অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে জানুন, অন্যকে জানান

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ঠিকই অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত অনলাইনে পরীক্ষাও দিয়েছে তারা। ফলে গত দেড় বছরে দেশে ১৮ বছরের নিচে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পড়ালেখায় অভ্যস্ত হলেও নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের পদ্ধতি ভালোভাবে জানে না। শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিতে ‘অনলাইন নিরাপত্তা’র বিষয়ে ভালো ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি খুব যে কঠিন, তা কিন্তু নয়, গল্পের ছলেই শিশুদের অনলাইনে নিরাপদ থাকার কৌশল শেখানো যায়।

সাইবার অপরাধীদের থেকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য ও ডিভাইস রক্ষা করে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারের কৌশলই মূলত অনলাইন নিরাপত্তা। বড়দের তুলনায় কম সচেতন হওয়ায় শিশুদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই জরুরি। কারণ, শিশুরা যত বেশি সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করবে, তত বেশি অনলাইনে নিরাপত্তাঝুঁকির আশঙ্কা তৈরি হয়। সঠিক কৌশলের অভাবে অনেক শিশুই অনলাইনে থাকা বিশাল তথ্যভান্ডার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বেছে নিতে পারে না। সতর্ক না থাকায় কেউ আবার সাইবার বুলিং বা অনলাইনে অপ্রীতিকর ছবি ও মন্তব্যের শিকার হয়। যৌন হয়রানি বা হুমকি পাওয়ার অভিজ্ঞতাও হয় অনেকের, যা শিশুদের মনে ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে মেয়েশিশু ও কিশোরীরা।

এ জন্য অনলাইন ঝুঁকির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি প্রতিরোধের প্রশিক্ষণ দিতে হবে শিশুদের। শেখাতে হবে অতিরঞ্জিত ও ভুয়া খবর শনাক্ত করার কৌশল। পাশাপাশি অনলাইনে অনুপযোগী কনটেন্ট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বেছে নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিশুর মা–বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাঁরা খুব কাছ থেকে নিয়মিত শিশুর অনলাইন কার্যক্রমের তথ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। আর তাই ই–মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্যজনকে না দেওয়া, ভুয়া অ্যাপ ডাউনলোড না করার পাশাপাশি অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে অনলাইনে তথ্য বিনিময়ে শিশুদের সতর্ক করতে হবে। প্রয়োজনে মুঠোফোন বা কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নির্দিষ্ট করার পাশাপাশি ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ ফিচারের মাধ্যমে অনুপযোগী ওয়েবসাইট ব্লক করা উচিত। গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জানাতে নিজেদের শিশু অনলাইন সুরক্ষা প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করছে গ্রামীণফোন।

খেলার ছলে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দিতে ডিজিওয়ার্ল্ড (http://gpsocial.co/digiworld) নামের বাংলা প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে গ্রামীণফোন, টেলিনর গ্রুপ ও ইউনিসেফ। প্ল্যাটফর্মটিতে থাকা গেম খেলার মাধ্যমে সহজেই অনলাইনে নিরাপদে থাকার বিভিন্ন তথ্য ও কৌশল জানা যায়। ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি গেমটি সফলভাবে শেষ করলে অংশগ্রহণকারীদের অনলাইন নিরাপত্তা সনদ দেওয়া হয়। শুধু তা–ই নয়, প্ল্যাটফর্মের লাইব্রেরি অপশনে ক্লিক করে ইন্টারনেট-বিষয়ক বিভিন্ন প্রযুক্তি ও সেবার বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। ফলে অনলাইনে নিরাপদ থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জানার মাধ্যমে শিশুদের পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করার সুযোগ মিলে থাকে।