প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্যিক গল্প লিখে আবারও লাল দুর্গের রাজা আলকারাজ
ইয়ানিক সিনারের মা কাঁদছিলেন, সুখের কান্না। আর একটি পয়েন্ট পেলেই প্রথমবার রোলাঁ গারোর লাল দুর্গের রাজা হবে ছেলে, মা কেন আবেগে বাঁধ দেবেন!
ফ্রেঞ্চ ওপেনের পুরুষ এককের ফাইনালের চতুর্থ সেটে তখন কার্লোস আলকারাজের বিপক্ষে ৫–৩ গেমে এগিয়ে সিনার। চলমান গেমে ইতালিয়ান তারকা এগিয়ে ৪০–০ পয়েন্টে। সেটের হিসাবে তখন ২–১–এ এগিয়ে বিশ্বের এক নম্বর পুরুষ টেনিস খেলোয়াড়।
এরপর যা হলো, সেটিকে কী বলা যায়? মহাকাব্যিক প্রত্যাবর্তন, অতি ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে যাওয়া শব্দ যুগলেই আবারও আশ্রয় নিতে হলো। কার্লোস আলকারাজ এরপর যা করলেন, সেটি তো মহাকাব্যেই পাওয়া যায়। তিন–তিনটি ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে জিতে নিলেন গেমটি। এরপর গেমটাকে ৬–৬ করে টাইব্রেকারে সেটটি জিতে ম্যাচটিকে নিয়ে গেলেন পঞ্চম সেটে। আর সেই সেট টাইব্রেকার জিতে ফ্রেঞ্চ ওপেনের লাল দুর্গের মুকুট ধরে রাখলেন।
উন্মুক্ত যুগে ফাইনালে প্রথম দুই সেট হেরেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নবম কীর্তি গড়লেন টেনিসের ভবিষ্যৎ। আলকারাজ ক্যারিয়ারের পঞ্চম গ্র্যান্ড স্লাম জিতলেন ৪–৬, ৬–৭ (৪/৭), ৬–৪, ৭–৬ (৭/৩), ৭–৬ (১০/২) গেমে। ৫ ঘণ্টা ২৯ মিনিটের লড়াই শেষে শেষ হাসি হাসলেন আলকারাজ। রোলাঁ গারোর ইতিহাসে এটিই সময়ের হিসেবে দীর্ঘতম ফাইনাল।
এমনকিছু দেখার প্রত্যাশা নিয়েই অবশ্য আলকারাজ–সিনার মহারণ দেখতে বসেছিলেন সবাই। বিশ্বের এক ও দুই নম্বর খেলোয়াড় মুখোমুখি। মুখোমুখি এই সময়ের সেরা দুই খেলোয়াড়। জমজমাট এক লড়াইয়ের পুর্বাভাস তো ছিলই।
গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে দুজনের প্রথম দেখায় আলকারাজ–সিনার সেই প্রত্যাশা মিটিয়ে উপহার দিলেন মহাকাব্যিক এক লড়াই। যেটি নিশ্চিতভাবেই জায়গা পেয়ে গেছে টেনিস ইতিহাসের ক্লাসিক সব ম্যাচের তালিকায়।
আলকারাজের আগে সর্বশেষ যে পুরুষ খেলোয়াড় ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন তাঁর নাম নোভাক জোকোভিচ। ২০১৯ সালে উইম্বলডনের ফা্ইনালে রজার ফেদেরারকে হারিয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লামের মালিক। জোকোভিচ–ফেদেরার তো সর্বকালের সেরাদের সংক্ষিপ্ততম তালিকাতেই থাকেন। সিনার–আলকারাজরা কি কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া সেই সব দ্বৈরথে নাম লেখাতে পারবেন?
উত্তরটা না হয় ভবিষ্যতের জন্যই তোলা থাক। তবে প্যারিসে আজ ভবিষ্যতের বিজ্ঞাপনই দিয়ে রাখলেন আলকারাজ–সিনার। জানিয়ে রাখলেন জোকোভিচ–নাদাল–ফেদেরারের উত্তরসূরি হতে পণ করেছেন তাঁরা।
প্রথম সেটটা সিনার জিতেছিলেন সহজেই। তবে ম্যাচটি যে লম্বা হতে যাচ্ছে সেটি বোঝা যায় দ্বিতীয় সেটেই। মনে হচ্ছিল সহজেই সেটটি জিতে যাচ্ছেন সিনার। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেটটিকে টাইব্রেকারে নিয়ে যান আলকারাজ। টাইব্রেকারে অবশ্য পেরে ওঠেননি।
এরপর তৃতীয় সেটটি জিতে আশা বাঁচিয়ে রাখেন রাফায়েল নাদালের উত্তরসূরি। অবিশ্বাস্য চতুর্থ সেটটি এলো এরপরই। ম্যাচের বয়স যখন ৩ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট, প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্টে সামনে সিনার। এরপর কী হলো সেটি তো জানাই। ১ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট পর আলকারাজ পেয়ে গেলেন চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট।
এর আগে কখনোই প্রথম দুই সেটে হারার পর ম্যাচ জিততে পারেননি আলকারাজ। সেই আলকারাজ প্রথম দুই সেট হারার পর জিতলেন কিনা ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনাল।
ম্যাচ শেষে আনন্দে ভেসে গিয়ে প্রতিপক্ষকে ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি আলকারাজ। সিনার যে তাঁকে সেরাটা দিতে অনুপ্রাণিত করে বললেন সেটিই, ‘ইয়ানিককে দিয়েই শুরু করি। তুমি যে মানের সেটি অবিশ্বাস্য। অবিশ্বাস্য দুটি সপ্তাহ কাটানোর জন্য তোমাকে অভিনন্দন। আমি নিশ্চিত তুমি অনেক অনেক বার চ্যাম্পিয়ন হবে। তোমার সঙ্গে কোর্ট ভাগাভাগি করাটা সৌভাগ্যের, তোমার সঙ্গে মিলে ইতিহাস গড়াটাও।’
আলকারাজ এমনই তো বলবেন। সর্বশেষ আট গ্র্যান্ড স্লামের সাতটিই তো ভাগাভাগি করেছেন তাঁরা।
আর রজার ফেদেরারের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালই চাম্পিয়ন হলেন আলকারাজ।