ওডেস্ক এখন আপওয়ার্ক

ওডেস্কের নাম পরিবর্তন করে আপওয়ার্ক রেখেছে ওডেস্ক-ইল্যান্স কর্তৃপক্ষ।
ওডেস্কের নাম পরিবর্তন করে আপওয়ার্ক রেখেছে ওডেস্ক-ইল্যান্স কর্তৃপক্ষ।

ফ্রিল্যান্সার বা অনলাইন পেশাজীবীদের অনলাইন কাজের বাজার ‘ওডেস্ক’ বলে আর কিছু থাকছে না। ওডেস্ক-ইল্যান্স বদলে হয়ে গেল আপওয়ার্ক। ব্যবহারকারীরা এখন ওডেস্কের পরিবর্তে আপওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারছেন। 
আপওয়ার্ক (https://www.upwork.com) নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে ইল্যান্স-ওডেস্ক এবং এটি ফ্রিল্যান্স পেশাজীবীদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। পুরোনো ওডেস্কের তুলনায় আপওয়ার্কে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। 
অবশ্য ওডেস্ককে ঢেলে সাজিয়ে নতুন নাম দিয়ে চালু করলেও ইল্যান্স প্ল্যাটফর্মটি চালুই থাকছে। 
বিশ্বের বৃহত্তম ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসটিকে ৫ মে নতুন নাম দিয়ে কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা আসে ইল্যান্স-ওডেস্কের কাছ থেকে। এর উদ্যোক্তারা বলছেন, সফটওয়্যার সেবার মতো পেশাজীবীরা এখন অনলাইনে তাঁদের মেধা খাটিয়ে কাজ করছেন। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই যে কেউ অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কাজের বাজারে যুক্ত হচ্ছে। এই বাজারে কাজের মাধ্যমকে একটি নতুন রূপ দিয়ে, কাজের ধরন এবং যোগাযোগের মাধ্যমকে আরও উন্নত করে এগিয়ে নিতে আপওয়ার্ক যাত্রা শুরু করেছে। 
আপওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেফান কারসিয়েল জানিয়েছেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং জগতে নতুন একটি অধ্যায় সূচনা করতে যাচ্ছে আপওয়ার্ক। এখন মেধাবী ও দক্ষ পেশাজীবীদের বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে সহজেই নিয়োগ দিতে পারবে প্রতিষ্ঠানগুলো। বিভিন্ন দেশের ফ্রিল্যান্সাররা ইতিমধ্যেই ইল্যান্স-ওডেস্ক থেকে বছরে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি উপার্জন করছে। আপওয়ার্কের মাধ্যমে আগামী ছয় বছরের মধ্যেই এই আয় ১০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। ওডেস্ক নাম বাদ দিয়ে আপওয়ার্ক তৈরির উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্ট এবং মেধাবী পেশাজীবীদের মাঝে আগের চেয়ে আরও অনেক দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি করা। এর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে একজন মেধাবী পেশাজীবীকে বেছে নিতে পারবে। 

স্টেফান কারসিয়েল আরও জানিয়েছেন, বিশ্বের বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হলেও আমাদের উন্নতি করার আরও অনেক জায়গা বাকি আছে। সেগুলো নিয়ে কাজ করার সময় এখনই। বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টরা ইতিমধ্যেই ইল্যান্স-ওডেস্ক ব্যবহার করে বছরে প্রায় ৩০ লাখের বেশি কাজ পোস্ট করছে এবং কর্মী নিয়োগের জন্য মার্কেটপ্লেসে সার্চ অপশনটি ১০ কোটি বারেরও বেশি করছে।
স্টেফান জানান, ‘আমরা নতুন অধ্যায় সূচনা করলাম। এখন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নতুন কাজের সুযোগ বাড়বে। আপওয়ার্কের মাধ্যমে নতুন উদ্ভাবন ও নতুনত্ব এনে অনলাইনে কাজের বাজারকে আরও প্রসারিত করতে কাজ চালিয়ে যাব।
আপওয়ার্কের ফিচার
আপওয়ার্কের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেইডেন ব্রাউন জানিয়েছেন, নতুন এই প্ল্যাটফর্মটিতে কর্মী নিয়োগ পদ্ধতিটিকে সহজ করা হচ্ছে। কারণ, কর্মী নিয়োগ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কর্মী বাছাই করতে গিয়ে তাঁদের সময় নষ্ট হয়। পরীক্ষিত এবং দক্ষ কর্মী সহজেই খুঁজে নেওয়ার পাশাপাশি নিয়োগের পরবর্তী সময়ে আরও সহজে একত্রে কাজ করার সুযোগ তৈরিতে আপওয়ার্ক কাজ করবে। দ্রুত যোগাযোগ সুবিধা ও আপওয়ার্কের নতুন রিয়াল-টাইম কমিউনিকেশন ফিচারের মাধ্যমে সেই কাজটি কয়েক মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হবে। এ জন্য আপওয়ার্ক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন পিএইচডি গবেষক দ্বারা তৈরি নতুন কিছু ম্যাচিং এলগরিদম ব্যবহার করবে, ফ্রিল্যান্সাররা নতুন কাজ নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে কিনা সেটার অবস্থান দেখাবে এবং আপওয়ার্কের নতুন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাইটের অনেক কাজ খুব সহজেই করে নেয়ার সুযোগ তৈরি করবে। এ ছাড়াও সরাসরি গ্রুপভিত্তিক যোগাযোগ ছাড়াও আপওয়ার্কে আরেকটি নতুন টুল নিয়ে আসা হচ্ছে মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই একজন আরেকজনের সঙ্গে সরাসরি রিয়াল-টাইম যোগাযোগ করতে পারবে।
আপওয়ার্ক ব্যবহারকারী না হলেও যোগাযোগের জন্য বিশেষ ‘চ্যাট টুলটি’ সবার জন্যই উন্মুক্ত করবে আপওয়ার্ক।
এ বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশে এসেছে ৫৪ কোটি টাকা
আপওয়ার্কের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর মামুন খান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ওডেস্ক ব্যবহারকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তাঁদের প্রোফাইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপওয়ার্কে চলে যাবে। তবে প্রোফাইল প্রদর্শন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
সাইদুর মামুন খান আরও জানান, বর্তমানে উপার্জনের দিক থেকে আপওয়ার্কে ১৮০ টিরও বেশি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে আপওয়ার্কের ৫ লাখের বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে। শুরু থকে নিয়ে এই পর্যন্ত আপওয়ার্কে (পূর্বের ইল্যান্স-ওডেস্কে) বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের সম্মিলিত উপার্জন হয়েছে প্রায় ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি)। শুধু এই বছরের প্রথম প্রান্তিক বা প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা আপওয়ার্কে কাজ করে দেশে নিয়ে এসেছেন প্রায় ৭.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫৪ কোটি টাকার কাছাকাছি।