পাকিস্তান আর ডাকবে না ভেবে ভয় পেয়েছিলেন সরফরাজ

পাকিস্তানের জার্সিতে এ ম্যাচটাই শেষ নয় সরফরাজের।ছবি: রয়টার্স

ইংল্যান্ড সফরটা সরফরাজ আহমেদ শুধু সংবাদ শিরোনাম হয়েই কাটিয়ে দেবেন বলে মনে হয়েছিল। দলে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে দারুণ ভালো করছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে পানি টেনে সাবেক খেলোয়াড়দের রাগান্বিত করে তোলা ছাড়া এ সফরে সরফরাজ আর কিছু করবেন না বলে মনে হয়েছিল!

টেস্টের পর প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে তাই শুধু ড্রেসিংরুমের শোভা বাড়িয়ে গেছেন সরফরাজ। কিন্তু তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন কোচ মিসবাহ-উল-হক। সেদিন মাঠে নামিয়ে দিয়েছিলেন সরফরাজকে। যদিও সে ম্যাচ থেকে ব্যাটিং বা ডিসমিসাল ক্যারিয়ারে কিছু যোগ করতে পারেননি সরফরাজ, তবু পাকিস্তান ক্যারিয়ার প্রায় শেষ ধরে নেওয়া এক খেলোয়াড়ের জন্য এভাবে ফিরে আসাও কম নয়।

কোচ মিসবাহ জানালেন, সেটাও হয়তো হতো না। কারণ, শেষ ম্যাচে নামার কথা শুনে সরফরাজই আপত্তি জানিয়েছিলেন। একজন সাবেক অধিনায়ক হিসেবেও এই সফরে তাঁর জায়গা হয়েছিল করোনাপরবর্তী পরিস্থিতির কারণে। করোনা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে স্কোয়াড বড় করাতেই সুযোগ মিলেছিল তাঁর। আবার দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে পানি বহন করে এমনটাই আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন যে পরের ম্যাচে তাঁকে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবেও রাখেননি মিসবাহ। ফলে সফরের শেষ ম্যাচে এভাবে সুযোগ পেয়েও সেটা গ্রহণ করতে দ্বিধা করছিলেন সরফরাজ।

ইএসপিএন এর সঙ্গে কথোপকথনে মিসবাহ জানিয়েছেন, ‘সে খেলতে আপত্তি জানিয়েছে এমন নয় কিন্তু সফরের শেষ ম্যাচে খেলার ব্যাপারে নিজের সংশয়ের কথা জানিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে চিন্তা হতেই পারে আর এটা স্বাভাবিক। কারণ সে ভেবেছিল তার পারফরম্যান্স খারাপ হলে ভবিষ্যতে ওকে নিয়ে আমাদের চিন্তায় সেটা প্রভাব ফেলবে।’

সরফরাজের দ্বিধা কাটিয়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন অনেকেই। সাবেক অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়েছেন বর্তমান অধিনায়ক বাবর আজম। ব্যাটিং পরামর্শক ইউনিস খান এবং মিসবাহও ভূমিকা রেখেছেন, ‘বাবর, ইউনিস ও আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি এবং এটাও বলেছি সফরে যথেষ্ট ভালো করেছে এবং এ ম্যাচ কোনো চাপ ছাড়াই খেলতে পারবে সে। স্বচ্ছ একটা ধারণা দেওয়া দরকার ছিল এবং ম্যাচের আগে আমরা সেটা তাকে জানাতে পেরেছি।’

রিজওয়ান আমাদের মূল পছন্দ। সে খুব ভালো করছে, আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে। আর সরফরাজ আহমেদ আমাদের দ্বিতীয় পছন্দ।
মিসবাহ-উল-হক, পাকিস্তান কোচ

ম্যাচে একটি রান আউট ছাড়া সরফরাজের আর কোনো ছাপ ছিল না স্কোরবোর্ডে। কিন্তু সরফরাজের এমন প্রত্যাবর্তন পাকিস্তানের জন্য সুসংবাদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ইংল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে সিরিজ ড্র করে সফর শেষ করেছে পাকিস্তান।

মিসবাহ নিশ্চিত করেছেন, এ জয় দিয়েই সরফরাজকে বিদায় দেওয়ার ইচ্ছা নেই পাকিস্তানের। তবে এটাও জানিয়ে দিয়েছেন এখন থেকে ড্রেসিংরুমে সময় কাটানোয় অভ্যস্ত হতে হবে সরফরাজকে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর তিন সংস্করণেই পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন সরফরাজ। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাতেও রিজওয়ানই অগ্রাধিকার পাচ্ছে পাকিস্তানের কাছে, ‘এটা ভুল (বিদায়ী ম্যাচ) ধারণা। আমরা তাকে বলেছি এক ম্যাচের ওপর ভিত্তি করে তার মূল্যায়ন করা হবে না। সফরের পুরো সময় কঠোর পরিশ্রম করেছে , প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করেছে এবং ভালো উইকেটকিপিং করেছে। আমাদের এখন দুজন কিপার আছে। রিজওয়ান আমাদের মূল পছন্দ। সে খুব ভালো করছে, আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে। আর সরফরাজ আহমেদ আমাদের দ্বিতীয় পছন্দ। অতীতে খুব ভালো করেছে সে, ভবিষ্যতেও ভূমিকা রাখতে পারবে।’