রিয়াল থেকে বিদায়বেলায় মার্সেলো কাঁদলেন, কাঁদালেন

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে আজ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মার্সেলোছবি: রয়টার্স

মঞ্চে সব সাজানোই ছিল। চেয়ার ছেড়ে গুটি গুটি পায়ে সেখানে উঠলেন মার্সেলোনা। দিনটি তাঁর জন্য কষ্টের বলেই হয়তো কালো স্যুট পরে এসেছিলেন। মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে একটু দম নেন মার্সেলো। ১৫ বছরের সম্পর্ক সামান্য মুখের কথায় ছিন্ন করা যে অসম্ভব।

মার্সেলোর গলাটা তাই ধরে আসছিল। অগত্যা কেঁদেই ফেলেন। করতালির রব উঠল তাঁর সামনে বসে থাকা চেয়ারের সারি থেকে। ততক্ষণ পর্যন্ত মার্সেলো মুখ ফুটে কিছু না বললেও সংবাদ সম্মেলনের পরিবেশটাই যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিচ্ছিল—রিয়াল মাদ্রিদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন তাদের আরও এক ‘সোনার ছেলে।’

আরও পড়ুন

সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমের শুরুতেই রিয়াল ছেড়েছেন সের্হিও রামোস। ৩৪ বছর বয়সী মার্সেলোকে অধিনায়ক বানানো হলেও বয়সের ভার ও দম ফুরিয়ে আসায় কার্লো আনচেলত্তির একাদশে নিয়মিত সুযোগ পাননি এই ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাক।

লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর মৌসুম শেষে তাঁর চুক্তির মেয়াদও ফুরায়। রিয়ালের পক্ষ থেকেও এ সময় তাঁর চুক্তি নবায়নে কোনো দেনদরবার করা হয়নি। বোঝাই যাচ্ছিল, মৌসুম শেষ মানে রিয়ালেও মার্সেলোর অধ্যায় শেষ হবে। ২০০৭ সালে ফ্লুমিন্সে থেকে রিয়ালে যোগ দেওয়া এই ডিফেন্ডার মাদ্রিদের ক্লাবটির হয়ে সর্বোচ্চ ২৫ শিরোপা জিতেছেন। গত ২৮ মে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালই ছিল রিয়ালের হয়ে তাঁর শেষ ম্যাচ।

মার্সেলো রিয়ালে আরও এক বছরের চুক্তি নবায়ন করতে চেয়েছিলেন। অবসর নিতে চেয়েছিলেন এ ক্লাব থেকেই। কিন্তু ক্লাব চুক্তি নবায়নে আগ্রহ না দেখানোয় সেটি আর হলো না। তবে ইউরোপ এখনই ছাড়ার ইচ্ছা নেই ব্রাজিলের হয়ে ২০১৮ সালে অবসর নেওয়া মার্সেলোর।

আজ রিয়াল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেওয়ার ক্ষণে মার্সেলো বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তবে যে ক্লাবের হয়ে আপনি ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময়ই খেলেছেন, সে ক্লাব ছেড়ে যাওয়া খুব কষ্টের। ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত নই। এই ক্লাবে যা করতে চেয়েছি সেটা পেরেছি। এখন সামনে তাকিয়ে আছি।’

আরও পড়ুন

ব্রাজিলে এখনই না ফিরে ইউরোপে আরও কিছুদিন খেলতে চান মার্সেলো। পরিবার, বন্ধুবর্গ, ক্লাব সতীর্থ এবং কোচ আনচেলত্তি ভ্যালদেবেবাজে আয়োজিত তাঁর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

তাঁদের সামনে কান্নাভেজা কণ্ঠে মার্সেলো বলেছেন, ‘আমি এখান থেকে মাথা উঁচু করেই যাব। পরিবার আমাকে নিয়ে গর্বিত। এটা বিদায় নয়, মনে হচ্ছে না আমি রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যাচ্ছি। নতুন প্রতিভাদের সমন্বয়ে ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিরাপদ, এর মধ্যে আমার ছেলেও আছে। সে (রিয়ালের) একাডেমিতে ভালো করছে। এখানে (রিয়ালে) খুব অল্প বয়সে এসেছিলাম, বড় হয়েই বিদায় নিচ্ছি।’

মার্সেলোর সংবাদ সম্মেলনে কেঁদে ফেলেন রাউল
ছবি: টুইটার

রিয়ালের ‘ঘরের ছেলে’খ্যাত রাউল গঞ্জালেসের সঙ্গে চার মৌসুম খেলেছেন মার্সেলো। স্পেনের সাবেক এই স্ট্রাইকার এখন রিয়ালের ‘বি’ দলের কোচ। সংবাদ সম্মেলনে রিয়ালে নিজের প্রথম অধিনায়ক রাউলকে নিয়েও স্মৃতিচারণা করেন মার্সেলো। তখন রাউলও আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।

তাঁকে নিয়ে মার্সেলো বলেছেন, ‘একটা কথা বলতে চাই যা এর আগে কখনো বলিনি। রাউলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এখানে আসার পর তুমি আমাকে অনেক সাহায্য করেছ, আমার সন্তান এনজোর জন্মের সময় দেওয়া উপহারটি আমি কখনো ভুলব না। সন্তানের জন্য অনেক কিছুই উপহার দিয়েছ। পরামর্শ দিয়েছ। তুমি এবং তোমার পরিবার সব সময়ই আমাদের প্রতি খুব সাহায্যশীল ছিলে। আমি কখনোই এসব ভুলব না, সব সময়ই তোমাকে অনুসরণ করতে চেয়েছি।’ মার্সেলোর এ কথা শুনে চোখ মুছেছেন রাউল।

আরও পড়ুন

রিয়ালের হয়ে পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ছয়বার লা লিগা জিতেছেন মার্সেলো। ৫৪৬ ম্যাচ খেলা এই ডিফেন্ডার ক্লাবটির ইতিহাসে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়।

সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কথার আগে রিয়ালের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ মার্সেলোর প্রতি বলেছেন, ‘প্রিয় মার্সেলো, তুমি রিয়ালের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা লেফটব্যাক। ১৮ বছর বয়সে এখানে তুমি যে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলে তা পূরণ করতে পেরেছ। ভক্তরা তোমাকে সারা জীবন মনে রাখবে।’

রিয়াল সভাপতির সঙ্গে পরিবার নিয়ে ছবিও তোলেন মার্সেলো
ছবি: টুইটার

মাদ্রিদের ক্লাবটি ছাড়ার পর গন্তব্য নিয়ে কিছু পরিষ্কার করেননি মার্সেলো। শুধু জানিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এমন একটি ক্লাবে খেলতে চান, ‘আমি খেলা চালিয়ে যাব। সে সামর্থ্য আছে বলেই মনে করি। ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলার থাকলে সেটা ইনস্টাগ্রামে জানিয়ে দেব। রিয়ালের বিপক্ষে খেলতেও সমস্যা নেই। আমি পেশাদার খেলোয়াড়, রিয়ালই আমাকে এভাবে গড়ে তুলেছে।’

আরও পড়ুন