লড়াইটা ছিল পুরুষ টেনিসের বর্তমান ও ভবিষ্যতের। এক প্রান্তে ছেলেদের টেনিসে সর্বোচ্চ ২৪ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী নোভাক জোকোভিচ, অন্য প্রান্তে চার গ্র্যান্ড স্লামজয়ী ২১ বছর বয়সী কার্লোস আলকারাজ। সে লড়াইয়ে ভবিষ্যৎকে বর্তমান হয়ে ওঠার অপেক্ষা বাড়িয়ে জিতলেন ৩৭ বছর বয়সী জোকোভিচই। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে আজ ছেলেদের কোয়ার্টার ফাইনালে আলকারাজকে ৪–৬, ৬–৪, ৬–৩, ৬–৪ গেমে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠলেন সার্বিয়ান কিংবদন্তি।
সেমিফাইনালে জার্মানির দ্বিতীয় বাছাই আলেক্সান্দার জভেরভের মুখোমুখি হবেন জোকোভিচ। কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নেওয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের সুযোগও হারালেন ইউএস ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বলডনজয়ী (দুবার) আলকারাজ।
আলকারাজের কাছে প্রথম সেট হারের পথে ৫–৪ গেমে পিছিয়ে থাকার সময় মেডিকেল টাইম আউট নেন জোকোভিচ। ফিরে আসেন বাঁ পায়ের ঊরুতে ইনজুরি টেপ মেরে। এরপরই ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরতে শুরু করেন। ৩ ঘণ্টা ৩৭ মিনিটের লড়াই শেষে হেসেছেন জয়ের হাসিও। শেষ সেটে এসে আলকারাজকে শারীরিকভাবে স্পষ্টত দুর্বলই লেগেছে। ড্রপ শট কিংবা টাচলাইনের কোনা ঘেঁষে মারা তাঁর ট্রেডমার্ক শটগুলো নিখুঁত হয়নি। ক্লান্ত ছিলেন জোকোভিচও। কিন্তু অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মিশেলে শেষ পর্যন্ত বয়সে ১৬ বছরের ছোট তরুণকে হার মানিয়েছেন আবারও।
২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপার খোঁজে থাকা জোকোভিচ এ নিয়ে ১২তম বারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন। শুধু রজার ফেদেরারই (১৫) এ তালিকায় তাঁর চেয়ে এগিয়ে। তবে সব গ্র্যান্ড স্লাম মিলিয়ে এটি জোকোভিচের ৫০তম সেমিফাইনাল, যা রেকর্ড এবং ফেদেরারের চেয়ে চারবার বেশি। শুক্রবার রড লেভার অ্যারেনায় ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ জার্মানির জভেরভ। যুক্তরাষ্ট্রের টমি পলকে ৭–৬ (৭/১), ৭–৬ (৭/০), ২–৬, ৬–১ গেমে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছেন এই জার্মান।
জয়ের পর কোর্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বভাবসুলভ মজা করেন জোকোভিচ। জিম কুরিয়ারের প্রশ্নের জবাবে গ্যালারিতে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, ‘দুঃখিত, আপনার প্রশ্নটি শুনেছি, কিন্তু আমি বিস্মিত যে আমার বাচ্চারা এখনো এখানে (গ্যালারি) আছে! রাত একটা বাজে। তোমরা ঘুমাবে কখন?’ ক্যামেরা তখন গ্যালারিতে জোকোভিচের পরিবারকে ধরেছে। পরে কোর্ট ছেড়ে টানেলে ঢুকে পরিবারের সবাইকে বুকে টেনে নেন জোকোভিচ।
আলকারাজ হারের পর টানেল ধরে চলে যান অটো সাইক্লিং করতে। এ সময় জোকোভিচের কোচ অ্যান্ডি মারে গিয়ে আলকারাজের সঙ্গে হাতও মেলান। ক্যামেরায় দৃশ্যটি দেখানোর আগেই কোর্টে আরও একবার মজা করেন জোকোভিচ। কুরিয়ার জানতে চান, এত কিছু সামলে জিতলেন কীভাবে? মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে জোকোভিচের উত্তর, ‘আমার দুই হাত ও দুই পা দিয়ে সম্ভবত...আসলে দেড় পায়ে।’ এরপরই তাঁর পায়ের চোট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জোকোভিচ এ নিয়েও মজা করেন, ‘টুর্নামেন্টের মাঝপথে এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না।’
স্প্যানিশ তারকা আলকারাজের প্রশংসাও করেছেন জোকোভিচ, ‘সবার আগে আমি কার্লোসের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও প্রশংসা রাখতে চাই, সে এই অল্প বয়সে যা কিছু অর্জন করেছে, সে জন্য। কী অসাধারণ এক মানুষ, তার চেয়েও ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। আমি নিশ্চিত, তাকে এই পর্যায়ে আরও অনেকবার দেখা যাবে। হয়তো আমি যতটা দেখতে চাই ততটা নয়, তবে সে আমার চেয়ে বেশি দিন থাকবে।’
মেয়েদের এককে রাশিয়ার আনাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভাকে ৬–২, ২–৬, ৬–৩ গেমে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছেন র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর বেলারুশের আরিয়ানা সাবালেঙ্কা। কোয়ার্টার ফাইনালের অন্য ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের কোকো গফকে ৭–৫, ৬–৪ গেমে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছেন স্পেনের পলা বাদোসা।