জেলে যাওয়া বেকারের জন্য জোকোভিচের সহানুভূতি, ভ্রুক্ষেপ নেই মারের

জেলে দিন কাটছে বরিস বেকারেরছবি: রয়টার্স

বরিস বেকার তাহলে কী ঠিক করলেন? তিনি কি ক্রিস অ্যাটকিনসের মতো হবেন, এইচএমপি ওয়ান্ডসওর্থে কাটানো দিন নিয়ে একটি বই লিখে ফেলবেন। নাকি রনি বিগসের মতো পালিয়ে যাবেন ব্রাজিলে!

অস্কার ওয়াইল্ডকেও অনুকরণ করতে পারেন। দক্ষিণ পশ্চিম লন্ডনের এই সাময়িক আবাসে থাকার সময় চিঠি ও কবিতা লেখে সময় কাটিয়েছেন। সেগুলো এখন অনেকেরই পাঠ্য।

আবার চাইলে মোহাম্মদ আসিফ কিংবা সালমান বাটের পথেও হাঁটতে পারেন। রানি ভিক্টোরিয়ার আমলে বানানো কয়েদখানা নিয়ে কখনো আগবাড়িয়ে কিছু বলতে যান না পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটার।

টেনিস কিংবদন্তির সামনে অনেক বিকল্প।    

চারটি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন বেকার
ছবি: রয়টার্স

দেনার দায় থেকে মুক্তি পেতে লাখ লাখ পাউন্ডের সম্পত্তি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বিবিসি জানিয়েছে, বেকার ২৫ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭ কোটি টাকা) মূল্যমানের সম্পত্তি লুকিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আদালত। ২৪টি মামলা হয়েছে, ২০টি থেকে খালাস পেলেও ব্রিটেনের দেউলিয়া আইনে গত মাসে চারটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন ৫৪ বছর বয়সী বেকার।

তিনটি উইম্বলডন ও ছয়টি গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ী বরিস বেকারকে লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন আদালত আড়াই বছর কারাবাসের রায় দিয়েছেন। রায়ের অর্ধেক সময় জার্মান কিংবদন্তিকে জেলে থাকতে হবে। বাকি সময় তিনি জামিনে থাকবেন। বেকারকে এরপরই নেওয়া হয়েছে ওয়ান্ডসওর্থে, একটি বি ক্যাটাগরির জেলখানা।

ব্রিটিশ কারাগারগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়—এ, বি, সি, ডি। এর মধ্যে এ সবচেয়ে গুরুতর অপরাধে শাস্তি পাওয়া কয়েদিদের জন্য। তাঁদের পালানোর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। ওদিকে ডি ক্যাটাগরির জেলখানায় মুক্তভাবে ঘোরার সুযোগ পান অপরাধীরা। বেকারের ভাগ্যে সেটাও জোটেনি।

অ্যান্ডি মারে
ফাইল ছবি: এএফপি

বেকারকে আগামী কিছুদিন এমন এক জায়গায় থাকতে হবে, যেখানকার অবস্থা দেখে আর সহ্য করতে পারেননি জালিয়াতির দায়ে জেল খাটা সাংবাদিক ক্রিস অ্যাটকিনস। বের হয়েই অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অবাধ মাদকের ব্যবহার নিয়ে লিখেছেন ‘একটু বেশিই হচ্ছে: এক কয়েদির দিনলিপি!’ ২০১৫ সালে এক কয়েদির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছিল ওয়ান্ডসওর্থে। ব্রিটেনের সবচেয়ে জনাকীর্ণ জেলখানা এটি। এমন এক জায়গাতেই আগামী এক বছর কাটাতে হবে বরিস বেকারকে।

অ্যান্ডি মারের তবু তাঁর জন্য কোনো মায়া হচ্ছে না, বরং বেকারের কারণে যাঁদের ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের জন্যই যত চিন্তা তিনটি গ্র্যান্ড স্লাম ও দুটি অলিম্পিক সোনাজয়ীর, ‘তিনি আইন ভেঙেছেন, আর তা করলে আমার মনে হয় না যে-ই হোন না কেন, কিংবা জীবনে যত অর্জনই থাকুক, আপনাকে সুবিধা দেওয়াটা সঠিক কাজ। তিনি এই অবস্থায় পড়েছেন বলে আমি দুঃখিত। কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্তের কারণে যাঁদের ক্ষতি করেছেন, আমি তাঁদের কথা ভেবেই বেশি দুঃখ পাচ্ছি।’

নোভাক জোকোভিচ
ছবি: রয়টার্স

মারে নিরপেক্ষ মতামত জানাতে পারলেও নোভাক জোকোভিচের সে উপায় নেই। একসময় বেকারকে নিজের কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে ছয়টি মেজর জিতেছেন। তাই ২০টি গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ীর কণ্ঠে সাবেক কোচের জন্য সহানুভূতি, ‘আমার মন ভেঙে গেছে। তাঁর জন্য প্রার্থনা করি। আমি আশা করি তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। কারণ, এখন যা হচ্ছে, সেটাই সবচেয়ে কঠিন অংশ।’

২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দুজন একসঙ্গে কাজ করেছেন। এর মধ্যে ১২২ সপ্তাহ র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিলেন জোকোভিচ। দুজনের সম্পর্ক বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিনের বন্ধু, তিন-চার বছরের কোচ। আমার জীবনের খুব কাছের মানুষ ভাবি এবং আমার সাফল্যে অনেক অবদান রেখেছেন। তাঁর বন্ধু হিসেবে অনেক মন খারাপ হয়েছে। খুব কিছু তো বলার নেই। শুধু আশা করি জেলে থাকার সময়টা যেন কাটিয়ে উঠতে পারেন এবং বের হলে আগের মতোই নিজের জীবন কাটাতে পারে।’