নকল হইতে সাবধান!

নকল ওষুধ নিয়ে দুশ্চিন্তার দিন বুঝি ফুরাল। ধরুন, আপনি রয়েছেন জামালপুর জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম ডিগ্রিরচরে। জরুরি প্রয়োজনে ওষুধ কিনতে গিয়ে পড়েছেন দ্বিধায়, ওষুধটি নকল নয় তো? তখনই হাতে থাকা স্মার্টফোনটি দিয়ে স্ক্যান করলেন ওষুধের বাক্সের গায়ে লাগানো কিউআর কোডটি অথবা কোড নম্বরটি খুদেবার্তা আকারে পাঠালেন নির্দিষ্ট নম্বরে। সঙ্গে সঙ্গে আপনি পেয়ে গেলেন সেই ওষুধের উৎপাদন ও মেয়াদসহ যাবতীয় তথ্য।

ওষুধের নকল রোধে ঠিক এমনই পরিকল্পনা উপস্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্টআপ ওপেনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মেক্সিকো, নরওয়ে, ফিলিপাইন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০০ দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনল বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থীর দল প্যানাসিয়া (www.panacealive.com)। প্যানাসিয়া দলের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএর সৌভিক আসওয়াদ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এআইইউবি) সিদ্দিক আবু বক্কর ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) সৌমিক আসওয়াদ।

স্টার্টআপ ওপেন প্রতিযোগিতাটি গ্লোবাল এন্টারপ্রিনিউরশিপ উইকের একটি অংশ। এ প্রতিযোগিতার লক্ষ্য, সারা বিশ্বের উদ্ভাবনী চিন্তাশীল তরুণদের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা। বছরব্যাপী স্টার্টআপ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর চলা গ্লোবাল এন্টারপ্রিনিউরশিপ উইকে।

বাংলাদেশের দল রানারআপ হিসেবে পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে তিন মাস থাকার সুযোগ। এ ছাড়া দলটির জন্য থাকছে মেনটরশিপ এক্সপেরিয়েন্স প্রাইজ। দলের সদস্য সৌমিক আসওয়াদ বলেন, ‘আমরা রানারআপ হিসেবে পাচ্ছি যুক্তরাষ্ট্রের সেনসাস সিটির স্টার্টআপ ভিলেজে তিন মাস থাকার সুযোগ। এই তিন মাস আমরা সে দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আমাদের প্রকল্প নিয়ে কথা বলব।’

যখন কথা হচ্ছিল পুরস্কারের বিষয়ে, এ সময় নিজেদের প্রকল্পের কারিগরি দিক নিয়ে বলেন সিদ্দিক আবু বক্কর, ‘যখন ওষুধ উৎপাদন করা হবে, তখনই ওষুধের বাক্সের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হবে বিশেষ কিউআর কোডটি, যে কোডটি ধারণ করবে ওই ওষুধের বিস্তারিত তথ্য। একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেসের মাধ্যমে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করব।’

ওষুধ কোম্পানিগুলো কেন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন সৌভিক আসওয়াদ, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পণ্যের মান সম্পর্কে ভোক্তাদের নিশ্চয়তা দিতে এমন প্রযুক্তির শরণাপন্ন হতে পারে, যা তাদের ব্র্যান্ডিং অংশ।

ইতিমধ্যে দেশের কয়েকটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্যানাসিয়া প্রকল্প নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। আর এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ওষুধ কোম্পানি বা জনসাধারণই উপকৃত হবে না, সহায়তা করা যাবে প্রশাসনকেও। বিষয়টি খুলে বলেন সৌভিক, ‘কেউ আমাদের কাছে তথ্য জানতে চাইলে সেটা আমাদের সার্ভারে জমা থাকবে। সেসব তথ্য থেকে আমরা বলতে পারব, কোন অঞ্চলে নকল ওষুধ বেশি ব্যবহূত হচ্ছে। এতে প্রশাসন শক্ত ব্যবস্থা নিতে পারবে।’

প্যানাসিয়া দলের সদস্যরা এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ এই তিন তরুণ পাড়ি জমাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেই লক্ষ্যেই প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে প্রকল্পের বিষয়গুলো সহজ করে উপস্থাপন ও তথ্য যোগ করার কাজ। স্টার্টআপ ওপেন সম্পর্কে সংস্থাটির অফিশিয়াল ওয়েসসাইটে (startupopen.com) বিস্তারিত জানা যাবে।