দলে তো আপনি ছিলেন না। সেটিও আবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। এই বাদ পড়াটা কতটা হতাশার ছিল? যদিও টানা সাত ইনিংসে দুই অঙ্কের রান করতে না পারায় আপনি নিজেই তখন এটাকে প্রত্যাশিত বলেছেন।
লিটন: দেখেন, আমি মনে করি, আমাদের জন্য তিনটা ইভেন্ট সবচেয়ে বড়—বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আর এশিয়া কাপ। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আমি কখনো খেলিনি। আমার স্বপ্ন ছিল খেলার। কিন্তু এর আগে যা হয়েছে, তাতে আমার খেলা হয়নি।
সত্যি কথা বলতে, আমার ভেতরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে পারিনি, এটা হতাশা ছিল না। আমার হতাশা ছিল এটা নিয়ে যে আমি যে বছরটাতে অনেক রান করলাম, এই শটগুলোতে এত পারদর্শী ছিলাম, কী ভুলের কারণে ওই বলগুলোতে আউট হয়ে গেলাম। এই বলে তো আমার আউট হওয়ার কথা না। সত্যি কথা বলতে গেলে, একটা খেলোয়াড় যখন পারফর্ম করে না, সে দলে জায়গাও ডিজার্ভ করে না। আমার শুধু মনে হচ্ছিল, ক্রিকেটার হিসেবে আমি যে জায়গায় স্ট্রাগল করছি, এটা বেশি দিন চললে আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারই নষ্ট হয়ে যাবে।
আমাকে আগের দিনই বলা হয়েছিল, তুমি এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যাচ্ছ না। আমার তাই বাড়তি কোনো আগ্রহ ছিল না। আমি নরমালই ছিলাম, ম্যাচ খেলেছি।
যেদিন সকালে আপনি বাদ পড়লেন, সেদিন সন্ধ্যাতেই বিপিএলে ফাটিয়ে দিলেন। বিপিএলে প্রথম সেঞ্চুরি, সেটিও মাত্র ৪৪ বলে। এমন কিছু করার প্রতিজ্ঞা করেই কি নেমেছিলেন সেদিন?
লিটন: কিচ্ছু না। যেদিন আমাদের খেলা ছিল, আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু কম থাকি। যখনই কোনো খেলাতে যাই, নিউজও খুব কম দেখি। ওই দিন আমাদের খেলা ছিল সিলেটে। আমি নরমালি রুমে থাকলে কিছু সময় ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি, বাকি সময় আমি চাই নিজেকে যতটা রিল্যাক্স রাখতে পারি। আমি একটু গান-ফ্রিক। গান শুনতে অনেক পছন্দ করি। ফানি টাইপের জিনিস পছন্দ করি, আমি কপিল শর্মার অনেক বড় ফ্যান, আমি ওগুলোতেই ব্যস্ত ছিলাম।
ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কিন্তু জানিও না, বাংলাদেশ দল ঘোষণা করা হয়েছে। আমি যে থাকব না, এটা তো আগে থেকেই জানি। কারণ, আমাকে আগের দিনই বলা হয়েছিল, তুমি এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যাচ্ছ না। আমার তাই বাড়তি কোনো আগ্রহ ছিল না। আমি নরমালই ছিলাম, ম্যাচ খেলেছি। পরেই না আমি জানতে পেরেছি, আজকে দল ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, আমি এই করেছি, সেই করেছি।
তবে হ্যাঁ, অনেক দিন ধরে ইচ্ছা ছিল যে বিপিএলে একটা এক শ মারব। কারণ, আমি যে কোয়ালিটির খেলোয়াড়, আমার মারা উচিত। এটা আমার বারবার মনে হয়েছে, একটা না, সিজনে আমার অন্তত দুইটা এক শ করা উচিত। মিরপুরে হয়তো কঠিন, কিন্তু চিটাগং-সিলেটে তো মারাই যায়। আমি কখনো পারিনি। একবার ৮৩ করেছিলাম, আরেকবার মনে হয় ৮৩ না ৮৫। তখন আমার খুব আপসেট লেগেছে, ৩-৪ ওভার বাকি ছিল, আমি কেন পারলাম না। সেঞ্চুরিটা করে তাই ভালো লেগেছে। আমার জন্য তো এটা নতুন—আমি টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করতে পারি, এটা জানতে পারা।
ওই ইনিংসের পর অনেকে বলেছে, আপনাকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে নেওয়া হোক। আপনিও কি এমন কিছু আশা করেছিলেন?
লিটন: না, আমি ওসব চিন্তাই করিনি। আমার একটাই চিন্তা ছিল, আমি কেন ওই জায়গায় স্ট্রাগল করছি, ওখান থেকে বের হব কীভাবে। কারণ, দুই দিন পর যদি টেস্ট খেলি, ওখানে তো সারা দিন বল আসবে। তখন আমি কী করব?
আপনার সমস্যাটা কোথায়, সেটা কি বলা যায়? ছেলেবেলার কোচ মন্টু দত্তের সঙ্গে কাজ করছেন দেখলাম…
লিটন: আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারই তো ১০ বছরের কাছাকাছি। ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলেছি অনেক। আমি জানি আমি কী ভুল করি এবং আমি এর সমাধানও জানি। কিছু কিছু সময় গাইডলাইনের প্রয়োজন পড়ে, যখন প্র্যাকটিস করি, কোচকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যে কী হচ্ছে, না হচ্ছে। আমি কী ভুল করছি, কোন জায়গায় কাজ করলে আমার উপকার হবে। এটা বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না।
এখন পর্যন্ত আপনার খেলা কঠিনতম বোলার কে?
লিটন: সমস্যা মনে হয়েছে কয়েকটা মিস্ট্রি বোলারকে। মেইনলি স্পিনার। ডিস্টার্বিং বলতে একদমই যে খেলতে পারিনি, তা না। কিন্তু ভয় ভয় কাজ করত, এই মনে হয় আউট হয়ে যেতে পারি। কুলদীপকে (ভারতীয় বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদব) আমি যখন এশিয়া কাপে খেললাম, সবচেয়ে ভালো খেলছিলাম আমি।
কিন্তু যখন আমি ওকে রেড বলে খেললাম, পিক করতে পারছিলাম না। এটা হতে পারে, হোয়াইট বলে তো বলের সিমটা দেখা যায়, রোটেশন বোঝা যায়। দিনের বেলায় লাল বলে সিম পিক করতে পারছিলাম না। ওই দিন আমার মনে হচ্ছিল সবচেয়ে বেশি স্ট্রাগল করছিলাম। নূর আহমেদকে আমি খুব বেশি খেলিনি। তবে আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে নূর আহমেদকে খেলতে খুব সমস্যা হচ্ছিল।
২০২৩ সালে আইপিএলে খেলেছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্স আপনাকে নিয়ে অনেক হাইপও তৈরি করেছিল। কিন্তু আইপিএল তো আপনার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। একটা ম্যাচই খেলেছেন, একটা চার মেরেই আউট, এরপর দুটি সহজ স্টাস্পিং মিস। এটাকে কি চাপে ভেঙে পড়া বলবেন?
লিটন: আমার দুর্ভাগ্যই বলব…সব কিপারেরই একটা খারাপ দিন যায়। আমার মনে হয় ব্যাটিংয়ে বলেন, কিপিংয়েও বলেন, খারাপ দিন ওইটাই গেছে। আর আমার আইপিএল ক্যারিয়ারটা ওখানেই শেষ হয়ে গেছে। মানুষ একটা সেকেন্ড চান্স পায়, আমি সেটা পাইনি। আমার প্রথম ইম্প্রেশনটাই হয়তো খারাপ ছিল।
কয়েক ম্যাচ বাইরে বসে থাকার পর তো আপনি পারিবারিক একটা সংকটের কারণে দেশে চলে এলেন। আসলেই সংকট ছিল, নাকি না খেলতে পেরে বিরক্ত হয়ে চলে এসেছিলেন?
লিটন: আসলেই একটা সমস্যা ছিল। এত বড় ইভেন্ট থেকে কেন এমনি এমনি চলে আসব?
এক ম্যাচ খেললেও বেশ কিছুদিন তো কেকেআরের সঙ্গে ছিলেন। আপনার আইপিএলের অভিজ্ঞতা কেমন?
লিটন: বড় বড় ইভেন্ট, যেখানে বড় বড় খেলোয়াড় খেলে, অনেক দর্শক থাকে, এসবে খেললে গেম সেন্স ডেভেলপ করে। আমাদের জন্য বড় টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি…এর সঙ্গে আইপিএলকেও রাখতে হবে। আমি খুব অল্প সময় ছিলাম। তাতেই যে জিনিসগুলো ওখানে গিয়ে দেখেছি, তাতেই আমার মনে হয়েছে, আমাদের ক্রিকেট অনেক পিছিয়ে। অনেক মানে অনেক।
একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, সেখানে এক দলের আট-নয়টা নেট বোলার। যারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থাকবে, শুধু অ্যাওয়েতে ফ্লাই করবে না। একই হোটেল, আমরা যে হোটেলে, তারাও সেখানে।
একটা টিমে দুজন ট্রেনার থাকে, একজন লোকাল, একজন ফরেনার। লোকাল ট্রেনার নেট বোলারদের গাইড করে, তাদের রিকভারি-টিকভারি সব মেইনটেইন করে। তাদের জন্য আলাদা বাস থাকে। কতটা পেশাদার হলে একটা দলে দুইটা ম্যাসাজম্যান থাকে। আর কোচের তো হিসাব নেই।
আমি যখন আইপিএলের সময় গাড়িতে উঠলাম না, মনে হয়েছে আমি বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে গেলে যেমন ভাইব থাকে, একই ভাইব। একটা ডমেস্টিক লিগ চলে, এটা তো ধরেন আমাদের বাংলাদেশে বিপিএল, ভারতে আইপিএল তো এটাই; এটাতেই যদি এত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ক্রিকেটটা খেলে, তাহলে ভারতীয় দলে খেলার সময় কী হয়?
আরেকটা জিনিস দেখেন, আপনার ক্রিকেট ডেভেলপ হওয়ার জন্য তো সুযোগ-সুবিধা লাগবে। টি-টোয়েন্টি তো চার-ছক্কার খেলা। একটা প্লেয়ার যদি রেঞ্জ হিট না করতে পারে, সে বুঝবে না তার রেঞ্জ কতখানি ডেভেলপ হচ্ছে। আইপিএলে যে মাঠগুলোতে খেলা হয়, দুই দলের জন্য সেই মাঠের দুইটা উইকেট ছেড়ে দেয়। আপনি যখন সেন্টার উইকেট থেকে নিয়মিত ছক্কা মারবেন, তখন আপনার মধ্যে ওই দ্বিধাদ্বন্দ্ব আসবে না যে ছয় কত বড় মারছেন। বল কোথায় যাচ্ছে।
কেন এই জিনিসটা বললাম, এবার যখন পাকিস্তানে গেলাম টেস্ট সিরিজ খেলতে, তারা কিন্তু আমাদের এই সুবিধাটা দিয়েছে। যে উইকেটে খেলা হবে, আমাদের এর পাশের উইকেটে প্র্যাকটিস করতে দিয়েছে। আমাদের পাকিস্তানে ভালো করার পেছনে এটা একটা অনেক বড় কারণ ছিল। আমরা যে উইকেটে খেলছি, তার পাশের উইকেটগুলোতে প্র্যাকটিস করে বুঝতে পারছিলাম যে এই উইকেটে কখন কী হতে পারে। কবে থেকে স্পিন বা সিম হতে পারে।
আপনার ক্যাপ্টেন্সি রেকর্ড তো দুর্দান্ত। এক টেস্ট, এক জয়। ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়, টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ…তবে এর সবই করেছেন অস্থায়ী ভিত্তিতে। যখন দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়ক বেছে নেওয়ার প্রশ্ন এল, আপনি তা পাওয়ার আশা করেননি?
লিটন: ক্যাপ্টেন্সি বিষয়ে বললে, ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে সাদা বলে অধিনায়ক তো আমিই ছিলাম। তামিম ভাই যখন ছিল না, আমিই করেছি। তামিম ভাই খেলতে পারবে না, ভারত সিরিজ (২০২২)—আমি অধিনায়ক। তামিম ভাই প্রথম ম্যাচ খেলে চলে গেল আফগানিস্তান সিরিজে, দুইটা ম্যাচে ক্যাপ্টেন আমি৷ বিশ্বকাপের ঠিক আগে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যে দুইটা ম্যাচ খেললাম, আমি অধিনায়ক ছিলাম। কিন্তু যখন আপনি একটা বিশ্বকাপ ইভেন্টে গেলেন, ক্যাপ্টেন আলাদা হয়ে গেল। আপনি যখন হোম সিরিজ খেললেন, তখন একজনকে দিয়ে অধিনায়কত্ব করালেন, একজনকে দিয়েই চললেন। যখন আপনি বিশ্বকাপ খেলতে গেলেন, অধিনায়ক আরেকজন হয়ে গেল। কেন হলো, কী কারণে হলো, এটা আমি জানি না।
ওই বছর টেস্টে ক্যাপ্টেন ছিল সাকিব আল হাসান, সঙ্গে ডেপুটি ছিলাম আমি এবং আমি একটা (টেস্টে) ক্যাপ্টেন্সিও করেছি। তো পরের মৌসুমটা যখন আসবে, আপনি কী প্রত্যাশা করবেন? আমিও একইভাবে আশা করেছি যে সাকিব আল হাসান যদি ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেয়, আমি হয়তো পাব। তারা আমার সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলেনি, আলোচনা করেনি। তারা তাদের যে পছন্দ ছিল, তাকে দিয়ে দিয়েছে।লিটন দাস
আপনার সঙ্গে এ নিয়ে বোর্ডের কোনো কথা হয়নি?
লিটন: না, তারা এটা নিয়ে আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। বা তারা কী চায় বা আমি কী চাই, সেটা নিয়েও কোনো আলোচনা করেনি। আমার যেটুকু মনে আছে, যখন ইন্ডিয়া সিরিজ হবে, তার আগে আমাকে ফোন দিয়ে বলল, এখন তো তামিম খেলবে না। আমরা চিন্তা করেছি তোমাকে দিয়ে অধিনায়কত্ব করাব। আমি একটু শকড ছিলাম, না আগে, না পরে, কোনো কিছুই আমাকে বলা হয়নি।
একদিন রাতে ফোন দিল, ফোন দিয়ে বলল, তোমাকে দিয়ে অধিনায়কত্ব করাব। আমি বললাম, আমি চিন্তা করে জানাচ্ছি। কারণ, আমি এমন মানুষ না যে তাৎক্ষণিক খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলব—হ্যাঁ। আমাকে তো একটা চিন্তা করে উত্তর দিতে হবে। কিছুক্ষণ ভাবার পর আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, করব।’ আমি করলাম। আমি যে টাইমটার কথা বলছি, তখন কিন্তু বাংলাদেশ দলে ডেপুটি ছিল না। আমি রাতে বললাম ঠিক আছে, করব।
করলাম। এরপর আমাদের অধিনায়ক আবার ব্যাক করল। তামিম ভাই যখন আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে সরে গেলেন, যেহেতু আমি ভারতের বিপক্ষে আগের সিরিজে ক্যাপ্টেন্সি করেছি, সেহেতু অটোমেটিক্যালি আমাকে নিয়ে নিল আবার। আফগানিস্তান সিরিজে যেহেতু ক্যাপ্টেন্সি করেছি, নিউজিল্যান্ড সিরিজেও করিয়েছে। এখন আপনি কী ধরবেন?
আপনিই পরবর্তী অধিনায়ক…
লিটন: সেটা তো হয়নি। ওকে ফাইন, এটা তো ওয়ানডে গেল। ওই বছর টেস্টে ক্যাপ্টেন ছিল সাকিব আল হাসান, সঙ্গে ডেপুটি ছিলাম আমি এবং আমি একটা (টেস্টে) ক্যাপ্টেন্সিও করেছি। তো পরের মৌসুমটা যখন আসবে, আপনি কী প্রত্যাশা করবেন? আমিও একইভাবে আশা করেছি যে সাকিব আল হাসান যদি ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেয়, আমি হয়তো পাব। তারা আমার সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলেনি, আলোচনা করেনি। তারা তাদের যে পছন্দ ছিল, তাকে দিয়ে দিয়েছে।
এটা কতটা হতাশার ছিল?
লিটন: খুবই হতাশার।
আপনি ক্যাপ্টেন্সি খুব এনজয় করেন?
লিটন: অবশ্যই।
অধিনায়ক তো হলেন নাজমুল হোসেন। নাজমুল আর আপনি কি বয়সভিত্তিক দলে একসঙ্গে খেলেছেন?
লিটন: না, ও এক ব্যাচ পরের।
বাংলাদেশ দলে আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু কে?
লিটন: বন্ধু বলতে যে এমন নেই যে খুব ঘনিষ্ঠ। আমার লাইফে কোনো ফ্রেন্ড সার্কেল নেই। আমার লাইফে যদি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধু থাকে, সেটা হচ্ছে আমার ওয়াইফ। এ ছাড়া আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই। এমন কেউ নেই, যাদের সঙ্গে আমি জমিয়ে আড্ডা মারতে পারি।
বিকেএসপিতে যে ব্যাচে আমি ভর্তি হয়েছি, তাতে ২২ জন ছিল। ওখান থেকে আমার দুজনের সঙ্গে মোটামুটি কথাবার্তা হতো। এখনো একজন আছে, আরেকজন দেশের বাইরে চলে গেছে। আমি লিটন দাস প্র্যাকটিস শেষ করে আড্ডা মারব, এমন কেউ নেই। একজনই ছিল, সে ঢাকাতে থাকত, এখন আমেরিকায় চলে গেছে। একমাত্র কোনো মানুষের সঙ্গে যদি আমি আমার মনের কথা শেয়ার করতে পারি, এটা আমার ওয়াইফ।
লিটন দাস কি তাহলে কখনো কখনো নিঃসঙ্গ বোধ করে?
লিটন: তা না। তবে আমার ও রকম ফ্রেন্ড নেই যে যাকে সব বলতে পারি। যে আমার টিমমেট থাকে বা আমি যার টিমমেট থাকি, একধরনের বন্ধুত্ব তো হয়ই। এত বছর ধরে খেলছি…আমরা সবাই কী করি, একসঙ্গে খাইতে যাই, একসঙ্গে লাঞ্চে যাই, ডিনারে যাই, কখনো শপিংয়ে যেতে হলে একসঙ্গে যাই। এতটুকুই।
ক্যারিয়ার শেষ করার আগে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? অথবা নির্দিষ্ট কোনো রেকর্ড কি আছে, যা করার স্বপ্ন দেখেন?
লিটন: কেন জানি না, আমার মধ্যে কখনো রেকর্ড নিয়ে কোনো চিন্তা কাজ করে না। এটা হতে পারে আমার নেগেটিভ একটা সাইড। যেহেতু ব্যাটসম্যানের কাজই হচ্ছে মাইলস্টোন ছোঁয়া—এক শ করা, দুই শ করা। জানি না, আমার কখনো মনে হয় না যে আমার এতগুলো এক শ হতে হবে, এতগুলো এই জিনিস হতে হবে। ধরেন কালকে আমার খেলা, আমি কালকের খেলায় টিমকে কতটুকু দিতে পারছি, এটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, অনেক সময় এমন হয় যে আমি যদি চিন্তা করি মাইলস্টোনের জন্য যাচ্ছি, বাড়তি প্রেশার নিজের কাছে। আবার দেখেছি, কিছু কিছু মাইলস্টোনের জন্য টিম অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হ্যাঁ, অবশ্যই যদি আমি এক শ মারি, দল ম্যাচ জেতে, এটা তো একটা বড় পাওয়া। কিন্তু আমার কখনো না ও রকম চিন্তা থাকে না। কিন্তু এই জায়গায় যদি আমি বলি, আপনি আজকে আমাকে যে জিনিসটা দেখালেন কাগজে (লিটনের ক্যারিয়ার রেকর্ড), আমি যদি এগুলো অনেক আপগ্রেড করতে পারি, তাহলে মনে করব আমি সফল।
আপনার টেস্ট অ্যাভারেজ এখন ৩৪, ক্যারিয়ার শেষে তা কত দেখতে চান?
লিটন: এখন যে পরিস্থিতিতে আছি, আমি যদি ৪৫ অ্যাভারেজে শেষ করতে পারি, তাহলে ভালো।
টেস্টে আপনার ৪টি সেঞ্চুরি, এখানে কত দেখতে চান?
লিটন: ওটা বলতে চাই না। এখান থেকে অ্যাভারেজ যদি ৪৫ করতে হয়, ওই সংখ্যাটা (সেঞ্চুরি) বাড়লেই না তা হবে।