
পদ্মা সেতু—
ফিলিং কলঙ্কমুক্ত
উইথ এসএনসি-লাভালিন অ্যান্ড থ্রি আদারস

২০১১ থেকে ২০১৭—প্রায় ৬ বছর ধরে আমার স্টিল কংক্রিটের কাঠামো থেকে গোপনে কত কত দীর্ঘশ্বাস পদ্মার পানিতে বিলীন হয়েছে তার খোঁজ কেউ রাখেনি। কলঙ্কের সিমেন্ট গায়ে মেখে কত বিনিদ্র রজনী কেটেছে, সে কথা কেউ কোনো দিনও জানবে না।
নিজের পিলারের ওপর দাঁড়ানো দূরে থাক, তখনো পর্যন্ত ভালোভাবে আমার কাঠামোরই ঠিকঠিকানা ছিল না। কিন্তু এরই মধ্যে গায়ে লেগে গেল কলঙ্কের দাগ। কী এক দুঃসহ সময় ছিল সেটা! আমার ভবিষ্যৎ নিয়েই তখন ঘোরতর সংশয়! ভবিষ্যতে জনগণের সামনে কীভাবে মুখ দেখাব, এই লজ্জা আর হতাশায় ভয়ানক কাতর ছিলাম আমি।
এর মধ্যে জল্পনা আর গুজবে কান দিয়ে কলঙ্কিত ধুয়ো তুলে বিশ্বব্যাংকও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। আহা কী কষ্ট! কী কষ্ট! কেবল বোবা বলেই, সামান্য রড-সিমেন্টের তৈরি জড় পদার্থ বলেই কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি। নীরবে-নিভৃতে অবকাঠামোর ভেতরে কেবল অশ্রু বিসর্জন করে গেছি। কলঙ্কের জ্বালায় সীতার মতো জ্বলেপুড়ে দুমড়েমুচড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছি শুধুই। দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ছিল, কারও তোয়াক্কা না করে যেভাবে হোক নিজে নিজের পিলারের ওপর দাঁড়াবই দাঁড়াব। আর অপেক্ষা করেছি কবে আসবে সেই কলঙ্ক মোচনের দিন।
অবশেষে সত্যের জয় হলো। দীর্ঘ ৬ বছরের যন্ত্রণাদায়ক প্রতীক্ষার অবসান হলো আজ। আমি এখন সগৌরবে নিজের পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে বলতে পারব, এই আমি পদ্মা সেতু ১০০ ভাগ দুর্নীতিমুক্ত, নিষ্কলুষ! যারা আমার বিরুদ্ধে এত রটনা রটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আজ আমার কোনো খেদ নেই, নেই কোনো অভিযোগ। তবু অভিমানী মনের অভিমানী জিজ্ঞাসা, কে মুছে দেবে আমার কলঙ্কময় দীর্ঘ ৬ বছর? কে ফিরিয়ে দেবে আজ থেকে ৬ বছর আগের সেই নিষ্কলুষ জীবন?
লেখা: শরীফ মজুমদার