বা ং লা ২ য় প ত্র

প্রশ্নোত্তর  বাক্য ও শব্দগঠন
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা ২য় পত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

প্রশ্ন: অর্থ অনুসারে বাক্য কয় প্রকার ও কী কী? আলোচনা করো।
অথবা, অর্থানুসারে বাক্যের প্রকারভেদ উদাহরণসহ আলোচনা করো।
অথবা, অর্থের দিকে দিয়ে বাক্যকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? প্রত্যেকটির সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।
অথবা, বাক্যের অতর্গত শ্রেণিবিভাগ দেখাও। প্রত্যেক শ্রেণীর সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।
উত্তর: অর্থ অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ: অর্থ অনুসারে বাক্যকে আট ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন:
নির্দেশবাচক বাক্য: কোনো ঘটনা ভাব বা বক্তব্যের তথ্য যে বাক্য প্রকাশ করে তাকে বলা হয় নির্দেশবাচক বাক্য। এই নির্দেশবাচক, নির্দেশমূলক বাক্য, নির্দেশসূচক বাক্য, নির্দেশাত্মক বাক্য, শুদ্ধ বর্ণনাত্মক বাক্য, বিবৃতিমূলক বাক্য প্রভৃতিও বলা হয়। যেমন: সে একটি গল্পের বই পড়ছে।
প্রশ্নবোধক বাক্য: কোনো ঘটনা, ভাব বা বক্তব্য সম্পর্কে যে বাক্যে কোনো প্রশ্ন থাকে তাকে বলা হয় প্রশ্নবোধক বাক্য। এর অন্য নাম প্রশ্নমূলক বাক্য। প্রশ্নাত্মক বাক্য, জিজ্ঞাসাত্মক বাক্য প্রখৃতি। যেমন: তুই দাঁড় টানতে পারিস?
অনুজ্ঞাসূচক বাক্য: আজ্ঞা, আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, আমন্ত্রণ, নিষেধ ইত্যাদি যে বাক্যে প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় অনুজ্ঞাসূচক বাক্য। এর অন্য নাম আজ্ঞাসূচক বাক্য, আজ্ঞা বাচক বাক্য, অনুজ্ঞাসূচক বাক্য, অনুজ্ঞাবোধক বাক্য, আদেশসূচক বাক্য প্রভৃতি। যেমন: তোমার ঘোমটা খুলে দাও। তোমার নয়ন তুলে চাও।
প্রার্থনাসূচক বাক্য: যে বাক্যের মাধ্যমে কোনো প্রার্থনা প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় প্রার্থনাসূচক বাক্য। এর অন্য নাম প্রার্থনামূলক বাক্য। যেমন: অন্ধজনে দেহ আলো।
কার্যকারণাত্মক বাক্য: কারণ, নিয়ম, শর্ত স্বীকৃতি সংকেত প্রভৃতি যে বাক্যে দ্যোতিত হয় তাকে বলা হয় কার্যকারণাত্মক বাক্য। এ ধরনের বাক্যের অন্য নাম শর্তসূচক বাক্য, শর্তসাপেক্ষ বাক্য প্রভৃতি। যেমন: মন দিয়ে না পড়লে পাস করা যায় না।
সন্দেহবোধক বাক্য: নির্দেশবাচক বাক্যে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে সন্দেহ, সংশয়, সম্ভাবনা, অনুমান, অনিশ্চয়তা ইত্যাদির ভাব থাকলে তাকে বলা হয় সন্দেহবোধক বাক্য। এর অন্য নাম সন্দেহাত্মক বাক্য, সন্দেহ প্রকাশক বাক্য, সন্দেহদ্যোতক বাক্য, সংশয়সূচক বাক্য প্রভৃতি। যেমন: হয়তো সে চাকরিটি পাবে।
বিস্ময়সূচক বাক্য: হর্ষ, বিস্ময়, দুঃখ, শোক, কাতরতা, করুণা, প্রশংসা ইত্যাদির মনোভাব আবেগ বা উচ্ছ্বাসের আকস্মিকতা নিয়ে যে বাক্যে প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় বিস্ময়সূচক বাক্যে। এর অন্য নাম বিস্ময়বোধক বাক্য, বিস্ময়াদিবোধক বাক্য, আবেগবোধক বাক্য, আবেগসূচক বাক্য, উচ্ছ্বাসাত্মক বাক্য প্রভৃতি। যেমন: কুয়াকাটার সমুদ্র দৃশ্য কী আশ্চর্য সুন্দর!
ইচ্ছাবোধক বাক্য: যে বাক্যে মনের কোনো ইচ্ছা প্রকাশিত হয় তাকে ইচ্ছাবোধক বাক্য বলে। এর অন্য নাম ইচ্ছাসূচক বাক্য। ইচ্ছামূলক বাক্য, বাসনা-কামসূচক বাক্য প্রভৃতি। যেমন: সে যেন আসে।

শব্দ গঠন
প্রশ্ন: শব্দ কাকে বলে? উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসম্ভারকে কয় ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ প্রতিটি আলোচনা করো।
অথবা, উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর: শব্দ: অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির নাম শব্দ। মনে রাখতে হবে ধ্বনির সমষ্টি হলেই তা শব্দ হবে না, তাকে একটি অর্থ প্রকাশ করতে হবে। যেমন: কলম, টেবিল, হাত।
উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ: উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসম্ভারকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১। তৎসম শব্দ, ২। অর্ধতৎসম শব্দ, ৩। তদ্ভব শব্দ, ৪। দেশি শব্দ ও ৫। বিদেশি শব্দ।
তৎসম শব্দ: তৎসম অর্থ হচ্ছে ‘তার সমান’ অর্থাৎ সংস্কৃতের মতো। সুতরাং যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে অবিকৃতভাবে হুবহু বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, তাদের তৎসম শব্দ বলে। যেমন: চন্দ্র, সূর্য, জল, পৃথিবী, নিমন্ত্রণ ইত্যাদি।
অর্ধতৎসম শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, তাদের অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমন: নিমন্ত্রণ> নেমন্তন্ন, গাত্র>গতর, জ্যোৎস্না>জোছনা ইত্যাদি।
তদ্ভব শব্দ: তদ্ভব অর্থ তা (সংস্কৃত) থেকে উৎপন্ন, সুতরাং যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে, তাদের তদ্ভব শব্দ বলে। যেমন: হস্ত>হত্থ>হাত, চন্দ্র>চন্দ>চাঁদ, সর্প>সম্প>সাপ ইত্যাদি।
দেশি শব্দ: যেসব শব্দ আর্য ও অনার্য জাতির ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে, তাদের দেশি শব্দ বলে। যেমন: ঢেঁকি, কুলা, টোপর, চোঙা ইত্যাদি।
বিদেশি শব্দ: রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি বাংলাদেশে এসে বসবাস করার ফলে বহু বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান পেয়েছে। এসব শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে। যেমন: আল্লাহ, চেয়ার, কাগজ, দারোগা ইত্যাদি।

পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল