আত্মহত্যার ভাবনা দূর করতে মানসিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন কিরিওস

আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন নিক কিরিওসএএফপি

আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন টেনিসের ‘ব্যাডবয়’ খ্যাত নিক কিরিওস।

অস্ট্রেলিয়ার এই বিতর্কিত টেনিস তারকা ২০১৯ সালে উইম্বলডনে রাফায়েল নাদালের কাছে হারের পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আত্মহত্যার ভাবনাও তাঁর মাথায় এসেছিল। মনের চিকিৎসা করাতে তাঁকে ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালে।

আগামী ২১ জুন নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘ব্রেক পয়েন্ট’ মুক্তি পেতে চলেছে। এই সিরিজেরই একটি পর্বে কিরিওস তাঁর মানসিক অসুস্থতা ও আত্মহত্যার ইচ্ছার বিষয়টি জানিয়েছেন। যদিও অস্ট্রেলিয়ান তারকা গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের মানসিক সমস্যা ও আত্মহত্যার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন।

জীবনের স্বাদ পেয়েছেন কিরিওস
ছবি: রয়টার্স

ব্রেক পয়েন্ট সিরিজের ষষ্ঠ এপিসোডে কিরিওসকে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে দেখা যাবে। ২০১৯ সালের উইম্বলডনের দ্বিতীয় রাউন্ডে কিরিওস রাফায়েল নাদালের কাছে হেরে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি। কিরিওস বলেছেন, ‘আমি সত্যি সত্যি আত্মহত্যার কথা ভাবছিলাম। উইম্বলডনে হারের ধাক্কাটা আমি মানসিকভাবে নিতে পারিনি। হারের পর আমি এক সকালে ঘুম থেকে উঠেছি, দেখি আমার বাবা বিছানায় বসে আছেন। তিনি হুহু করে কাঁদছেন। দৃশ্যটা আমার জন্য ধাক্কা ছিল। আমি ভাবলাম, এভাবে চলতে দিতে পারি না আমি। শেষ পর্যন্ত আমাকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মানসিক ওয়ার্ডে ভর্তি হতে হয়।

আরও পড়ুন
টেনিসর ‘ব্যাড বয়’ কিরিওস
ছবি: রয়টার্স

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কিরিওস ইনস্টাগ্রামে এক দীর্ঘ পোস্ট দিয়ে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। পোস্টটির শেষ দিকে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির কথাও বলেছিলেন, ‘আমি গর্বের সঙ্গে বলছি, আমি আগের জায়গা থেকে নিজেকে ফেরাতে পেরেছি। এখন সব বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি ভিন্ন। আমি এখন আমার সামর্থ্যের পুরোটা ব্যবহার করতে চাই। জীবনটা আসলেই খুব সুন্দর।’

২০১৯ উইম্বলডনে প্রত্যাশার চাপটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিরিওসের, ‘চাপটা ভয়ংকর ছিল। সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে আছে প্রত্যাশা নিয়ে, আমি জিনিসটা নিতে পারিনি। আমি ওই সময় যে ধরনের ব্যক্তি ছিলাম, তা ঘৃণা করি। আমি ওই সময় প্রচুর মদ্যপান করছিলাম। নিষিদ্ধ ড্রাগ নিচ্ছিলাম। পরিবারের সঙ্গে নিজের সম্পর্কটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। সব বন্ধু-বান্ধবদের দূরে ঠেলে দিয়েছিলাম।’

আরও পড়ুন
বিতর্কের জন্য কুখ্যাত কিরিওস
এএফপি

২০১৯ সালের উইম্বলডনে নাদালের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ডান হাত সাদা কাপড়ে ঢেকে মাঠে নেমেছিলেন কিরিওস। কেন সেটি করেছিলেন তাও বলেছেন, ‘আমার হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। গোটা হাত ছিল আঘাতের চিহ্নে ভরা। তাই ওগুলো ঢেকে মাঠে নেমেছিলাম।’ গত বছর উইম্বলডনে অবশ্য বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কিরিওস। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ চলাকালে এক দর্শকের দিকে থুতু ছুড়েছিলেন। এ জন্য তাঁকে ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়। এরপর স্তেফানো সিৎসিপাসের বিপক্ষে ম্যাচে প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্য করে কটু মন্তব্য করে ৪ হাজার ডলার জরিমানা গোনেন।

আরও পড়ুন
হাঁটুর চোটে এ বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপের খেলতে পারেননি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এখানেই শেষ নয়। শেষ ষোলোর ম্যাচে ব্র্যান্ডন নাকাশিমাকে হারানোর পর উইম্বলডনের পোশাক-রীতি ভেঙে লাল ক্যাপ পরে কোর্টে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এটা নিয়ে প্রশ্ন করায় আবার বলেছেন, তাঁর যেটা মন চায়, সেটা করতে ভালোবাসেন। কিন্তু পছন্দের খেসারত দিয়ে হয় তাঁকে তৃতীয় দফায় জরিমানা গুনে।

এ বছর জানুয়ারিতে হাঁটুর চোটে শেষ হয়ে যায় কিরিওসের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের স্বপ্ন। গ্র্যান্ড স্লামে যদিও তাঁর সর্বোচ্চ সাফল্য একটি ফাইনাল। ২০২১ সালে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বৈত বিভাগে শিরোপা জিতেছিলেন। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন। তবে প্রতিভার দ্যুতি ছড়ানোর চেয়ে বিতর্কিত সব মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের জন্য টেনিসে ‘ব্যাড বয়’ পরিচিতি পেয়েছেন কিরিওস।